শারদীয় ভোজনের সাত-সতেরো
দুর্গা পূজা শুধুই পূজা নয় এটি হলো উৎসব। উৎসব মানেই নানান খাবার দাবার এর ধুম পড়ে। শুরু হয় খাবার নিয়ে নানান আয়োজন। সাত সতেরো খাবারের আয়োজনে মেতে উঠে বাড়ি থেকে শুরু করে পূজা মণ্ডপ পর্যন্ত।
সাধারণ খাবার দাবারের থেকে দুর্গাপূজার খাবার দাবারে থাকে বেশ কিছু ভিন্নতা। বেশ অন্য ধরনের খাবার তৈরি করা হয় দুর্গাপূজার সময়। বেশিরভাগ সময় নিরামিষ খাবারকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে এর মানে এই না যে কেউ আমিষ খেতে পারবে না। তবে বিশেষ করে ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত নিরামিষ খাওয়ায় নিয়ম রয়েছে।
এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়িতে কিংবা পূজা মন্ডপে একটা লিস্ট করা হয় কোন দিন কোন সময় কি কি খাবার দাবার দেওয়া হবে। বাকি কি কি খাবার দাবারের আয়োজন করা হবে। তবে পুজোর সবচেয়ে কমন খাবার হচ্ছে মিষ্টি জাতীয় খাবার।
কেমন হবে পুজোর দিনের খাবার গুলো বলুন তো? আগে থেকে কি কোন পূর্ব পরিকল্পনা আছে তবে না থাকলে তা করে ফেলাই ভালো-
*সকালের দিকে দই, চিড়া, মুড়ি,মিষ্টি, খই, নারিকেল এইসব দিয়ে একত্রে একটি খাবার তৈরি করে পরিবেশন করা যেতে পারে। এছাড়াও লুচি, বুটের ডাল সাথে পাঁচ তরকারি সাথে নানা রকমের হালুয়া এ ধরনের খাবার গুলো হালকার মধ্যে সকালের জন্য বেশ ভালো একটা নাস্তা হতে পারে। তবে অনেকে পূজার সময় মন্ডপে সকালের প্রসাদ গ্রহণ করে থাকে সেই ক্ষেত্রে তাদের নাস্তার পরিকল্পনাটা ভিন্ন থাকে। এছাড়াও পূজাকে কেন্দ্র করে নানা রকম ফল, পাঁচ মিষ্টি ও হরেক রকম সন্দেশ খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
* দুপুরের ভোজে নানা ধরনের আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে সবজি পোলাও ও লাভরা খিচুড়ি সবচেয়ে জনপ্রিয় দুর্গাপূজা মধ্যাহ্ন ভোজ হিসাবে। বাসন্তি পোলাও সাথে সয়াবিনের তরকারি খুব জনপ্রিয় দুর্গাপূজার মধ্যাহ্ন ভোজের সময়। এছাড়াও খিরসা, পায়েশ এই ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। দুর্গাপূজার সময় মূলত মধ্যাহ্ন ভোজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই সময় চেষ্টা করা হয় একটু ভিন্ন ধরনের সুস্বাদু কোন খাবার তৈরি করার।
* রাতের দিকে একটু হালকা খাবারের আয়োজন করাই ভালো। তবে পূজার সময় রাতে যেহেতু বাইরে বেশ অনেকটা সময় ঘোরাঘুরি করা হয় অনেকেরই পরিকল্পনা থাকে রাতের খাবারটা বাইরে খাওয়ার বিশেষ করে নবমীর রাত থেকে জম্পেশ বিরিয়ানি খাওয়ার হয়ে থাকে বাঙালি। তবে বিভিন্ন মন্ডপের আশেপাশের দেখা যায় নানা ধরনের পুরি,সিঙ্গারা, ফুচকা, আইসক্রিম এই ধরনের নানা রকম স্টল নিয়ে বসার জন্য। তাই রাতে ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে মানুষের এই ধরনের খাবার গুলোই বেশি খাওয়া হয়ে থাকে।
* দশমীর খাবারের ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা আসে। বেশিরভাগ হিন্দুদেরই দশমীর দিন ইলিশ মাছ খাওয়ার একটি নিয়ম রয়েছে। তাই সেই প্রথাকে কেন্দ্র করে দশমীর দিন বেশিরভাগ বাসায় ইলিশ মাছ রান্না করা হয়ে থাকে। এছাড়াও সবারই সাথে মিষ্টি মুখের মাধ্যমে বিজয় দশমী উদযাপন করা হয়ে থাকে। অনেকের কাছে বিজয়া দশমী মানেই লাড্ডু খাওয়া। মতিচুর লাড্ডু, ঘি এর লাড্ডু,তেলের লাড্ডু, বাদামের লাড্ডু,তিলের লাড্ডু নানা ধরনের লাড্ডুর সমাহার দেখা যায়।
এই যে খাবারের এত সুন্দর, সুস্বাদু ও সুগন্ধময় আয়োজন শুধু করলেই হবে সেগুলোকে ঠিকমতো সাজাতে হবে না! তাই সাজানোর জন্য অবশ্যই ডাইনিং টাকে খুব সুন্দর পরিচ্ছন্ন এবং রঙিন করে তুলতে হবে। কারণ পূজার সময় ঘরে যদি রঙিন আমেজ না থাকে ঠিক পূজা পূজা মনে হয় না। এছাড়াও চেষ্টা করতে হবে ঘরে যাতে এই সময় কাঁচা ফুল থাকে কিংবা খাবার পরিবেশনার সময় আশেপাশে যাতে কাঁচা ফুল দিয়ে টেবিলটির সাজানো যায়। সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এবং এই সময় স্টিল, তামা, কাশার বাসন কুশন ব্যবহার করলেই পূজার সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ হারে