চন্দ্রাবতীর কথা; কবি চন্দ্রাবতীর নাটকীয় জীবনের চিত্রায়ন
নারীদের অবস্থান সমাজে চিরকালই বেশ অবহেলিত ছিলো। তবুও নারীদের প্রতিভা, গুণের পরিচয় সমাজ সে কোন যুগ থেকেই পেয়ে এসেছে। নারী শিক্ষা থেকে শুরু করে নারীর কর্মসংস্থান কিংবা সৃজনশীল প্রতিভার প্রকাশ দেড়শো বছর আগে রোকেয়ার সময়েও এই দেশের মানুষ কল্পনা করতে পারতো না। অথচ তারও কয়েকশো বছর আগেই এই বাংলায় লেখিকা হিসেবে এক নারীর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিলো। যাঁর নাম ছিলো চন্দ্রাবতী। আর এই নারীর জীবন নিয়েই এবার নির্মিত হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র 'চন্দ্রাবতী কথা' ।
প্রায় চারশো বছর আগে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ এলাকায় চন্দ্রাবতী পালা রচনা করেছিলেন। লেখক-সত্তার ধারা পেয়েছিলেন বলা যায় পরিবার থেকেই। তিনি ছিলেন মনসামঙ্গল কাব্যধারার অন্যতম কবি দ্বিজ বংশীদাসের কন্যা। মলুয়া, দস্যু কেনারামের পালা, রামায়ণের মত গীতিকা গুলো তারই রচিত।
পালা গানের মতই এই লেখিকার জীবনও ছিলো নানা নাটকীয়তায় পূর্ণ। তাঁর জীবনে নাটকীয় ঘটনা নিয়েই এন রাশেদ চৌধুরীর নির্মিত এই সিনেমা গতকাল ১৫ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটির নির্মাণ কাজ শুরু ২০১৫ সালে। সরকারি অনুদানে নির্মিত এই সিনেমা নির্মাণের সময় থেকে প্রায় পাঁচ বছর সময় লেগেছে মুক্তি পেতে। সিনেমার কাজ ২০১৯ সালে শেষ হলেও প্রায় দেড় বছর সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে আটকে ছিলো। নির্মাতা রাশেদ চৌধুরী সিনেমাটি নির্মাণে হাজার বছরের বাংলা নাট্যরীতি অনুসরণ করেছেন। এবং পালাগানের কাঠামো, গল্পকথনরীতিও অনুসরণ করেছেন তিনি।
দেশে মুক্তির আগেই ২০১৯ সালে সিনেমাটি ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিদেশ প্রিমিয়ার হয়। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিলরুবা দোয়েল। এছাড়াও অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, গাজী রাকায়েত, আরমান পারভেজ মুরাদ, এহসানুর বর্ষণ, তনয় বিশ্বাস, শশাংক সাহা, মিতা রহমান, জয়িতা মহলানবিশ প্রমুখ।
এই সিনেমাটি দর্শকদের সামনে তুলে ধরবে চারশো বছর আগের এক বাঙালী নারী জীবন। যিনি কিশোরগঞ্জের পাতুয়ারীতে বাস করতেন। যাঁর নাটকীয় জীবনের জন্য তাঁকে নিয়ে জয়-চন্দ্রাবতী নামে একটি গীতিকা রচিত হয়। কবি জয়ানন্দের কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে আজীবন অবিবাহিত থাকার ব্রত গ্রহণ করেছিলেন এই নারী। পিতার উৎসাহে নিজ ভাষায় রামায়ণ লেখেন। সেই মধ্যযুগ থেকে বহু পালা'র কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়েছেন তিনি। আর এবার পূর্ণাঙ্গ সিনেমায় উঠে এসেছে তাঁর জীবনী। যা বাংলা চলচ্চিত্রে এক অন্যমাত্রা যোগ করে দেবে। তাই দেরি না করে এই বাংলার একজন নারী কবির জীবনী নিয়ে এই বাংলারই সিনেমা 'চন্দ্রাবতীর কথা' হলে গিয়েই দেখে ফেলা দর্শকের উত্তম সিদ্ধান্ত হবে।