নির্যাতনের শেষ কোথায়?
নারী নির্যাতন একটি সামাজিক ব্যাধি। নির্যাতন সহ্যকারীই কেবলে এর ভুক্তভোগী নয়, ঐ নারীর পরিবার, সন্তান সবাই পরোক্ষভাবে এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। কিন্তু এখানে ঐ নারীর দোষটা কোথায়? এক নির্যাতনকারীর জন্য তার ফলাফল ভোগ করতে হয় অনেককে।
আর এই নির্যাতনের হার দিন দিন যেন বাড়ছেই। যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, হত্যা, যৌতুকের কারণে নির্যাতন, শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন, প্ররোচনামূলক আত্মহত্যা যেন দেশের নিয়মিত খবর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যাই হোক না কেন সমাজের বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি তো আছেই! করোনার মধ্যেও থেমে নেই নারী নির্যাতন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে নারীর ওপর এই সহিংসতা যেন আরো বেড়েছে। এই করোনায় যে শুধু স্বামীর হাতে স্ত্রী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তা নয়, শাশুড়ি বা পরিবারের অন্য পুরষ সদস্যদের হাতেও তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷ এমনকি শ্বশুর বাড়িতে নারী সদস্যদের হাতেও তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷ সারা বিশ্বে এই করোনায় নারীর প্রতি সহিংসতা শতকরা ২০ ভাগ বেড়ে গেছে।
২০২০ এর মে মাসে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে৷ তারা জানায় দেশের ২৭টি জেলায় এপ্রিল মাসে চার হাজার ২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬ টি শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে৷ শিশুদের মধ্যে শতকরা ৯২ ভাগ তাদের বাবা-মা ও আত্মীয়দের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে৷ আর নারীরা বেশির ভাগই স্বামীর হাতে৷
২০২১ সালে করা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু মার্চ মাসেই ৩৫২ জন নারী ও মেয়ে শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ১৫৩টি মেয়ে শিশু ও ১৯৯ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৬২ মেয়ে শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৫ জন, ধর্ষণের পর এক শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও ১০ শিশুসহ ১৭ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ৭ শিশুসহ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১০ জন। এসিডদগ্ধের শিকার হয়েছে ২ জন। উত্ত্যক্ত করণের শিকার ৩ জন। ১০ শিশুসহ অপহরণ করা হয়েছে ১৬ জনকে।
অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) এর প্রতিবেদন মতে, এপ্রিল মাসে দেশে ৩৭১ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ১৩৭টি। এরমধ্যে ৭৬ জন শিশু ও কিশোরী। এ ছাড়া ৩২ জন কিশোরীসহ মোট ৬৯ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। এই সহিংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি প্রতিবন্ধীরাও। ৯ জন প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীতে এ ধরনের সহিংসতার শিকার হতে হচ্ছে এ দেশের নারীদের। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এছাড়াও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন, কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটেই চলেছে। এই নির্যাতন রোধে আইনি তৎপরতার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও প্রয়োজন। মানুষ যদি সচেতন না হয়, কেবল আইন কিছুই করতে পারবেনা। নারীর ওপর এই সহিংসতা রোধে সচেতন হতে হবে সবাইকে। পরিবার থেকেই এই শিক্ষার শুরু করতে হবে। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নারী নির্যাতন রোধে সবাইকে একতালে কাজ করতে হবে। তবেই নারীর প্রতি এই সহিংসতা কমানো সম্ভব হবে।