আইএসএসের বেহাল অবস্থা!
মহাকাশে বসে গবেষণা করার একটি মাত্র উপায় হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএস। স্টেশনটিকে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন খবর শুনে আসছি। তবে মূলত স্টেশনটির কি অবস্থা তা নিয়ে তেমন কোন কিছুই জানতে পারি নি।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তৈরি করা হয় ১৯৯৮ সালে। এটি ছিল রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান এবং কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের একটি যৌথ প্রকল্প। শুরুতে ১৫ বছর মেয়াদের জন্য এটি ডিজাইন করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের রুশ নির্মিত যেভেদযা অংশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মহাকাশ কেন্দ্রের ক্রুরা এই অংশে বসবাস করেন। রুশ সংবাদমাধ্যম ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রটি পুরনো হয়ে পড়ায় গত কয়েক বছরে সেখানে এমন বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। একজন রুশ কর্মকর্তা সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, এটির যন্ত্রপাতি এখন সেকেলে হয়ে পড়েছে এবং ঠিকমত কাজ করছে না। গত কয়েক বছরে এর থেকে বাতাস বেরিয়ে যাওয়া, ইঞ্জিন বিকল হওয়া এবং এর কাঠামোতে ফাটল ধরার মতো ঘটনা ঘটেছে।
রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস অবশ্য পরে জানিয়েছে, মহাকাশ কেন্দ্রের সবকিছু পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। গত ১লা সেপ্টেম্বর একজন রুশ কর্মকর্তা ভ্লাদিমির সলোভিয়ভ জানান, সেকেলে যন্ত্রপাতির কারণে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এমনভাবে বিকল হয়ে যেতে পারে যা আর ঠিক করা যাবে না।
কেন্দ্রের ব্যাটারিগুলো যখন চার্জ করা হচ্ছিল, তখন সেখানে ধোঁয়া দেখা যায়। তবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পর ক্রুরা এখন তাদের 'নিয়মিত প্রশিক্ষণে' ফিরে গেছে।
বলা হচ্ছে, পোড়া প্লাস্টিকের গন্ধ শুরুতে মহাকাশ কেন্দ্রের রুশ নির্মিত অংশ থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল, পরে যুক্তরাষ্ট্রের অংশেও এই গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পরের দিকে তাদের যে 'স্পেস ওয়াক' বা মহাকাশে বিচরণের কর্মসূচি ছিল, তা অপরিবর্তিত আছে।
সম্প্রতি নাউকা সায়েন্স মডিউলটি' আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, দুই জন রুশ নভোচারী সেটি নিয়ে কাজ করবেন বলে কথা রয়েছে।
কেন্দ্রটির রুশ নির্মিত অংশের ইন-ফ্লাইট সিস্টেমের অন্তত ৮০ শতাংশ যন্ত্রপাতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছিলেন এনার্জিয়া নামের একটি মহাকাশ কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী সলোভিয়ভ। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের রুশ মডিউলগুলো তৈরি করেছে যেসব প্রতিষ্ঠান, তাদের মধ্যে এনার্জিয়া হচ্ছে নেতৃস্থানীয়।প্রকৌশলী সলোভিয়ভ বলেন, রাশিয়ার যারিয়া কার্গো অংশে ছোটখাটো ফাটল দেখা গেছে এবং সময়ের সঙ্গে এটির অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
তবে মজার ব্যাপারটি হচ্ছে,রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস গত বছর বলেছিল, এসব কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনকে ২০৩০ সালের পর আর চালানো যাবে না।
গত জুলাই মাসে সেখানে আরেকটি দুর্ঘটনা হয়েছিল। তখন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নাউকা মডিউলের জেট কোনও আগাম সতর্কতা ছাড়াই চালু হয়ে যায়। এর ফলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন নাড়া খেয়েছিল। রাশিয়া গত এপ্রিল মাসে জানায়, তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাবে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ নিজেদের আলাদা মহাকাশ স্টেশন তৈরি করবে। তবে এর কোনও কিছুই এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এখন সাতজন নভোচারী আছেন। এদের মধ্যে দুজন রাশিয়ার, তিন জন যুক্তরাষ্ট্রের, একজন ফ্রান্সের এবং একজন জাপানের। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ক্রুরা ধোঁয়া এবং পোড়া প্লাস্টিকের গন্ধ পাওয়ার পর সেখানে স্মোক অ্যালার্ম বেজে উঠেছিল।
রাশিয়া তাদের স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে স্বাধীন। মহাকাশ স্টেশনটিকে ঘিরে যে রহস্যজাল তা ভেদ করা অনেকটাই অসম্ভব। রাশিয়া কিংবা চীনের আইএসএস নিয়ে কোন ভিন্ন পরিকল্পনা আছে?নাকি দেশ গুলো নিজেদের আলাদা মডিউল দ্বারা গঠিত স্পেস স্টেশন তৈরি করবে!