মহাকাশ দূরত্বের খুঁটিনাটি!
আপনি কোন একটি জায়গার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে ভাবেন কত কিলোমিটার দূরে যেতে হবে এবং ভ্রমণের জন্য কি প্রস্তুতি নিতে হবে।এমনটা ভাবা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু আপনি কল্পনা করুন আপনি মহাকাশের অন্য একটি গ্যালাক্সিতে যেতে চাচ্ছেন তখন আপনি জিনিসটি কে কি কিলোমিটারে হিসাব করবেন?মহাকাশ প্রেমীদের মাঝে একটি প্রশ্ন অধরাই থেকে যায় যদি আমরা মিরপুর থেকে আজিমপুর কিলো মিটার বা মাইলে হিসাব করি তবে মিল্কিওয়ে থেকে এন্ড্রোমেডা গ্যালাক্সি কেন করবো নাহ? চলুন একটু খুঁজে আসি।
মহাকাশে দূরত্ব মাপা হয় আলোকবর্ষে। শব্দটিতে ‘বর্ষ’ থাকলেও সেটি দূরত্ব মাপার একক, সময়ের নয়। এক বছরে আলো যতটুকু দূরত্ব পেরোয়, সেটিকে আমরা এক আলোকবর্ষ বলি। সেই দূরত্বকে আমরা মাইল-কিলোমিটারেও প্রকাশ করতে পারি। যেমন এক আলোকবর্ষ ৫ লাখ ৮৭ হাজার কোটি মাইলের সমান অপরদিকে কিলোমিটারে ৯ লাখ ৪৬ হাজার কোটি।
স্পেস ডটকমে বলা হয়েছে, মহাবিশ্বের মতো বিশাল পরিসরে মাইল বা কিলোমিটারে পরিমাপ ঠিক ‘পোষায়’ না। ব্যাপারটা অনেকটা হাঁটাপথে দূরত্ব মাপার মতো।
প্রশ্ন আসতে পারে মহাকাশে কেন আলোকবর্ষ দূরত্ব হিসেবেই পরিমাপ করা হয়?
মহাজাগতিক হিসাব-নিকাশে মাইল-কিলোমিটারে হিসাব রাখা বেশ কষ্টসাধ্য, অবাস্তবও। যেমন কালপুরুষ নীহারিকা আমাদের কাছ থেকে ৭৮ কোটি ৬১ লাখ কোটি মাইল দূরে। অন্যভাবে বললে ১৩০০ আলোকবর্ষ দূরে।
আমাদের গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের কেন্দ্র পৃথিবী থেকে ২৭০০ আলোকবর্ষ দূরে। অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথের দূরত্ব ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। আবিষ্কৃত অনেক ছায়াপথের অবস্থান কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে। এই দূরত্বকে মাইল-কিলোমিটারে প্রকাশ করার কোন মানে হয় না।
আলোকবর্ষে হিসাব করার আরেকটি সুবিধা হল, নক্ষত্রের যে দৃশ্য আমরা এখন দেখছি, সেটি কত আগের, তা জানা যায়। রাতের আকাশে আমরা যা দেখি, তা বেশ আগেই ঘটে গেছে। আলো আমাদের চোখে এসে পৌঁছাতে সময় লেগেছে। আকাশে এক আলোকবর্ষ দূরের কিছু এখন দেখা মানে সেটি ঠিক এক বছর আগের ছবি। অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি দেখা মানে ছায়াপথটির আড়াই লাখ বছর আগের চিত্র দেখা।
মহাকাশে এমনেই অবাক করার মত অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলোর এখনো আমরা কাছেই যেতে পারি নাই। দুনিয়ার সকল রহস্য ভেদ করাই যেখানে একটি স্বপ্ন সেখানে মহাকাশের সকল সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া বিলাসিতা। তবে কিছু স্বপ্নবাজ মানুষের কৌতূহলের কারণেই হয়তো জানার জায়গায় একটা একটা নতুন অধ্যায় রচিত হবে।