কবুতর যখন গবেষক!
"দূর আকাশে মেঘের দেশে হারিয়ে গেলো কই
আজও যে বার্তাবাহকের ফেরার অপেক্ষায় রই"
বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে বায়ু দূষণ। দূষিত বায়ু থেকে মানবজীবনের যে ঝুঁকি সেটা এইডস বা ইবোলার ঝুঁকির থেকেও মারাত্মক। বলা হচ্ছে পৃথিবীর ৯০ শতাংশ মানুষ যে বায়ুতে নিঃশ্বাস নিচ্ছে তাতে দূষণের মাত্রা স্বাস্থ্য সংস্থাটির বেঁধে দেওয়া মাত্রার থেকেও বেশি। বিশ্বের অনেক জায়গায় বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়ছে। এর ফলে বাড়ছে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং নানাধরনের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত গুরুতর রোগের ঝুঁকি।
বায়ু দূষণের শিকার হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। এই বায়ু দূষণের জন্যে দায়ী কিছু গ্যাস ও কণা। কণাগুলো এতোই ছোট যে খালি চোখে দেখাই যায় না। একটি বালুকণাও এর চেয়ে বিশগুণ বড়। কণা বড় হলে সেটি নাকের ভেতর আটকে যায় কিন্তু খুবই সূক্ষ্ম কণা ঢুকে যায় মস্তিষ্কে স্নায়ুর ভেতরে। এসব কণা মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষের মধ্যে সংযোগ নষ্ট করে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম ঘটাতে পারে। বায়ু দূষণের জন্যে দায়ী গ্যাস ও কণাগুলি কিরকম এবং এগুলো কিভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে আক্রমণ করে।
এই বায়ু দূষণ প্রতিরোধে এবার ব্যবহার করা হচ্ছে কবুতরকেও, যারা বিজ্ঞানের গবেষণায় সহযোগিতা করছে। এসব কবুতরের সাহায্যে দেখার চেষ্টা চলছে, বায়ু দূষণ শহরে কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, গাড়ির ইঞ্জিন থেকে যে বায়ু দূষণের ঘটনা ঘটে সেটা বাড়ির ছাঁদ পর্যন্ত উঁচুতে চলে যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন জানতে চেষ্টা করছেন এরপর এই দূষণ-কণার কি হয়। কোথায় যায়? মাটি থেকে এটি বোঝা খুব কঠিন। এজন্যে তারা কিছু কবুতরকে নিয়োগ দিয়েছেন যারা খুঁজে বের করবে দূষিত এই বায়ু যখন আকাশে চলে যায় তখন এর কি পরিণতি হয়।
এর জন্য তারা কবুতরের গায়ে বেঁধে দিয়েছেন ছোট ছোট সেন্সর এবং ট্র্যাকিং ডিভাইস। কবুতরগুলি সারাদিন বিভিন্ন যায়গায় উড়ে উড়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। এবং একটা সময় পর ফিরে আসছে বিজ্ঞানীদের কাছে। তারা অই সেন্সর ও ট্র্যাকিং ডিভাইস গুলোর মাধ্যমে দূষিত বায়ুর যাত্রা পথ নির্ণয়ে সক্ষম হয়।
যুগের প্রত্যাবর্তনে আবার নতুন করে কবুতরের ব্যবহার। তবে বার্তাবাহক হিসেবেই আবার সেই পথযাত্রা। শুধু যোগ হয়েছে প্রযুক্তির আঙ্গিকে নতুন করে মানুষের কল্যাণে সেবা।