Skip to content

৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলার বাঘের ক্যাঙ্গারু বধ! 

বাংলাদেশের মানুষদের আনন্দের খোরাক জোগানোর অন্যতম একটি মাধ্যম ক্রিকেট। ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালীদের ক্রিকেটকে ঘিরে উন্মাদনা বরাবরই একটু বেশি। আর তাদের উন্মাদনা বাড়িয়ে দিতে বাংলার বাঘেরা এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। বাংলার বাঘেদের থাবায় একের পর এক ধরাশায়ী হচ্ছে আইসিসির টপ র‍্যাংকিং – এ থাকা দলগুলো। তার ধারাবাহিকতায় এবার ঘরের মাঠে ক্যাঙ্গারু বধের গল্প তৈরি করলো বাংলার বাঘেরা। ছাপিয়ে গেল সমস্ত রেকর্ড। 

 

অস্ট্রেলিয়াকে ক্রিকেট দুনিয়ার রাজা বললেও বোধহয় খুব একটা ভুল হবেনা। তবে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এমন দুর্দান্ত জয়। যেন টাইগাররা বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে বোঝাচ্ছে এবার সময় এসেছে আমাদের রাজত্বের। সেই সিরিজ শুরুর দিকে থেকেই শুরু করা যাক। ৫ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে যখন বাংলাদেশ মাঠে নামলো কে জানতো বাংলাদেশের ইতিহাসে যুক্ত হতে যাচ্ছে এক নতুন পৃষ্ঠা। সিরিজ শুরু নিয়ে কম নাটকীয়তাও হয়নি। সফরে আসার জন্য অজিদের শর্ত আর আবদারের যেন শেষ ছিল না।

 

দেশে নেমে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন না করেই সরাসরি উঠেছিলো টিম বাসে। তাদের জন্য বিসিবি ভাড়া করেছে ২১৫ রুমের একটি গোটা হোটেল। যেন তেন হোটেল নয়, হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল। যেখানে প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে কোটি টাকার উপরে। তাদের শর্ত মেনে ১০ দিন আগে থেকেই ৭০ জন হোটেল কর্মীসহ মোট ৮৫ জনকে রুম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে বিসিবি। শুধু তাই নয়, হোটেল কর্মীদের জন্য রাখা ৭০টি রুমের ভাড়াও গুনতে হচ্ছে বিসিবিকে। দেয়া হচ্ছে তিন স্তরের নিরাপত্তা। আরো টুকটাক বহু শর্ত নিয়ে শুরু হল খেলা। 

 

প্রথম দিন থেকেই ইতিহাস রচনা শুরু। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টুয়ান্টি ম্যাচ জেতার ইতিহাস। শুরুর দিনই দারুণ পারফরম্যান্সে ম্যাচ জিতে অস্ট্রেলিয়াকে মনে করিয়ে দেয়া হল এবারে তাদের একচুলও ছাড় দেয়া হবেনা। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচেও টাইগারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। দ্বিতীয় ম্যাচে জয় নিশ্চিত করে এবার সিরিজ নিশ্চিত করার পালা। তাইতো তৃতীয় ম্যাচ নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় ছিল পুরো দেশবাসী।  

 

তবে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে বাঁধ সাধে প্রকৃতি। বৃষ্টির কারণে খেলা মাঠে গড়ায় নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছু সময় পরে। টসে জিতে শুরুতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। তবে শুরুটা আশানুরূপ হয়নি টাইগারদের। তিন রানের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে মনে হচ্ছিল এবার বোধহয় আর শেষ রক্ষা হলোনা। তবে দলকে আশার আলো দেখান আমাদের অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার। সেই মুহূর্তে খেলার হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাদের জুটি বাংলাদেশকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যায়।

 

সাকিব আলা হাসান ২৬ রানে ড্রেসিং রুমে ফেরত গেলেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মাঠে থেকে তার ঝুলিতে যুক্ত করেন টি-টুয়ান্টিতে পঞ্চম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড। তবে সাকিব চলে যাওয়ার পর মাঠে বেশ দাপটের সঙ্গেই ব্যাটিং করতে থাকেন তরুণ ক্রিকেটার আফিফ হোসেন ধ্রুব। বেশিক্ষণ টিকতে না পারলেও দলের জন্য ১৩ বলে দরকারি ১৯ রান করে যান তিনি। এরপর শামীম, সোহান কেউই ঠিকঠাক দলের হাল ধরতে পারেননি।  

 

পরপর মাহমুদুল্লাহ, মুস্তাফিজ এবং মেহেদীকে আউট করে অভিষেক ম্যাচেই হ্যাট্রিকের স্বাদ পান অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার নাথান এলিস। একের পর এক উইকেট হারানোর মিছিলের কারণে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১২৭ রান। ১২৭ রানের লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের কাছে খুব একটা বেশি নয়। তাইতো গত দুই ম্যাচের থেকে এই ম্যাচে জয় পেতে বাংলাদেশকে একটু বেশি হ্যাপা পোহাতে হয়। 

 

তবে শুরু থেকেই অজিদের চাপের মধ্যে রাখে বাংলাদেশের বোলাররা। দ্বিতীয় ওভারেই অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে ড্রেসিং রুমে পাঠান নাসুম আহমেদ। তবে বাংলাদেশকে আতঙ্কে ফেলে দেন মিচেল মার্শ। সাকিব -মাহমুদুল্লাহ জুটির মতো মার্শ-ম্যাকডার্মট জুটিও তাদের দলের হাল ধরেন। আর তাতেই যেন বাংলাদেশের জয়ের আশা অনেকটা ফিকে হতে শুরু করে। দলের কঠিন সময় আবারও আশার আলো দেখান সাকিব। দলীয় ৭১ রানে ম্যাকডার্মটকে ফিরিয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন তিনি।  

 

এরপর মাঠে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি হেনরিকস। শরীফুলের বলে শামীমের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে মাত্র ২ রান করেই মাঠ ছাড়েন তিনি। হাফসেঞ্চুরি করে বিপদজনক হয়ে ওঠা মার্শকে বিদায় দেন শরীফুল। উইকেট হাতে থাকলেও লক্ষ্য  রানের কাছে পৌঁছোতে হিমশিম খান অজিরা। ১১৭ রানেই শেষ হয় নির্ধারিত ২০ ওভার। আর এ ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি সাহায্য করে কাটার মাস্টার খ্যাত মুস্তাফিজুর রহমানের চার ওভার। চার ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রানের লাগাম টেনে ধরেন তিনি।  

 

আর তাতে করেই বাংলাদেশ নাম লেখায় নতুন এক ইতিহাসের পাতায়। দুই ম্যাচ হাতে রেখেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা। টানা তিন ম্যাচ এবং সিরিজ জয়ের পর এবার বাংলাওয়াশের অপেক্ষায় টাইগাররা। এবার পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়ার পালা বাঘের গর্জন কতদূর যায়!

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ