ত্বক ও চুলের যত্নে আমের খোসা ও পাতার জাদু
'আম' খুবই পরিচিত একটি ফল আমাদের সবার কাছে। 'আম' কে বলা হয় ফলের রাজা। এখন চলছে আমের মৌসুম। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সাড়ি সাড়ি আম আর আম। এখন প্রায় সবার ঘরেই আম রয়েছে।
পাকা আমের স্বাদ ও গন্ধে মুগ্ধ আমরা সবাই। আম আমরা এখন সবাই খাচ্ছি। কিন্তু আমের খোসাটা ফেলে দিচ্ছি! কিন্তু এই আমের খোসাতে যে রয়েছে অনেক উপাদান যা আমাদের প্রতিদিনের রূপচর্চায় ব্যবহার করলে আমাদের ত্বকে ফিরে আসবে লাবন্যতা।
আমের পাতা
শুধু আমেই যে পুষ্টি উপাদান আছে তা কিন্তু না। আমের খোসাতেও আছে অনেক অনেক পুষ্টি উপাদান। গবেষণায় দেখা যায় যে, আমের চেয়ে আমের খোসার অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিক্যানসার উপাদান অনেক বেশি শক্তিশালী। কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের আঁশ । আঁশ যুক্ত খাবার বা ফল সবই আমাদের শরীর ও মনের জন্য প্রয়োজনীয়। এই আমের খোসাতে আছে ভিটামিন এ, বি৬, সি, ই, পলিফেনলস ও ক্যারোটিনয়েডস।
ত্বকের যত্নে আমের খোসার পলিফেনলস ত্বকের বলিরেখা প্রতিরোধ করতে পারে । 'বলিরেখা' এটা অনেক বড় একটা সমস্যা সব মেয়েদের জন্য। শুধু যে বয়স হলেই এই সমস্যা হয় তা কিন্তু না। অনেকের হরমোনাল কারণেও এমন টি হয়ে থাকে।সেক্ষেত্রে হাতের কাছে তো আছেই 'আমের খোসা'।
আমের খোসায় থাকা 'ক্যারোটিনয়েড ' উপাদান যা ক্ষতিকারক ইউভি রশ্নির আলো বা ক্ষতি থেকে ত্বককে করবে সুরক্ষা। ত্বকের আরো সমস্যা যেমন পিগমেন্টেশন, এবং উজ্জ্বলতা বাড়ানো ইত্যাদি ও ঠিক করতে ব্যবহার করতে পারেন এই আমের খোসা। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামটরি উপাদান ও আছে খোসাতে, তাই যাদের ব্রণ এর দাগ রয়েছে বা ব্রণ আছে তারা ও ব্যবহার করতে পারেন এই আমের খোসা।
চুলের ক্ষেত্রে
শুধু কি ত্বকের যত্ন করলেই হবে আমাদের? এর পাশাপাশি করতে হবে চুলের ও যত্ন। তাই ত্বকের যত্নের পাশাপাশি চুলের যত্নের জন্য ও ব্যবহার করতে পারেন এই আমের খোসা। এই খোসা আপনার চুলকে করবে খুশকি মুখ এবং মজবুত। এমনকি যাদের চুল পড়ার ও সমস্যা আছে তারা ও ব্যবহার করতে পারেন। কেননা এটি চুলকে অকালে পড়ে যাওয়া রোধ করে ।
ব্যবহার
আগে আমের খোসাবাটা ত্বকের যে কোন একটি স্থানে লাগিয়ে দেখুন কোন ধরনের কোন জ্বালাপোড়া হচ্ছে কিনা? ব্যবহারের পর যদি কোনো জ্বালাপোড়া না হয় তাহলে তাহলে নির্দ্বিধায় এটি আপনি আপনার বিউটি রুটিনে যোগ করতে পারেন। আপনি চাইলে বেটে ব্যবহার না করে আমের খোসা শুকিয়ে গুড়া করে বক্স করে রেখে দিতে পারেন। এতে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যাবে এবং আপনি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারবেন রূপচর্চায়।
কিন্তু একটা কথা, এই যে আমের যে পাতাটা রয়েছে তার কথা টা খেয়াল আছে তো সবার? না মানে, আমের সাথে সাথে আম পাতার ও যে অনেক বৈজ্ঞানিক গুণাবলি রয়েছে সে বিষয়ে কি আমাদের কোনো ধারনা আছে?
আমপাতা
আমের কচি পাতা যে অনেক দেশে রান্না করে খায় সেটা হয়তো অনেকেই আমরা জানি না। কারণ এই পাতা কে অনেক পুষ্টিকর হিসেবেই ধরা হয়। এই পাতার রয়েছে শত শত গুন। গুনাগুণ বলে শেষ করা যাবে না।
আমের পাতা দিয়ে বানানো যায় অনেক কিছু। যেমন চা, আবার অনেক ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট ও বানিয়ে খাওয়া হচ্ছে। যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদ এবং ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ চিকিৎসায় বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ে আমপাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। আম পাতা যে কোনো রোগ সারাতে সক্ষম। এটি ব্যবহারে যে সুফল পাওয়া গেছে তা প্রমাণিত ও হয়েছে গবেষনায়।
আম পাতা ভালো কাজ করে তাদের জন্য যাদের ডায়াবেটিস, আলসার, ক্যানসার ইত্যাদি রোগ আছে । কেননা এই সব রোগ নিরাময়ে আম পাতা দারুণ কাজ করে বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। এই সম্প্রতি ফিলিপাইনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মলিকুলার বায়োলজি এবং ইউনিভার্সিটি অব দ্য ফিলিপিনস লস বানিয়োসের যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে,
আম পাতার রস বিভিন্ন ত্বকের যত্নে ব্যবহার উপযোগীতে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। এটি ব্যবহারে এর কার্যকর ক্ষমতা বহুগুণে বেড়ে যায়। ফলে তাড়াতাড়ি রোগ প্রতিরোধ হয়। এতে আছে উচ্চমানের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং অনেক অ্যান্টি–এজিং ও হোয়াইটেনিং উপাদান। যা শরীর ও ত্বকের জন্য প্রয়োজন।
আমপাতায় রয়েছে পলিফেনলিক যৌগ। এতে আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। আমপাতার এ উপাদান ইলাস্টেজ এবং টাইরোসিনেসের বিরুদ্ধে কাজ করে। ইলাস্টেজ এমন এক এনজাইম, যা ত্বকের ইলাস্টিন হজম করে। যার ফলে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে। আর টাইরোসিনেসের জন্য ত্বক উজ্জ্বলতা হারায়।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শরীরের প্রতি কেজি ওজনের বিপরীতে ১০০ মিলিগ্রাম করে (৬০ কেজি ওজনের মানুষের জন্য ৬০০০ মিলিগ্রাম) আমপাতার রসের সাপ্লিমেন্ট খেলে শরীরে কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যায়। কোলাজেন প্রোটিনের জন্য ত্বকে স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকে। এর অভাব হলে ত্বকে সূক্ষ্ম বলিরেখা দেখা দেয়।
আমাদের ত্বকে স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়া আছে বা সমস্যা দেখা দিয়েছে,তাদের ক্ষেত্রে এটি ভালো কাজ করবে। আমপাতায় আছে ম্যাঞ্জিফিরিন নামের একটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এটি সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ যেমন চুলকানি, শুকনা খসখসে ভাব ইত্যাদি দেখা দিলে বা থাকলে তা ক্রমশ কমাতে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়ায় যায়।
আমপাতার পলিফেনল শরীররে যেকোন ক্ষত সারাতে সক্ষম। ক্ষত সারানোর বিষয়টা যুগ যুগ থেকেই আয়ুর্বেদশাস্ত্রে চর্চা করা হচ্ছে। যেমন, কারও কোথাও পুড়ে গেলে সাথে সাথেই চিকিৎসা জন্য আম পাতা পুড়িয়ে তার ছাই দেওয়া হতো ক্ষতস্থানে। এতে ক্ষতস্থানে আরাম মিলত এবং জলদি তা ঠিক হয়ে যেতো।
চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে ও আমপাতা ব্যবহার হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। এটি বিশেষ করে চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয় কারণ, আমপাতায় থাকা উচ্চমানের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট চুলের ফলিকলের ক্ষতি সাধন থেকে রক্ষা করে চুলকে করে আরো প্রাণবন্ত আরো মজবুত। যাদের অকালে চুল পেকে গিয়েছে তারা এই আম পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কেননা চুল প্রাকৃতিকভাবে কালো করতে আমপাতায় থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড বেশ উপকারী।
সুতরাং আমের খোসা এবং আম পাতা উভয়ই খুবি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান আমদের শরীর ও চুলের যত্নে। প্রতিনিয়ত ব্যবহারে পেয়ে যাবেন আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ফল।