চাঁদে পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা
পৃথিবী ধ্বংস হওয়া নিয়ে বহুবছর ধরেই আশংকা প্রকাশ করছেন বিজ্ঞানীরা। তার কারণ হতে পারে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আবার হতে পারে কোন মহাজাগতিক সংঘর্ষ। তবে কারণ যাই হোক না কেন পৃথিবী ধ্বংসের আশংকা তো থেকেই যাচ্ছে। তাই বলে পৃথিবীর সকল অস্তিত্বকে বিলুপ্ত হতে দিতে রাজি নন বিজ্ঞানীরা। তাই তাদের পরিকল্পনা পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের বুকে পুঁতে রাখবেন ৭০ হাজার প্রাণীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু।
ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা এর অ্যারোস্পেস এন্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোফেসর জেকান থাঙ্গা একটি ইউটিউব ভিডিওতে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। সেখানে তিনি পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কা করে পৃথিবীর প্রাণীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন।
বিজ্ঞানীরা চাঁদে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু রাখার বিষয়টিকে 'মডার্ন গ্লোবাল ইনসিওরেন্স পলিসি' বলে উল্লেখ করছেন।পরিকল্পনাটিতে বলা হয়েছে ক্রায়োজেনিক তাপমাত্রায় (-১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) চাঁদের মাটিতে রক্ষিত থাকবে এই স্পার্মব্যাঙ্ক।
বিজ্ঞানীদের এই পরিকল্পনার পেছনে কারণ হল ভবিষ্যতে যদি কোন বুদ্ধিমান প্রাণী এর খোঁজ পায়, তাহলে অন্তত তারা পৃথিবীর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে পৃথিবী এতো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে তার কারণগুলো ঠিক কি? চলুন তবে সে কারণগুলোর অনুসন্ধান করা যাক।
বর্তমান মহামারীর কারণে পুরো পৃথিবী পার করছে এক ভয়ংকর সময়। এতো প্রযুক্তি, এতো উন্নতি তবুও অদৃশ্য এক ভাইরাসের সাথে লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছে মানবজাতি। দিনের পর দিন দীর্ঘায়িত হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। কিন্তু কোন দিকেই নেই আশার আলো। যেন বিজ্ঞানও মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের মনে পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিশাল আশংকা।
যদি এর চেয়েও ভয়ংকর কোন প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগের দেখা মিলে, যার কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বের করতে পারবেন না। যদি বড় বড় দেশ যে জৈব অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করছে, তাদের ল্যাবরেটরির মারাত্মক কোন জীবাণু কোনোভাবে বাইরে বের হয়ে যায়। তাহলে অচিরেই মানবসভ্যতা ধ্বংসের সম্মুখীন হবে।
মহাশূন্য থেকে পৃথিবীকে প্রতিদিন অসংখ্য উল্কাপিণ্ড আঘাত করছে। কিন্তু সেগুলো আকারে বেশ অনেকটা ছোট হওয়ায় মাটিতে পড়ার আগেই বাতাসে জ্বলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যাকে সাধারণত আমরা তারা খসে পড়া বলে থাকি। কিন্তু এই উল্কাপিণ্ডই যদি প্রকাণ্ড আকারের হয় এবং পৃথিবীর ওপর পড়ে, তাহলে পৃথিবী নিজে ধংস না হলেও মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকুল ধংস হয়ে যেতে পারে।
পৃথিবীর অস্তিত্ব সংকটে ভোগার আরেকটি প্রাকৃতিক কারণ হতে পারে সুপার ভলকানো বা বিপুল আগ্নেয়গিরি। বেশ কটি সুপার ভলকানোর সন্ধান বিজ্ঞানীরা এরইমধ্যে বের করেছেন। এধরনের আগ্নেয়গিরির প্রভাব হতে পারে ভয়ংকর। এবং সবথেকে ভয়ের বিষয় সুপার ভলকানো শুরু হলে বিজ্ঞানীরা কয়েক দিন বড়জোর কয়েক মাস আগে আভাস পেতে পারেন আর বিজ্ঞানীদের হাতে করার মতোও কোন উপায় থাকবেনা তখন।
এতো গেলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপার। পৃথিবীর ধ্বংস হওয়ার জন্য আমাদের মানবসৃষ্ট হাতিয়ারও নেহাত কম নেই। যে তালিকায় প্রথমেই বলা যায় পারমানবিক অস্ত্রের কথা।পৃথিবীর সকল পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর অস্ত্রাগারে যে পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র আছে, তা পৃথিবীকে সহজেই ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই পারমাণবিক যুদ্ধকে এখনো মানবসভ্যতার জন্য প্রধান ঝুঁকি হিসেবেই ধরা যায়।
এছাড়াও রয়েছে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষের দ্বারা অবিবেচকের মতো পরিবেশ দূষণের প্রবণতা। যার ফলাফলও দেখা যাচ্ছে হাতেনাতে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট গ্লোবাল ওয়ার্মিং পৃথিবীকে অচিরেই মানুষের বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে। এমনকি মানবসভ্যতাও হুমখীর সম্মুখীন হবে।
মানুষের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও হতে পারে মানবসভ্যতা ধ্বংসের কারণ। কম্পিউটারের বা মেশিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যাকে ইংরেজিতে বলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সংক্ষেপে এআই (AI)। বর্তমানে গবেষণা থেকে শুরু করে অর্থনীতি এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঢুকে পড়ছে। রোবট তৈরি করা হচ্ছে কলকারখানা থেকে শুরু করে ঘরের কাজের জন্যও। ধীরে ধীরে যদি মানুষ সকল বড় বড় কাজে এদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে দেয় এবং তারা যদি মানুষের বিপক্ষে চলে যায়, তাহলে মানবসভ্যতা বিরাট ঝুঁকির মধ্যে এমনকি বিলুপ্তও হতে পারে।
তাই পৃথিবীর এমন অস্তিত্ব সংকট দেখে বিজ্ঞানীরা আশংকা করছেন যেকোনো সময়ই চলে আসতে পৃথিবী ধ্বংসের মুহূর্ত। কিন্তু পৃথিবীর অস্তিত্ব এভাবে যাতে ধ্বংস না হয়ে যায় তাই বিজ্ঞানীরা রীতিমত উঠে পড়ে লেগেছে। তাই পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা চান চাঁদের সহযোগিতা। চাঁদের মাটিতে পুঁতে রাখতে চান এই গ্রহের প্রায় ৭০ লক্ষ প্রজাতির ডিম ও স্পার্ম। যাতে পৃথিবী ধ্বংস হলেও চাঁদের বুকে থেকে যায় এর কিছু অস্তিত্ব।