গরমেও কি লোশন দরকার?
শীত বিদায় নিয়েছে। আর চৈত্রের শুরুতেই আমাদের দেশে গরমে শুরু হয়েছে চরম রূপ ধারণ করে। গরমে ত্বক ঘামে, তেলতেলে হয় এটা স্বাভাবিক। তাই অনেকেই ভাবেন, “এই গরমে আবার লোশন লাগাতে হবে নাকি? এতে তো ত্বক আরও তেলতেলে হয়ে যাবে” কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল এবং ত্বকের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে।

গরমকালে ত্বকের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। কারণ গরমে সূর্যের প্রচণ্ড তাপ, ঘাম এবং ধুলাবালির প্রভাবে ত্বক আর্দ্রতা হারায়, হয়ে পড়ে রুক্ষ এবং প্রাণহীন।
লোশন কি শুধুই শীতের জন্য? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আফজালুল করিম। তিনি বলেন, “পৃথিবীর সবচেয়ে গরম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সেখানে গরমের সময়ও মানুষ নিয়মিত লোশন ব্যবহার করে। সুতরাং গরমকালে লোশন ব্যবহার করা যাবে না, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “লোশন শুধু শীতে নয়, বরং সারা বছরই ত্বকের সুরক্ষার জন্য দরকারি।”
পারসোনা হেয়ার অ্যান্ড বিউটি লিমিটেডের পরিচালক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ নুজহাত খান বলেন, “গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে আমাদের ত্বক থেকে প্রয়োজনীয় পানি ও আর্দ্রতা বেরিয়ে যায়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। আর সেই আর্দ্রতা ধরে রাখতে নিয়মিত হালকা লোশন ব্যবহার করা উচিত। এটি ত্বকের হাইড্রেশন ব্যালান্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।”
তবে ত্বকের ধরনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিন সঠিক লোশন।
শুষ্ক ত্বক – হালকা ময়েশ্চারাইজারযুক্ত লোশন ব্যবহার করতে পারেন। এটা ত্বকে দ্রুত শোষিত হয়ে আর্দ্রতা বজায় রাখে।
তৈলাক্ত বা মিশ্র ত্বক – ওয়াটার বেজড বা জেল টাইপ লোশন সবচেয়ে উপযুক্ত। এতে ত্বক চিটচিটে হয় না, বরং হালকা ও স্নিগ্ধ অনুভব করে।
বিশেষজ্ঞদের কিছু কার্যকর টিপস
গোসলের পর লোশন ব্যবহার – গোসলের সময় ত্বক পরিষ্কার হয় ঠিকই কিন্তু সাবান বা বডিওয়াশ ব্যবহারের কারণে ত্বক তার প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারাতে পারে। গোসলের পর লোশন ব্যবহার করলে সেই আর্দ্রতা ফিরে আসে।
তেলতেলে ভাব হলে টিস্যু ব্যবহার – অনেক সময় লোশন লাগানোর পর ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে লাগতে পারে। এমন হলে আলতো করে টিস্যু দিয়ে অতিরিক্ত তেল মুছে নিলেই হবে।
হালকা লোশন – ভারী ক্রিম বা অয়েন্টমেন্টের বদলে হালকা, ত্বক-বান্ধব লোশন ব্যবহার করা উত্তম।
এসি রুমে থাকলে – অফিস বা বাসায় যারা দীর্ঘ সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকেন, তাদের ত্বক খুব সহজেই শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই তাদের জন্য নিয়মিত লোশন ব্যবহার আরও জরুরি।
সঠিক পিএইচ ব্যালান্স – লোশন কিনতে গিয়ে খেয়াল রাখুন। এতে সেটি ত্বকের স্বাভাবিক পিএইচ মাত্রা বজায় রাখে। এতে ত্বক থাকবে সুস্থ ও সতেজ।

লোশন ও অয়েন্টমেন্ট এক নয় – অনেকেই মনে করেন লোশন, ক্রিম আর অয়েন্টমেন্ট একই জিনিস। প্রকৃতপক্ষে, অয়েন্টমেন্ট সাধারণত শীতে বেশি কার্যকর, যেখানে লোশন হালকা ও সারা বছর ব্যবহারযোগ্য।
সানস্ক্রিনযুক্ত লোশন ব্যবহার – গরমকালে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV rays) থেকে ত্বককে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। তাই যেসব লোশনে সানস্ক্রিন থাকে সেগুলোর ব্যবহার দ্বিগুণ উপকারি। এটি শুধু সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে না, বরং ত্বকের বয়সের ছাপ পড়ার প্রক্রিয়াও ধীর করে।
গরমে লোশন ব্যবহার করতে হবে না এই ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ। বরং সঠিক লোশন ব্যবহার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, ত্বককে সুরক্ষিত ও উজ্জ্বল রাখে। ত্বক যেমনই হোক না কেন শুষ্ক, তৈলাক্ত বা মিশ্র গরমেও নিয়মিত লোশন ব্যবহার আপনার ত্বকের জন্য হবে সবচেয়ে বড় উপকার। তাই নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিলে, ত্বক আপনাকে তার উজ্জ্বলতার উপহার দেবে।