মুক্তিযুদ্ধে চার নারী!
মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীনে অনেক নারী অবদান রেখেছে। কেউ প্রত্যক্ষভাবে, কেউ পরোক্ষভাবে। এমন চার নারী সম্পর্কে আজ আমরা জানবো। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৬ নম্বর সেক্টরে নার্স হিসেবে কাজ করেছিলেন লালমনিরহাট সদরের মমতাজ পারভিন, কালীগঞ্জের রশিদা বেগম, রংপুর শহরের মাহমুদা ইয়াসমিন ও আকলিমা খন্দকার।
১৯৭১ সালে লালমনিরহাট শহরের রেলওয়ে সাহেব পাড়ায় থাকতেন মমতাজ পারভিন। তিনি তখন লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। তাঁর সহপাঠী শামীমা আক্তারের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার বা কাজ করার অনুপ্রেরণা পান তিনি। সে সময় তাঁর আত্মীয় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের রশিদা বেগমকে যুদ্ধে যাওয়ার ব্যাপারে জানান তিনি। পরবর্তীতে রশিদা বেগমও তাঁর সাথে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রশিদা বেগম রংপুর কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে নার্সিং প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন তিনি। তিনিসহ মমতাজ, আকলিমা, মাহমুদা ও শামীমা বুড়িমারী, ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা, বাংলাদেশের পাটগ্রাম, বাউরা ও লালমনিরহাট শহরের রেলওয়ে হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কিছুদিন এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তাঁরা বাংলাদেশের বুড়িমারী সীমান্তের ওপারে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা ক্যাম্প ও অস্থায়ী হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বাড়তে থাকল অস্থায়ী হাসপাতালে। চিকিৎসক ও নার্সসহ চিকিৎসা সামগ্রী ছিল অপ্রতুল। এ সময় ৬ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এম কে বাশারের নির্দেশে শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে একটু শিক্ষিত মেয়েদের খোঁজ করা হচ্ছিল নার্সিংয়ের জন্য। এমন প্রেক্ষাপটে লালমনিরহাট বালিকা বিদ্যালয়ের সহপাঠী শামীমা আক্তারের বড় ভাই তৎকালীন ছাত্রনেতা শরীফ উদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে তাঁরা পাঁচজন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
যুদ্ধের পর শামীমা আক্তার এয়ার হোস্টেস ও রশিদা বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। বর্তমানে দুজনই অবসর গ্রহণ করেছেন। অন্যরা গৃহিণী। শামীমা আক্তার ও মাহমুদা ইয়াসমিন ঢাকায় থাকেন, আকলিমা খন্দকার ও মমতাজ পারভিন রংপুর শহরে এবং রশিদা বেগম লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে থাকেন। তাঁরা সবাই তালিকাভুক্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ও ভাতা পেয়ে থাকেন।