কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে আজকের নারীরা
নারী পুরুষ এর বৈষম্যে শুরুটা হয় সেই জন্মলগ্ন থেকেই। সাধারণত ছেলে শিশুর জন্মের পর বাধ ভাঙা খুশির জোয়ার চলে আসে পরিবারে। কিন্তু কন্যা সন্তান জন্মের পর পরিবারের সদস্যদের মুখে দেখা যায় কালো মেঘের ঘনঘটা। এরপর জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা মেলে বৈষম্যের। এমনকি কর্মক্ষেত্রেও সেই একই চিত্র। কর্মক্ষেত্রে নারীকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয় প্রায়শয়ই।
কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দেখা যায় বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে। তারা নানা বঞ্চনা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। পাচ্ছে না অধিকার, নেই নিরাপত্তা। তবুও তারা জীবন জীবিকার তাগিদে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে মৌখিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন এমনকি মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছেন তারা। এছাড়াও কর্মক্ষেত্র কাজের দায়িত্ব নিয়ে, বেতন নিয়ে, বিশাল এক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে আজকের নারীরা।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য হচ্ছে কর্মদাতার সৃষ্টি আর কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বা নারীর জীবনযাত্রাটা এমন যে বৈষম্যটা হয়েই যায়। পদোন্নতির দিকে চোখ রাখলে দেখতে পাবেন উপরের দিকে যতই চোখ পড়বে নারীর সংখ্যা ততই কমতে থাকে। তবে নারী পুরুষের এই বৈষম্য আনুষ্ঠানিক খাতে অনেকটা কম হলেও অনানুষ্ঠানিক খাতে এই বৈষম্য অনেকটাই প্রকট। কারণ আনুষ্ঠানিক খাতে মোটামুটি প্রতিটা পদের বিপরীতে দায়িত্ব এবং বেতন নির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত থাকে। অন্যদিকে অনানুষ্ঠানিক খাতে – কার কি দায়িত্ব বা বেতন হবে, কাকে কত টাকা মজুরি দেয়া হবে তা নির্ভর করে কর্মদাতার উপর। তাই কর্মদাতাও সুযোগ পেয়ে যায় এ খাতে বৈষম্য তৈরি করার।
নারী শ্রমিক যারা রাস্তার কাজ করছেন, ইট ভাঙছেন কিংবা রাস্তা-ঘাট নির্মাণের সাথে আছেন সেসব জায়গায় নারী শ্রমিকরা ৩০-৪০% পর্যন্ত মজুরি কম পেয়ে থাকে।
আবার অনেক কর্মক্ষেত্রে ওভারটাইম করার সুযোগ রয়েছে কিন্তু ওভারটাইমে কাজের ক্ষেত্রে নারীর তুলনায় পুরুষই এগিয়ে কারণ নারীকে কাজ শেষে সামলাতে হয় ঘরের দায়িত্ব । আর আমাদের সমাজে যেখানে নারীর বাইরে বেরিয়ে কাজ করাকেই একধরনের অন্যায় মনে করা হয় সেখানে কাজ শেষে রাত করে ওভারটাইম করাটা মোটামুটি অসম্ভব। এখানেও সৃষ্টি হচ্ছে বিরাট এক বৈষম্য।
নারী পুরুষের এই বৈষম্যের পেছনে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ এবং নিরাপত্তাও গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা এখনো অনেক ধরনের কাজের সুযোগ পান না। কারণ প্রায় ক্ষেত্রেই কাজের জায়গায় নারীদের অনেক ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়, এবং সন্ধ্যার পরে নারীদের বাইরে থাকা যেন আমাদের সমাজে মহা অপরাধ, আর একটা নির্দিষ্ট সময় পরে নারীদের পরতে হয় বিভিন্ন অসুবিধায়। এ কারণে অনেক ধরনের কাজের সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হন। সেটাও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।
প্রশ্ন আসে অফিসের ভেতরের নিরাপত্তা নিয়েও। উচ্চশিক্ষিত, বহু ডিগ্রী ধারী কলিগ বা বসের কাছেও হয়রানীর শিকার হয় নারীরা। এ হয়রানির জন্য অনেক নারী তার কর্মক্ষেত্র থেকে সরে যায়। এভাবেও তৈরি হয় বৈষম্য। উপরন্তু কর্মক্ষেত্রে নারীর যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিলছেনা সেসব সুযোগ সুবিধা।
দেশে কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের বৈষম্য অনেকটাই প্রকট। বর্তমানে আধুনিক এই সমাজের ভারসাম্য রক্ষার জন্য নারী পুরুষ বৈষম্য দূর করা খুবই জরুরি । যদিও আধুনিক সমাজের প্রগতিশীল অনেকেই এই বৈষম্য দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছে, ভাঙার চেষ্টা করছে নারীর কর্মক্ষেত্রে যোগদানের পথের সকল বাঁধা। কিন্তু পুরোপুরি সফল হওয়ার জন্য এখনো হয়তোবা হাঁটতে হবে অনেক পথ।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এ অর্ধেক জনসংখ্যাকে পেছনে ফেলে , দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেশের নারী সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।