Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহামারীর গল্পঃ কোভিড ১৯

করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯ । বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত প্যান্ডেমিক বা অতিমারি। বিশ্বে এর আগেও অসংখ্যবার এরকম অতিমারি হয়েছে। শেষ অতিমারিটি হয়েছিল প্রায় ১০০ বছর আগে ১৯১৮ এর স্প্যানিশ ফ্লু । কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে এগিয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। তাই মানুষের কল্পনাতেও ছিল না এরকম একটি অতিমারি পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিবে। তবে বিজ্ঞানীরা বারবারই সতর্ক করেছেন বিশ্বের নেতৃবৃন্দকে, কিন্তু তারা ব্যস্ত ছিলেন যুদ্ধ, জাতীয়তাবাদ আর ভোগবিলাসের অর্থনীতি নিয়ে। যার ফলশ্রুতিতে আজকের এই অতিমারি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইতোমধ্যেই সবমিলিয়ে ১ লাখ মানুষ এই রোগে প্রান হারিয়েছেন, আরো কয়েক লাখ মানুষ হয়তো মারা যাবেন। কিন্তু মানুষ যুগে যুগে যেমন এসব মহামারীকে জয় করেছে, এবারও করবে।

মহামারী একরকম অভিশাপ মনে করা হলেও এসব মহামারীই আজকের মানুষকে উন্নত হতে, নানারকম উন্নতি পদ্ধতি গ্রহন করতে সাহায্য করেছে। সামান্য একটি উদাহরণ দেই – আমরা জনস্বাস্থ্য বা পাবলিক হেলথ শব্দের সাথে এখন অনেকেই পরিচিত। মহামারীতে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাই আমাদের জীবন বাচাতে নানারকম গবেষণা করেন এবং জীবন পদ্ধতি গ্রহন করতে পরামর্শ দেন। আজকে যে দেশে দেশে লকডাউন সেটা এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো এই জনস্বাস্থ্য বিষয়টির জনক বলা হয় কলেরাকে। যে কলেরায় একসময় গ্রাম উজার হয়ে যেতো সেটি এখন খুব সাধারণ রোগ। আমরা সবাই এর চিকিৎসা জানি, খাবার স্যালাইন। আমরা পুকুর নদীর পানি সরাসরি খাই না কারন জানি আমাদের কলেরা হতে পারে। এইযে জীবনমানের উন্নয়ন সেটি কিন্তু হয়েছিল লন্ডনে কলেরা মহামারী হওয়ায়। যাহোক, এই বিষয়ে পরবর্তীতে লিখবো। আপাতত আবার কোভিড ১৯ এ ফিরে আসি।

image-286-1588258095

কোভিড ১৯ একধরণের করোনা ভাইরাস। এটি ছাড়াও আরো আরো দুই প্রধান ধরনের করোনা ভাইরাস এর কথা উল্লেখযোগ্য। এদুটি হলো SARS-CoV যেটির কারনে ২০০৩ সালে চীনের গুয়াংডুং শহরে একবার মহামারী হয়। এর নাম SARS-CoV কারন এতে Severe Acute Respiratory Syndrome অর্থাৎ প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হয়। আরেকটি হলো MERS-CoV বা Middle East Respiratory Syndrome।

এতেও প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হয় আক্রান্ত ব্যক্তির কিন্তু এর জিনগত পার্থক্য থাকায় এবং এটি প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যে ২০১২ সালে প্রাদুর্ভাব ঘটানোয় এর নামটি ভিন্ন রাখা হয়। আর কোভিড ১৯ এর বৈজ্ঞানিক নাম SARS-CoV 2। এই নামকরণ এর জন্য একটি আন্তজার্তিক সংস্থা আছে যাতে সকল দেশের প্রতিনিধি থাকে। এই কোভিড ১৯ করোনা ভাইরাস হলেও এর জিনগত গঠন এবং সংক্রমণ করার পদ্ধতি আগের দুটোর তুলনায় বেশ ভিন্ন বলে একে নভেল করোনাভাইরাস বা নতুন ভাইরাস বলা হচ্ছে এবং এই কারনেই সারা বিশ্ব একে আটকাতে হিমশিম খাচ্ছে।

আমরা সবাই মোটামুটি জানি কোভিড ১৯ উহান শহরের একটি মাংসের বাজার থেকে ছড়ায়, যদিও নানারকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এ বিষয়ে আছে যে এটি ল্যাবে তৈরি ভাইরাস। কিন্তু বাস্তবতা হলো এরকম ভাইরাস ল্যাবে তৈরি করার মত সক্ষমতা এখনো কারও নেই এবং বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই এর জীন কাঠামো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন যে এটি ল্যাবে তৈরি নয়। তারপরও নানারকম প্রশ্ন থাকে কেন এই ভাইরাসটি এত বেশি সংক্রামক? কেন এই ভাইরাসটিকে চীন এত সহজে আটকে রাখতে পারলো। হংকং, দক্ষিন কোরিয়া পারলো কিন্তু ইউরোপ বা আমেরিকা পারছে না। এর কারন বেশ কয়েকটি। তবে তার আগে যাই কেন এই ভাইরাসটি এত বেশি সংক্রামক –

করোনা ভাইরাসগুলো এমন ভাইরাস যাদের প্রুফরিডিং এবিলিটি আছে। আমরা বইয়ের পান্ডুলিপির প্রুফরিডিং এর কথা জানি। এটাও অনেকটা সেরকম। আমরা নানারকম গুজবে শুনেছি এই ভাইরাস ইতোমধ্যে ৩৮০ বার মিউটেশন করেছে। আসলেই কি করেছে? মিউটেশন জিনিসটা কি?

image-281-1588050439

ধরা যাক, একজন পাশেরজনকে বললেন বাদুর, পাশেরজন শুনলেন ইদুর এবং সেটি তার পাশেরজনকে বললেন এবং তিনি শুনলেন মাদুর। অর্থাৎ বাদুর একজন থেকে অন্যজনের কাছে যেতে যেতে হয়ে গেল মাদুর। মিউটেশন এ এরকম পরিবর্তন হয়। জীনের বেস পেয়ার বা প্রোটিন কাঠামো পরিবর্তন হয়ে যায়। অর্থাৎ মূল কাঠামো পরিবর্তন হয়ে ভিন্ন কাঠামো হয়। তাই মিউটেশন হলে সাধারণত সংক্রমণের হারে পরিবর্তন হয় এবং সাধারণত তা কমে আসে।

কিন্তু যেহেতু করোনা ভাইরাসগুলোতে প্রুফ রিডিং সামর্থ্য আছে তাই এরা মিউটেশন ঘটতে সাধারনত দেয় না। পাশেরজন ইদুর শুনলে সাথে সাথে প্রথমজন বুঝে ফেলে এবং শুধরে দেয় তাই পাশেরজন, তার পাশেরজন বাদুরই শোনে, ইদুর বা মাদুর শোনার সুযোগ নেই। তাই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা একইরকম থাকে লক্ষ লক্ষ মানুষকে আক্রান্ত করার পরেও। তাই হঠাৎ করে সংক্রমণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে আশার কথা হচ্ছে যেহেতু মিউটেশন কম হয় বা হয়না বললেই চলে সেহেতু ভ্যাক্সিন আবিস্কার করা গেলে সেটি কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।

এখন আসি ইউরোপ আমেরিকাতে মহামারীর তীব্রতার কারণ অনুসন্ধানে-

১/ Early Detection & Early Response অর্থাৎ দ্রুত সনাক্তকরণ ও দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ এ ব্যর্থতাঃ

যেকোন মহামারী মোকাবিলায় এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি সেটি করতে পেরেছে। দ্রুত সনাক্তকরণ এর জন্য বেশি বেশি টেস্ট করতে হবে, জার্মানি সেটি করছে, দক্ষিণ কোরিয়া সেটি করেছে। অন্যেরা সেটি করেনি। কেন করেনি? সাধারণত সব দেশের সরকারই এই ধরণের কাজ করতে ব্যর্থ হয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। তাই অধিকাংশ দেশ সেটি করতে পারে না। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেহেতু জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান তাই তারা সরকারি রিপোর্ট এর উপর ভরসা করে। তাই রোগ সনাক্ত করতে দেরি হয়। এবারও তাই হয়েছে। সাধারণত এইসব রোগ প্রথম সনাক্ত করে কানাডাভিত্তিক পাবলিক হেলথের একটি স্বতন্ত্র সংস্থা Global Public Health Information Network বা GPHIN। কিন্তু এবারের কোভিড ১৯ এর ক্ষেত্রে তারা সতর্ক করতে পুরোপুরি সফল হয়নি।

২/ অভিজ্ঞতাঃ

চীন, হংকং এসব দেশে ২০০৩ সালে SARS করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল। তারা সেসময় শহর লকডাউন করে ভাইরাস নিয়ন্ত্রন করে। যেসব রোগির সর্দি কাশির সিম্পটম ছিল তাদেরকে তারা কোয়ারেন্টাইন করে। সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়। এবং ওই সংক্রমণ এর পরে তারা তাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিমানবন্দর এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজায় যাতে পরবর্তীতে এরকম কোন সংক্রমণ হলে তারা সেটি নিয়ন্ত্রন করতে পারে। বলা যায় তারা একরকম প্রস্তুত ছিল। সেজন্য তারা খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয় যেটি ইউরোপ বা আমেরিকা পারেনি। কারন ইউরোপ বা আমেরিকায় এরকম মহামারী গত ১০০ বছরে হয়নি। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাদের মুল ফোকাস সবসময়েই নানারকম দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, মস্তিস্কের রোগ। তাই এরকম সংক্রামক রোগ আক্রমনের সাথে সাথে তাদের কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ে।

৩/ সংক্রমণের ধরণঃ

কোভিড ১৯ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ হয় আমরা জানি। অন্যান্য করোনা ভাইরাসও মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। কিন্তু পার্থক্য হলো এই কোভিড ১৯ যে ব্যক্তির কোন রোগলক্ষন নেই তার কাছে থেকেও ছড়ায় যেটি অন্যান্য করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে হয়নি। অন্যান্য করোনা ভাইরাস এর ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির যখন তাপমাত্রা বা সর্দি কাশি দেখা দিয়েছে তখন মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। তাই সেসময় রোগলক্ষন দেখা দিলেই কোয়ারেন্টাইন করাই যথেষ্ট ছিল রোগের বিস্তার রুখতে। কিন্তু কোভিড ১৯ এর ক্ষেত্রে দেখা গেল প্রায় এক তৃতীয়াংশ রোগির কোন লক্ষন দেখা দেয় না। তারা সুস্থভাবে বাজারে যাচ্ছেন, একদেশের থেকে আরেক দেশে যাচ্ছেন কিন্তু রোগ ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়টি চীনের বুঝতেও সময় লেগেছে। ততদিনে অনেক লক্ষনবিহীন আক্রান্ত ব্যক্তি চীন থেকে বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন এবং রোগ ছড়িয়েছেন। আর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালির সাথে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো হওয়ায় সবার আগে ইতালিতে রোগটি ছড়িয়েছে।

৪/ রাষ্ট্রব্যবস্থাঃ

চীনের রাষ্ট্রব্যবস্থা একটা ভিন্ন ধরনের গণতান্ত্রিক সরকার দ্বারা পরিচালিত। আর ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহ পুরোপুরি গণতান্ত্রিক। তাই চীন অনেক ক্ষেত্রেই যেই নিয়মনীতি জনগনের উপর চাপাতে পারে সেটা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো পারেনি। কারণ ইউরোপে নাগরিক অধিকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। এই স্বাধীনতা এখন ইউরোপের বিপর্যয়ের কারন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

৫/ অর্থনীতিঃ

ইউরোপের যে তিনটি দেশ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সেই তিনটি দেশ হলো ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্স। এই তিনটি দেশই ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের গন্তব্য। আর ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপের শীত শেষের পথে থাকে। তাই প্রচুর মানুষ এসব দেশে যাওয়া শুরু করে। তাদের অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি এই ট্যুরিজম। এছাড়াও ব্রেক্সিট পরবর্তী ইউরোপ একটু টালমাটাল ছিল। তাছাড়া সিরিয়ার শরনার্থী বিষয়ক অর্থনৈতিক চাপ। তাই এসব দেশ প্রথমেই লকডাউনে যাওয়ার সাহস পায়নি। আর ইংল্যান্ড, আমেরিকা চীনের মৃত্যুহার কম দেখে খুব ভয় পায়নি। তাছাড়া অর্থনৈতিক চাও তো আছেই। সবমিলিয়ে ইউরোপ প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছে যেটির মাশুল তারা দিচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হলো, এই সমস্যা কতদিন থাকবে?

সত্যি কথা হলো এর উত্তর পাওয়া মুশকিল। ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞরা বলেছে ২০২১ এর বসন্তের আগে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরা মুশকিল হবে। কানাডার বিশেষজ্ঞরা বলছে ভ্যাক্সিন আবিস্কার এর পূর্বে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় হয়তো যাওয়া যাবে না। বিশ্ববিখ্যাত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডঃ ল্যারি ব্রিলিয়ান্ট যিনি কিনা গুটি বসন্ত নির্মুল করার অগ্রদূত তিনি ২০০৬ সালে ধারণা করেছিলেন এরকম একটি অতিমারি হবে। তারমতে এই অতিমারি থেকে আপাতত মুক্তির উপায় ৩টি-

১/ এন্টিভাইরাল ঔষধ আবিস্কার করা। কিংবা

২/ ভ্যাক্সিন আবিস্কার করা

এই দুটি যেহেতু নেই, তাই ৩ নং অপশন হচ্ছে-

সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকরণ ও ব্যক্তিগত হাইজিন

এন্টিভাইরাল ঔষধের কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য চেষ্টা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৫ টি ঔষধ নিয়ে ২০০০০ রোগির সম্মতি নিয়ে তাদেরকে তালিকাবদ্ধ করে তাদের উপর ট্রায়াল করছে। এখনো কোন সফলতা আসেনি কিন্তু এই ৫টি ঔষধে সফলতা না আসলেও গবেষণা চলবে এবং সফলতা আসবেই। তবে সেটি কবে তা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়।

image-250-1587042180

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে ৬০ টি বৈজ্ঞানিক দল এই ভাইরাসের ভ্যাক্সিন আবিস্কারের চেষ্টা চালাচ্ছে। চীন জানুয়ারি মাসেই এই ভাইরাসের জেনেটিক কোড আবিস্কার করে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। তারপরেই শুরু হয় গবেষণা। তবে ভ্যাক্সিন তৈরি হলেও সেটির কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা সেটি প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে। তারপরে যে বিষয়টি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সেটি হলো প্রায় ৮ বিলিয়ন মানুষের জন্য সেই ভ্যাক্সিনটি বাজারজাত করা। সেটি করতে কমপক্ষে ১২-১৮ মাস সময় লাগবে।

যেহেতু বর্তমানে আমাদের হাতে কোন এন্টিভাইরাল ঔষুধ বা ভ্যাক্সিন নেই তাই অগত্যার গতি হল- সামাজিক দুরত্ব রক্ষা করা ও ব্যক্তিগত হাইজিন বা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা। এগুলো মানলে ভাইরাস ছড়াতে পারবে না। তাই অতিমারির প্রাদুর্ভাব কমবে।

তারপরেও প্রশ্ন থাকে যাদের হচ্ছে এবং যারা সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন তাদের কি আবার কোভিড ১৯ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে? অনেক জায়গায় শোনা যাচ্ছে মানুষ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছে। নড়িয়ার ইতালিফেরত একজনের পরিবারে ৩ জনের শরীরে আবার নাকি ধরা পড়েছে করোনা। আসলে কি হয়?

উত্তরটা হচ্ছে হতে পারে, তবে এতো তাড়াতাড়ি নয়। আমাদের ভাইরাস দিয়ে জলবসন্ত বা চিকেনপক্স হয়, একবার হলে আর হয় না। কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা বছর বছর হয়। দুটোর কারন ভিন্ন। জলবসন্তের ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এন্টিবডি তৈরি করে যেটা সাধারনত আজীবন থাকে কিছু ব্যতিক্রম বাদে, তাই জলবসন্ত আর হয়না। কিন্তু ভাইরাল ফ্লু এর যে ভাইরাস তার খুব বেশি মিউটেশন হয়। অর্থাৎ আগে যা বলেছি খুব দ্রুত বাদুর থেকে মাদুর হয়ে যায়। তাই শরীরে বাদুরের জন্য তৈরি হওয়া এন্টিবডি মাদুরের বিরুদ্ধে কাজ করে না। তাই প্রতিবছর সাধারনত আমাদের ফ্লু হয়। কিন্তু কোভিড ১৯ ক্ষেত্রে চিত্রটা একটু ভিন্ন।

চাইনিজ ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স, বেইজিং এর একদল বিজ্ঞানী ৪টি রেসাস ম্যাকাক প্রজাতির বাদরের উপর পরীক্ষা চালান। এদেরকে কোভিড১৯ দ্বারা আক্রান্ত করা হলে এরা অসুস্থ হয়ে আবার ৭-১০ দিনের মাথায় সুস্থ হয়ে ওঠে। পরে আবার তাদেরকে কোভিড১৯ দিয়ে আক্রান্ত করার চেষ্টা করা হলেও তারা আর আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু তারমানে এই নয় যে এটি আজীবন আমাদের রক্ষা করবে।

অন্যান্য করোনা ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের যে এন্টিবডি তৈরি হয় সেটি স্থায়ী নয়। অন্যান্য করোনা ভাইরাস যেগুলো সাধারন সর্দি জ্বর করে সেগুলোতে ইম্যুনিটি থাকে ৩-৬ মাস, আর যেগুলোয় বেশি সমস্যা হয় যেমন MERS বা SARS করোনা ভাইরাস, এতে ইম্যুনিটি থাকে ৪-৫ বছর। তাই কোভিড ১৯ এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়ে স্থায়ী ইম্যুনিটি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

যদিও লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যলা মেডিসিন এর প্রফেসর মার্টিন হিবার্ড এর মতে কোভিড১৯ এ আজীবন স্থায়ী ইম্যুনিটি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। যেহেতু এই ভাইরাসটি নভেল বা নতুন তাই এখনো এ বিষয়ে নিশ্চিত কোন সিদ্ধান্তে বিজ্ঞানীরা আসতে পারেননি। নিশ্চিত হতে আরো প্রমান প্রয়োজন। তবে এটুকু নিশ্চিতভাবেই বলা যায় একবার সুস্থ হলে ৪-৫ বছরের মধ্যে আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ