Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে নারী প্রথম আবিষ্কার করেন করোনা ভাইরাস

বিশ্বব্যাপী এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় করোনা ভাইরাস। বিশ্বের প্রায় দুইশ দেশ এখন এই ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য লকডাউন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে মানবদেহে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হলেও এর আবিষ্কার হয়েছিল আরো অনেক আগে। ১৯৬৪ সালে একজন নারী ভাইরাসটির অস্তিত্ব প্রথমবার আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বাসচালকের কন্যা।

 

কোভিড-১৯ একটি নতুন ধরণের ভাইরাস, তবে এটি করোনা ভাইরাসের একটি প্রজাতি। ১৯৬৪ সালে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের গবেষণাগারে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছিলেন সেই নারী ভাইরোলজিস্ট ড. জুন আলমেইডা। তিনি ভাইরাস ইমেজিংয়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন, যার কাজ এখন আবার করোনা মহামারির সময় কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

 

আলমেইডা ১৯৩০ সালে জুন হার্টে জন্মগ্রহণ করেন। ১৬ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিক পড়াশুনা ছেড়ে দিতে হয় তাকে। সামান্য পড়াশোনা করেই স্কুল ছেড়ে গ্লাসগো রয়্যাল ইনফার্মারিতে হিস্টোপ্যাথলজিতে গবেষণাগার কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে পেশাগত কারণে লন্ডনে পাড়ি জমান আলমেইডা। ১৯৫৪ সালে ভেনেজুয়েলান একজন শিল্পী এনরিক আলমেইডাকে বিয়ে করেন তিনি।

 

ড. আলমেইডা পরবর্তীতে লন্ডনের পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল স্কুলে কাজ করেন, যেখানে তিনি ডক্টরেট সম্মানে ভূষিত হন। ২০০৭ সালে, ৭৭ বছর বয়সে জুন আলমেইডা মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর তের বছর পরে তিনি তার সেই পথিকৃৎ কাজের জন্য অবশেষে স্বীকৃতি পাচ্ছেন, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করছে।

 

চিকিৎসা বিষয়ক লেখক জর্জ উইন্টার বিবিসি রেডিও স্কটল্যান্ডকে জানান, এই দম্পতি এবং তাদের মেয়ে কানাডার টরেন্টো চলে যান। সেখানে অন্টারিও ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে একটি ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ড. আলমেইডা। আর সেখানেই তার অসামান্য দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। তিনি এমন একটি পদ্ধতির সূচনা করেছিলেন যা অ্যান্টিবডি সংহত করার মাধ্যমে ভাইরাসগুলি আরও পরিষ্কারভাবে দেখা সম্ভব হয়। তার এই প্রতিভার বিষয়টি যুক্তরাজ্যের মনোযোগ কাড়ে।

 

জর্জ উইন্টার জানান, ১৯৬৪ সালে লন্ডনের সেন্ট থমাস মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে কাজ করার জন্য প্রলুব্ধ করে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়। ফিরে আসার পর তিনি ডক্টর ডেভিড টাইরেলের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন, যিনি উল্টশ্যায়ারের সালসবিউরিতে সাধারণ ঠাণ্ডা নিয়ে গবেষণা করছিলেন।

 

বিবিসি খবরে বলা হয়, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর এই হাসপাতালেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল।

 

মি. উইন্টার বলছেন, ডক্টর টাইরেল স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে অনুনাসিক ধোয়ার ওপর গবেষণা করছিলেন। তাদের দল দেখতে পায় যে, তারা বেশ কয়েকটি সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস বৃদ্ধি করতে পারছিলেন, কিন্তু সবগুলো নয়। তার মধ্যে একটি বিশেষভাবে নজরে আসে। সেটির নাম দেয়া হয়েছিল বি-৮১৪, যা এসেছিল ১৯৬০ সালে সারের একটি বোর্ডিং স্কুলের একজন ছাত্রের কাজ থেকে।

 

করোনা ভাইরাস হচ্ছে অনেকগুলো ভাইরাসের একটি গোত্র যা, দেখতে অনেকটা মুকুটের মতো মনে হয়। তারা সেসব নমুনা জুন আলমেইডাকে পাঠান, যিনি নমুনার মধ্যে ভাইরাস কণা দেখতে পান। সেগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো দেখতে হলেও পুরোপুরি তা নয়। তিনি যা শনাক্ত করেছিলেন, সেটি বিশ্বে করোনাভাইরাস হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

 

মি. উইন্টার বলছেন, ড. আলমেইডা ইঁদুরের মধ্যে হেপাটাইটিস এবং মুরগির সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস তদন্ত করার সময় এর আগে এ ধরণের কণাগুলি দেখেছিলেন।

 

সূত্র: বিবিসি

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ