Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অম্বিকা-অম্বালিকা: নিপীড়িত নারীর স্বরূপ

অম্বিকা কাশীরাজের মধমা কন্যা। রাজা বিচিত্রবীর্যের প্রথমা স্ত্রী ও ধৃতরাষ্ট্রের জননী। শান্তনুর স্ত্রী সত্যবতীর নির্দেশে অম্বা ও অম্বালিকার সঙ্গে অম্বিকাকেও স্বয়ম্বর থেকে হরণ করে আনেন ভীষ্ম। বিয়ের সাত বছরের মাথায় বিচিত্রবীর্য যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়ে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায়। কিন্তু বংশ রক্ষাকারী পুত্রের জন্য সত্যবতী বিশেষভাবে উদগ্রীব হয়ে পড়ে। একসময় সত্যবতীর অনুরোধে সত্যবতীর পুত্র মহর্ষি বেদব্যাসের সঙ্গে সহবাস করে। কিন্তু সহবাসের সময় বেদব্যাসের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে তার দুই চোখ বন্ধ করে ফেলে। এজন্য তার সন্তান ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ হয়ে জন্মায়। শেষ বয়সে সত্যবতী ও ছোট বোন অম্বালিকার সঙ্গে সন্ন্যাসিনীর মতো শেষ জীবন অতিবাহিত করে অম্বিকা।

কিন্তু কাশীরাজের রাজকন্যা হলেও তাদের নিপীড়িত জীবনের চিত্রই তুলে ধরেছেন কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস। অম্বা তার প্রতিশোধ শেষপর্যন্ত নিলেও অম্বিকা এবং অম্বালিকা ভাগ্যের দোহায় দিয়ে তাদের হীনদশাকে বৈধ রূপ দিয়েছে। বিচিত্রবীর্যে শারীরিক অসুস্থতাকে উপেক্ষা করে সত্যবতীর বংশধর রক্ষার তাগিদ এবং তাকে বিয়ে দেওয়া; এ যেন নারীর প্রতি অপমান-নিপীড়নের চিত্র।

নারী জীবনের মূল্যায়ন একজন নারী হয়েও সত্যবতী দেয়নি। বিধায় অল্প বয়সে পতি হারিয়ে অন্যের সঙ্গে সহবাসে যেতে হয়েছে। কারণ রাজ ধর্ম বংশরক্ষা। নারীকে প্রতিটি যুগেই ভোগের সামগ্রী ছাড়া কিছুই ভাবা হয়নি। সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন লেখক। নারীর প্রতি হীন মানসিকতার পরিবর্তন এই একুশ শতকে এসেও ঘটেনি। নারীরা যেন আরও নিপীড়িত। ধরন পাল্টালেও নির্যাতনের চিত্রের কোনোই কমতি নেই।

অম্বিকার মতের বাইরে গিয়ে বিচিত্রবীর্যকে স্বামীরূপে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে, আবার বংশ রক্ষার ক্ষেত্রেও সত্যবতীর নির্দেশ অমান্য করতে পারেনি। কিন্তু নারীর যে চিত্র মহাভারতে অম্বিকা, অম্বালিকার মধ্যে দিয়ে ঘটেছে, তার চিত্র আজকের এই যুগেও বদলায়নি। মহাভারতের যুদ্ধে ধৃতরাষ্ট্রের সব সন্তানের নিহত হওয়া, ধৃতরাষ্ট্রের বনবাস সবমিলে অম্বিকা, অম্বালিকাদের নিজেদের পাওয়া কতটুকু? তারা কতটা পেলো?

অম্বালিকা কাশীরাজের কনিষ্ঠা কন্যা। রাজা বিচিত্রবীর্যের দ্বিতীয়া স্ত্রী ও পাণ্ডুর জননী। ভীষ্ম অম্বা, অম্বিকা, অম্বালিকাকে স্বয়ম্বরসভা হতে জয় করে আনে। কিন্তু সেখানে নারীর মতের প্রাধান্য দেওয়া পুরুষতান্ত্রের ধর্ম হয়ে ওঠেনি। বরং নারী হয়েও সত্যবতীর পুরুষের গড়ে তোলা নিয়মকে বহমান করেছে। নারীর দুঃখ নারী হয়ে বোঝার চেষ্টা করেনি। একদিকে নারী হয়ে নারীকে অসম্মান অন্যদিকে শাশুড়ি হয়ে ছেলের বউদের প্রতি নিপীড়ন দুই যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে অম্বিকা-অম্বালিকার ভাগ্যবিড়ম্বিত চিত্র দেখলে।

তাদের সবটাই যেন বিসর্জনে গেছে। প্রাপ্তি কিছু নেই। মা হয়ে সন্তানকে আগলে রাখা বা সন্তানের জন্য তাদের উৎকণ্ঠা কোনোটাই যেন লেখক দেখাতে চাননি। বরং নারী শুধু সমাজকে, পরিবারকে দুহাতে দিয়ে যাবে এই বিধানের চর্চা হয়েছে। হতভাগ্য নারীর তকমা দিলেও বলা চলে ভাগ্যকে তো নিজ উদ্যোগে পাল্টানো যায়। অম্বা যেমন প্রতিবাদী হয়েছে, এদের ক্ষেত্রে তা পরিলক্ষিত হয় না। এখন কথা হলো, অম্বার প্রতিবাদী হওয়ার পেছনে ভীষ্ম তাকে মেনে না নেওয়ার ব্যাপার কাজ করছে। কিন্তু যদি সত্যি ভীষ্মের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ না হতেন, তবে কি অম্বার এই অমিত তেজ-প্রতিশোধ আসতো? যেমন আসেনি তার বাকি দুই বোনের কারণ তারা নারী হিসেবে পতি এবং সংসারকেই মূল জ্ঞান করেছে। মহাভারতের নারী চরিত্রগুলো এতটা অবদমিত-অবহেলিত যা উপলব্ধিতে আসলে নারী জীবনটাই ভয়ের হয়ে ওঠে। নারীর লড়াইয়ের চিত্রও লেখকের বিশেষভাবে দেখানো উচিত ছিল, নিরেট সমাজের চিত্র না তুলে। তাহলে নারীরাও শক্তি-সাহস অর্জন করতো অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করে।

অনন্যা/এসএএস

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ