২৪২ বছরের পুরনো দুর্গাসাগর দিঘি!
আজকাল ইট পাথরের তৈরি উন্নয়নের ফাঁক-ফোঁকরে বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস সব যেন চাপা পড়ে যাচ্ছে। দেশের আনাচে-কানাচে কত শত নিদর্শন রয়েছে, তার সঙ্গে জরিয়ে আছে কত শত ইতিহাস। তবে সে খোঁজ দেশের মানুষের কাছে খুব একটা পৌঁছায় না৷ মানুষ ছুটির দিনগুলোতে শুধু কক্সবাজার, সাজেক ভ্যালিতেই ছুটছে। সমুদ্র দর্শন তো অনেক হলো, এবার নাহয় একটি দিঘি দর্শনের চিন্তাই করুন। এই দিঘির নামের মধ্যে আবার ‘সাগর’ শব্দটি রয়েছে। বলছি, রানি দুর্গাবতীর নামানুসারী দুর্গাসাগর’-এর কথা।
রূপসী বাংলার অন্যতম একটি অংশ বড় বড় সরোবর, দিঘি-জলাশয়। হাজার বছর ধরে আমাদের প্রকৃতি, পরিবেশ ও সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে এসব দিঘির সঙ্গে। প্রাণবন্ত সেসব দিঘির মধ্যে অন্যতম একটি দিঘি হলো, দুর্গাসাগর।
দিঘিটির মোট আয়তন ৪৫.৫৫ একর। চারপাশে চারটি ৫০ ফুটবিশিষ্ট পাকা ঘাট, মাঝ বরাবর একটি দ্বীপ দিঘিটিকে পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দিঘিটি লম্বায় এক হাজার ৯৫০ ফুট ও প্রস্থে এক হাজার ৭৫০ ফুট। এই দিঘিটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে ছুটতে হবে বরিশালে। বরিশাল নগরী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা গ্রামে দিঘিটি অবস্থিত।
এর ভেতরের সৌন্দর্য নেহাত কম নয়। প্রধান প্রবেশ গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখবেন পাশে কিছুটা জায়গাজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হরিণ। দিঘির জলে ভেসে বেড়াচ্ছে রাজহাস। পুরো এলাকাজুড়ে রয়েছে বিপুল সবুজ বৃক্ষের সমাহার। দিঘির ঘাটগুলো টাইলস দিয়ে বাঁধানো। ঘাটের সিঁড়িতে বসে আপন মনে আড্ডা দেন পর্যটকরা। এছাড়া দিঘির চারপাশজুড়ে কাঠের বা বাঁশের তৈরি মাচা রয়েছে বসার জন্য।
এছাড়াও দিঘির চারপাশে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় পর্যটকদের বসার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেঞ্চ দেওয়া হয়েছে। দিঘির ঠিক মাঝ বরাবর একটি কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা হয়েছে। দ্বীপটিকে চিত্তাকর্ষক করতে সেখানে বাঘ, সিংহ ও জিরাফের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। পিকনিক শেড ও সাংস্কৃতিক মঞ্চ করা হয়েছে দু-তিন বছর আগে। প্রতি বছরই দিঘির চারপাশে বিপুলসংখ্যক বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দিঘিটি পুনঃখনন করা হয়। ১৯৯৬ সালে এ দিঘিকে ‘দুর্গাসাগর দিঘি উন্নয়ন ও পাখির অভয়ারণ্য’ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে পরিণত করা হয়েছে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে। দিঘিটি বর্তমানে তত্ত্বাবধান করছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। দুর্গাসাগর দিঘির অভ্যন্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারপাশ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় নেওয়া হয়েছে।
এবার একটু অতীত থেকে ঘুরে আসা যাক। মাধবপাশা ছিল চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের সর্বশেষ রাজধানী। ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের তৎকালীন রাজা শিব নারায়ণ তার স্ত্রী দুর্গা রানীর নামে খনন করেন এক বিশাল জলাধার। যার নাম দেওয়া হয় ‘দুর্গাসাগর’। বর্তমানে সেই রাজ্য নেই, রাজাও নেই। তবে এখানে প্রবেশ করলে মনে হয়, দুর্গাসাগর দিঘিটি আজও জীবন্ত হয়ে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য ও রাজাদের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
অনন্যা/জেএজে