সংখ্যালঘু নারীরা কেমন আছেন, এদেশে-ওদেশে?
বাংলাদেশে যেমন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়, ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমরা। তবে দুটি ভিন্ন দেশে মানবগোষ্ঠী একই রকম আচরণ করেন নিজেদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে। একে অপরের প্রতি শত্রুর মতো আচরণ প্রকাশ তো করেই, উপরন্তু সাম্প্রদায়িকতা অনেক সময় তুঙ্গে উঠে যেতেও দেখা যায়।
প্রথমেই যে-বিষয়টি নিয়ে উগ্রপন্থী লোকেদের মধ্যে সজোরে বিদ্রূপ মন্তব্য উঠে আসে, তা হলো নারীর পোশাক। যদিও বাংলাদেশে পোশাক বিষয়ক চিত্রটি তুলনামূলকভাবে ভারতের চেয়ে কম। কিংবা অন্যান্য দেশে বোরখাকে কেন্দ্র করে যে হিঁড়িক পড়েছে, সেটা উল্লেখ করার মতো।
কেবল ভারতে নয়, বিভিন্ন দেশেই বোরখা নিয়ে অনেক জাজমেন্টাল মন্তব্য দিতে দেখা যায় অনেককেই। যেমন, বোরখা হচ্ছে জঙ্গিদের পথপ্রদর্শনের পোশাক। বোরখা মানে হাতে বোমা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইত্যাদি। এই সব মন্তব্য একজন মানুষ ব্যক্তিগত আঘাত হিসেবে নিতে পারে। কেউ কেবল তার পোশাকের জন্য একটা নির্দিষ্ট দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
একই রকম ভাবে, বাংলাদেশে বিভিন্ন সমাবেশে শাড়িকে একটি অশালীন পোশাক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ, শাড়ি বাংলাদেশের পোশাকের অন্যতম একটা পরিচয়। বাংলার শুরু থেকে শাড়ি বাঙালি নারীর পরিচয় ধারণ করে এসেছে, অথচ শাড়িকে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অশালীন বলে আখ্যা দেয়া হচ্ছে।
এমনকি, নারীদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়াকে জেনাকারী বলে প্রমাণ করতে চাইছেন, অনেক বক্তা। নারীর ঘর থেকে বের হওয়া, নারীর চাকরি করা, নারীর স্কুল-কলেজে লেখাপড়ার বিরুদ্ধে কথা বলাই যেন এই সব বক্তব্যের উদ্দেশ্য। আইন করে যতই এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হোক না কেন, বিভিন্ন গণপরিবহনে এই সব বক্তব্য অডিওবুকের মতো জনপ্রিয় হচ্ছে।
এর মানে, এক শ্রেণির মানুষ এই সব বক্তব্যকে সমাদর করছে। ভাবতে অবাক লাগে, সংখ্যাগুরুদের এ-রূপ বক্তব্য অনেক দেশেই একই রকম ভাবে সমাদৃত, এমনকি বহাল রয়েছে।
এক শ্রেণির বক্তারা বলছেন, নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু স্বামীর সেবা করা, সম্মান করা আর সন্তান প্রসবের জন্য। তারা এমনও বলে, নারীদের পড়াশোনা ততটুকু হওয়া উচিত, যতটুকু বিদ্যা অর্জন করলে সে তার স্বামীর উপার্জন করা অর্থের হিসাব রাখতে পারে।
কর্নাটকে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সংশ্লিষ্ট তরুণীকে উদ্ধেশ করে ভারতের এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী বললেন, ভারতে প্রতিবাদ না করে পারলে সে যেন আফগানিস্তানে গিয়ে প্রতিবাদ করে আসে। এই বক্তব্য কি যথেষ্ট সাম্প্রদায়িক বলে মনে হয় না!
অতএব, বোঝা যায় সংখ্যালঘুদের প্রতি যে পরিমাণ বিদ্বেষ জাতীয় মন্তব্য করা হয়, উভয় দেশে সেটা একটা সাধারণ নৈতিক আচরণের চেয়ে অনেক দূর। এ-জন্য আরো বেশি মানবিকতার চর্চা করাই কাম্য। এ-ছাড়া, সাম্প্রদায়িকতা নিপাত যেতে আরো চার শ বছরও কম বলে মনে হবে।