নারী তার শারীরিক সুস্থতা নিয়ে কতটা সচেতন
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকা অনেক জরুরি। প্রতিদিনই আসলে আমাদের অভিজ্ঞতার সঞ্চার ঘটে। তার অনেকটাই আমাদের জন্য ইতিবাচক আবার অনেকগুলো এতটাই নেতিবাচক যে আমরা হতভম্ব হয়ে পড়ি। নারীর ক্ষেত্রে সামাজিক পর্যায়ে এই সমস্যা অনেক বেশি। নারী তার মানসিক অবস্থাকে সমাজের নিয়তি কিংবা সমাজে এমনই হয় এমন স্টেরিওটাইপেই সম্ভবত ভাবে। এ নিয়ে নিশ্চিত হতে গেলে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। হতাশা-নৈরাশ্যের মেঘমালা মনে বাসা বাঁধলেও আসলে সমস্যাটিকে চিহ্নিত করে রাখতে হয়। নাহলে আটকে থাকতে হয় সেই ঝামেলায়। যেমন কর্মক্ষেত্রে কোনো সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। অথচ আপনি ভাবছেন নারী বলেই আপনার সঙ্গে এমন হচ্ছে।
আসলে মানসিক সংযোগটাও এখানে সম্পর্কযুক্ত। আবার শরীর ভালো রাখার বিষয়েও তাকে ভাবতে হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর মতে স্বাস্থ্য হল ব্যাক্তির শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক এই তিন অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয়। সুতরাং সহজ ভাষায় বলা যায় একজন মানুষের স্বাস্থ্য হল রোগবালাই মুক্ত সুস্থ শরীর ও সেই সঙ্গে ভয় হতাশা, বিষহতা, মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যের অন্যতম উপাদান হল মনের সুস্থতা বা মানসিক স্বাস্থ্য। মানুষের চিন্তা আবেগ ও আচরণ এই তিন মিলেই হল মানসিক স্বাস্থ্য। একজন মানুষ তার শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে যতটা সচেতন থাকেন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ততটা সচেতন হননা। অথচ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে তা অবশ্যই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর ভীষণ ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। আর মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসেরও আলাদা সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত খুব কম মানুষই আছেন যারা নিজের শরীরের ব্যাপারে সচেতন থাকেন। খুব বেশি অসুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসকের দারস্থ হতে চান না। আর মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে তো আরও নয়। এবার নারীদের কথাই বিবেচনা করা যাক। নারীর মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সে কতটা সচেতন এ নিয়ে সমীক্ষা হয়নি। তবে ২০১৮ সালের এক গবেষণা বলছে, জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ মানুষ মানসিক সমস্যায় ভোগেন। আর এই সংখ্যার একটি বড় অংশ নারী।
নারী সদস্যের বেলায় তো খুবই আশ্চর্যজনকই শোনায়। তারা নিজের খিদে লাগার কথাই যেখানে গুরুত্ব দেন না সেখানে মনের সুস্থতাকেই বা কতটা গুরুত্ব দেবেনা অথচ প্রতেক নারীর শরীরের যত্নের সঙ্গে সঙ্গে দরকার মনেরও যত্ন নেওয়া। আমাদের সমাজে নারীরা শারীরিক অসুস্থতা, অপর্যাপ্ত ঘুম, সাংসারিক কাজ, যৌন নির্যাতন, ইভ টিজিং, পারিবারিক নির্যাতনসহ নানা ধরনের মানসিক চাপে থাকেন। আবার মেনোপজ, গর্বকালীন বিষন্নতা, বয়ঃসন্ধিক্ষণসহ কিছু প্রাকৃতিক নিয়মের কারণেও নারীরা বিষণ্ণতা, হতাশা, কাজে অনীহাসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন। কিন্তু এটাকে অসুখ বলে গণ্য করার প্রবণতা এখনো নারীর মধ্যে তৈরি হয়নি। আবার অনেক সময় মানসিক বাদেও শারীরিক অসুস্থতাও নারীরা সেলফ প্রেসক্রাইবড ওষুধের মাধ্যমে নিরাময়ের চেষ্টা করেন। এমনটিও ঠিক নয়।
অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় মেয়েদের অসুখের কথা পরিবার তেমন আমলে নেয় না। আর যদি হয় মানসিক সমস্যা তাহলে পরিবারের সদস্যরা বদনামের ভয়ে তাকে ডাক্তারের কাছে নিতে চান না। আর নারী নিজেও তার রোগ সম্পর্কে সচেতন নন। তাদের মধ্যে রোগ লুকানোর একটি প্রবণতা থাকে। একটা বয়সে নারীর শারীরিক নানা পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এর প্রভাব পড়ে মনেও। মেনোপজের মত একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় নারীদের মাকে নানা মানসিক পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এসময় বিভিন্ন ধরনের মানসিক উল্লেক, রেগে যাওয়া এমনকি খাবারে অরুচি হতে থাকে। ছাড়াও গর্ভধারণে অক্ষমতা, গর্ভপাত, ছেলেসন্তান না হওয়া নিয়ে ভাবনা, গর্ভবতী অবস্থায় হীনম্মন্যতাবোধ, বিষন্নতা নারীর মানসিক চাপ অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়।
মানসিক সুস্থতা ও সুস্থ ভাবাবেগ পেতে নিজের যত্ন নেওয়া। প্রয়োজন। নিজের জন্য কিছুটা সময় আলাদা রাখা যেতে পারে নিজের মনের কথা শোনা বই পড়া, গান শোনা। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার কেবল শরীরকেই নয়, মনকেও ভালো রাখে। অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর ফরটি খাবার আমাদের বিষন্নতার জন্য তার জন্য মারাত্মক দায়ী। ভিটামিন বি-১২, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলোকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রত্যেক নারীকে পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খাওয়া জরুরি। শরীর ও মন সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। কারণ পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে ফলে ক্লান্তিবোধ করেন। নারীর তাই মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম জরুরি। আবার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শারীরিক ব্যায়াম খুবই জরুরি। স্ট্রেস ও বিষন্নতা কাটাতে ব্যায়াম ভীষণ কাজে আসে। ব্যায়ামের ফলে শরীরে ক্লান্তি ও মানসিক চাপ হ্রাস পায়। তাই মনকে চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যেস গড়ে তোলা সব নারীর জন্য প্রয়োজন। নিজের শখের কাজগুলি করতে পারলে মন ভালো থাকে, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। দুশ্চিন্তা মাথায় আসে না। যেমন বাগান করা, রান্না কিংবা সেলাই করা, নতুন কোনো কিছু শেখা ইত্যাদি। ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে ।আর এসব কাজের মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতাও নিশ্চিত হয়। খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে জীবনের অনেক ইতিবাচক বদল আন্য যায়। নিজের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়ে নিজের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখলে জীবনে এগিয়ে চলার সাহস পাওয়া যায়।