আত্মহত্যা নয় নারী বাঁচুক নিজের মতো
আমাদের সমাজে নারী আজও নির্যাতনের শিকার। পরিবার-সমাজ নারীর ওপর দোষ চাপিয়ে এক পৈশাচিক আনন্দ লাভ করে। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষই বিভিন্ন কারণে হতাশাগ্রস্ত! নারী-পুরুষ কেউই বাদ পড়ে না এই মহাব্যাধি থেকে! যার ফলস্বরূপ সহজ সমাধান হিসেবে আত্মহত্যাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে কেউ কেউ। তারা ভুরে যাচ্ছে, জীবন ফুলশয্যা নয়! দুঃখ-কষ্ট,পাওয়া-না পাওয়া নিয়েই জীবন। তবে আমাদের মানসিকতায় না পাওয়াটারই হিসাব হয়! ফলে ‘কী পেলাম, কী পেলাম না’ ভাবতে ভাবতে হতাশা-বিষাদে তলিয়ে যাচ্ছি আমরা। এক্ষেত্রে নারীরা বেশি হতাশায় পড়ে। আর তাদের আত্মহত্যার খবর আজকাল বেশি পাওয়া যাচ্ছে! এখন প্রশ্ন উঠছে, নারীরা কেন হতাশায় পড়লেই আত্মহত্যাকে বেছে নিচ্ছে?
সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষ হয়েছে যান্ত্রিক। ফলে মানব জীবন প্রতিনিয়ত হয়ে উঠছে জটিল-দ্বন্দ্বমুখর! মানুষের মাঝে না পাওয়ার বেদনায় তাকে জটিল করে তুলছে। সেখানে যুক্ত হচ্ছে পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র। দ্বন্দ্ব-সংকট থেকেই সৃষ্টি হতাশার! আর সেই আগুনে ঘি ঢালতে ব্যস্ত সামাজিক বিধিনিষেধ – নিয়মকানুন। ফলে মানুষের মাঝে জটিলতা আরও গাঢ় হচ্ছে! নারীদের ক্ষেত্রে বর্তমানে আত্মহত্যা প্রবণতা কম নয়! নারীরাও হতাশা-বিষাদে পড়ে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠছে। কিন্তু সমাধান খুঁজছে না!
সমস্যা থাকলে সমাধানও আছে। কিন্তু অনেক নারী সমস্যায় পড়লেই নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে! পৃথিবী থেকে মুক্তি পেতে চায়। নারীর ক্ষেত্রে পরিবার-সমাজ কোনোটাই সুস্থভাবে সমর্থন করে না তাকে। বরং প্রতিপদে কীভাবে নিচে টেনে নামানো যায় তা নিয়ে ব্যস্ত থাকা সবাই৷ নারীর জীবন কখনো ফুলশয্যা ছিল না। এখনো নেই। তাহলে কি এতদিন নারীরা বাঁচেনি, পৃথিবীর বুকে সদর্পে বিরাজ করেনি? তবে আজ কেন নারীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে?
বর্তমান সমাজটাই যান্ত্রিক জটিলতায় জটিল। ফলে সমস্যা-সংঘাতও কম নয়। সেখানে নারীকে বুদ্ধি দিয়ে পথ চলতে হবে। নিজের মঙ্গল কোনোটাতে খুঁজে বের করতে হবে! প্রাণের মূল্য অনেক। ফলে জীবনে যত সমস্যা-দ্বন্দ্ব-সংঘাত আসুক না কেন, ঘুরে দাঁড়ানোর শতভাগ চেষ্টা করতেই হবে। পরিবারও অনেক সময় নারীর স্বাধীনতা, জীবনযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আর সমাজ তো আছেই! তবে, এত কথায় গুরুত্ব না দিয়ে নিজের আত্মিক উন্নয়নের পাশাপাশি সঠিক সিদ্ধান্ত নারীকে নিতে হবে। তার জন্য কারও সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। বরং নিজেকে মানসিক বলে বলীয়ান হতে হবে।
পরিবার-সমাজে নারীকে বিভিন্নভাবে ছোট করা হয়, তার প্রাপ্যটা তাকে দেওয়া হয় না৷ ফলে নারীরা হতাশায় মুষড়ে পড়তে থাকে। বেছে নেন বিনাশের পথ। কিন্তু নারীকে মনে রাখতেই হবে, রবীন্দ্রনাথ বহু আগেই বলে গেছেন, ‘একলা চলো রে’। ফলে এই নীতিই যেন নারীর শক্তি হয়। পড়াশোনার দ্বারা, কাজের দ্বারা নিজের যোগ্যতার দ্বারা অন্যকে পরাস্ত করার ব্রতই হোক নারীর শক্তি। কেন অন্যকে পাশে থাকতেই হবে! আর কেনই বা পরিবেশ সবসময় অনুকূলেই থাকবে! প্রকৃতিতেও তো ঝড় আসে! কিন্তু একটি সময় ঝড় থামে। শান্ত হয় চারপাশ! তেমনি জীবনের জটিলতা যতই বেশি কঠিন হয়ে পড়ুক, কাটবেই।
সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সময়কে বয়ে যেতে দিলে সব শান্ত হয়, ঠাণ্ডা হয়। পালে আবারও হাওয়া লাগে। তাই পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র যতভাবেই কষ্ট দিক না কেন, সময় আসবেই। নিজের কাজটা করতে হবে। আত্মিক উন্নতি ঘটাতে হবে। হতাশ হওয়া চলবে না। আর আত্মহত্যা তো নয়ই। কেন আত্মহত্যা করবে নারীরা! কেন! জীবন একটাই তাই পূর্ণ উপভোগ না করে কখনোই জীবননাট্যের মঞ্চ কোনো মানুষই ছাড়বে না। সমস্যাসংকুল পৃথিবী, আর তা থাকবেই। নারীর জন্য আরও বেশি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বুদ্ধি দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই প্রকৃত জ্ঞানীর কাজ। নারীকেও তাই মন-মননকে প্রাধান্য দিতে হবে। কেউ করে দেয় না। নারীকে হতাশ হওয়া চলবে না। বুদ্ধি দিয়ে প্রজ্ঞা দিয়ে সামনে এগুতে হবে। আত্মহত্যাকে বিদায় জানতে হবে। ‘ভালোর পথে আলোর পথে’ চলাই হোক নারীর ব্রত।
যত সমস্যাই হোক না কেনো নারীকে মনোবল হারানো চলবে না। মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে কোন সমস্যা-সংকট চিরস্থায়ী নয়। তাই যখন সমস্যার মধ্যে দিয়ে কেউ যাপন করেন তাকে ধীর-স্থির ও ধৈর্য্য ধরতে হবে নতুবা সে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না। এ সমাজে সবাই সবার প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমানে। কেই মন থেকে অপরের ভালো কামনা করতে পারে না। ফলে নিজেকেই শক্তি রাখতে হবে। যেকোনো সমস্যাকে মোকাবেলা করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ পৃথিবীতে একলা চলো নীতির চেয়ে বড় নীতি আর কিছু হতে পারে না। সবার সঙ্গে চলাচল করলেও সবার মতো তুচ্ছ বিষয়ে গা ভাসালে চলবে না বরং ধীর বুদ্ধি দিয়ে কাজ করে যেতে হবে। নারী বাঁচুক তার নিজের মতো। সব সমস্যাকে জিইয়ে না রেখে মনোবলের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম হোক।