প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে ধর্ষণ: কঠোর শাস্তি হোক
আমাদের সমাজে আজও মেয়েরা অনিরাপদ। ঘরে-বাইরে একজন মেয়ে এতটাই অনিরাপদ যে সবসময় তাকে ভয়ে থাকতে হয়! আজকাল অভিভাবকগণও কন্যা সন্তানকে নিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা একঘরে। তাদের অবরুদ্ধ রাখা হয় নানা কারণ দেখিয়ে। তদুপরি মেয়েদের এমন অবস্থা সমাজে তাদের আরও অনিরাপদ ও রুদ্ধ করবে!
মানুষের স্বাধীন সত্তা আছে। প্রেম হোক, বিয়ে হোক ব্যক্তির হৃদয়ের সম্মতি না থাকলে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে না। কিন্তু একশ্রেণির মানুষ এগুলোকেও জোর করে আদায় করতে চায়। কিন্তু পাশবিক শক্তি দিয়ে আর যা হোক ভালোবাসা বা সংসার হয় না। এই বোধ কবে মানবজাতির মধ্যে জাগ্রত হবে! এ সমাজ আজ অবক্ষয়ের। বিবেকের তাড়না করো মধ্যে নেই। সবাই নোংরা খেলায় মেতেছে। আর নারীর প্রতি পাশবিক শক্তি খাটিয়ে তাকে জায়েজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে! অন্যয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি কারো নেই। সবাই নির্যাতন ভোগ করছে, মুখ বুজে সয়ে যাচ্ছে! এক অবরুদ্ধ সমাজে নারীর বসবাস! কবে কন্যাদের প্রতি পাশবিকতা দূর হবে! কবে নারীরা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে, নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে!
গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে দুই বন্ধু। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর মা শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) দুজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন।
শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) উপজেলার চরকামালদী গ্রামের পার্শ্ববর্তী বিলে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চরকামালদী গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে সাব্বির হোসেন এই কিশোরীকে বিভিন্ন সময়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে প্রত্যাখ্যাত হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাব্বির সুকৌশলে কিশোরীকে একটি অনুষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী বিলে নিয়ে যায়। পরে পাহারা বসিয়ে সাব্বির ও তার বন্ধু আকাশ কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে ঘটনা প্রকাশ করলে হত্যা করা হবে এমন হুমকি দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
বিষয়টি কিশোরী তার মা-বাবাকে জানালে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে এ ঘটনার বিচার চাওয়া হয়। এক সপ্তাহেও বিচার না পেয়ে শুক্রবার সকালে কিশোরীর মা সোনারগাঁ থানায় মামলা করেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দিনকে দিন এ সমাজে ধর্ষকের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে! মানবজাতির মধ্যে মানুষ হয়ে ওঠার জন্য বিবেকের কাছে, মনুষ্যত্বের কাছে দায়বদ্ধ হওয়া জরুরি। যেই সমাজে বিবেক-মনুষ্যত্ব গড়ে ওঠে না সে সমাজ পশুর চেয়েও খারাপ। পশু যখন তখন তার হিংস্র নখাঘাত দিয়ে অন্য পশুকে ধরাশায়ী করে। আজকাল মানুষও একই পন্থা অবলম্বন করছে। ক্ষমতা, শক্তি, সামর্থ্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানবিকতার উর্ধ্বে উঠে অমানুষিক কর্মযজ্ঞে লিপ্ত হচ্ছে! মানুষরূপী পশুদের পাশবিকতা দেখে কিঞ্চিৎ মনুষ্যত্ব আছে এমন মানুষ আঁতকে উঠে! তবু এ সমাজ পঁচে-গলে-নষ্ট সমাজে রূপ নিচ্ছে! স্বার্থের কাছে মনুষ্যত্ব পরাজিত! স্বার্থে অন্ধ হয়ে অন্যের মা-বোনকে শিকারে পরিণত করছে!
তুচ্ছ প্রেম নামক শব্দকে জব্দ করতে গিয়ে এই বন্ধুদ্বয় মেয়েটির যা ক্ষতি করলো তা অপূরণীয়! তা আইনের চোখে অন্যায়। মানবতার মুখ থুবড়ে পড়া৷ মানুষ হয়ে কেনো অন্যের ওপর জোর-জবরদস্তি করবে? প্রেম-সংসার-দাম্পত্য-জীবন কোনোকিছুতেই জোর-জুলুম কাম্য নয়। মানুষ হবে প্রকৃতির মতো উদার। তাতে ঝড় আসবে কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর শক্তি থাকবে। ভালোবাসবে কিন্তু ক্ষতিহীন থাকবে। যে ভালোবাসাতে ধর্ষণ করে শক্তি কায়েম করতে হয় সেখানে কোথায় মেয়েটির প্রতি ভালোবাসা! তুচ্ছ-নষ্ট কামুকতাকে আর যাই বলা যাক ভালোবাসা বলা যায় না। যেখানে সম্মান নেই, অন্যের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা নেই সেখানে ভালোবাসা নামক শব্দটিই অপমাণিত! তথ্য-প্রমাণের সাহায্যে অভিযুক্তদের কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি হোক। এত কঠিন শাস্তি হোক যাতে আর কোনো মেয়ের দিকে পুরুষ কামুক চোখ দিয়ে তাকাতে না পারে।