Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁদ মামার বয়স কত?

“আয় আয় চাঁদ মামা, টিপ দিয়ে যা” – এই ছড়াটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলে আসছে৷ চাঁদকে মামা ডাকে আট থেকে আশি সবাই। তাহলে চাঁদের বয়স কত? 

একটু জোতির্বিজ্ঞানে আসি। চাঁদ হলো, পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। যেটা ২৯.৫৩ দিনে একবার পুরো পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে। ৪.৫১ বিলিয়ন বছর আগে, মঙ্গল-গ্রহের সমান আকারের একটি বস্তু পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিলো। সেই সময়ে নবগঠিত পৃথিবী তার কমলালেবুর মতো চ্যাপ্টা আকার ধারণ করা শুরু করেছিলো মাত্র। সংঘর্ষটি, পৃথিবীর আবরণের একটি অংশ ছিড়ে ফেলে এবং এটিকে কক্ষপথে নিক্ষেপ করে, যেখানে এটি ধূলিকণা এবং পাথরের একটি বিশাল বলয়ে পরিণত হয় যা একসাথে জমাট বাঁধতে শুরু করে। জার্মান এরোস্পেস এর প্ল্যানেট সাইন্টিসট ডরিস ব্রুয়ার একটি বিবৃতিতে বলেন – “চাঁদ খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই তৈরি হয়েছিলো। সম্ভবত কয়েক হাজার বছরের মধ্যেই।”

সাইন্স এডভান্সেস এ প্রকাশিত গবেষণা পত্রে ব্রুয়ার ও তার সহকর্মীরা প্রকাশ করেছেন যে এই প্রভাবটি প্রায় ৪.৪২৫ বিলিয়ন বছর আগে ঘটেছিলো। প্রভাবের পরে, চাঁদ দেখতে অনেকটা গলিত মার্বেল পাথর বা মুস্তাফার এর মত দেখতে ছিলো। চাঁদের ম্যাগমা মহাসাগরকে কঠিন বস্তুতে পরিণত হতে ঠিক কত সময় লেগেছিলো, তা দেখার জন্য বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করেছেন। তাদের মডেলগুলি নির্দেশ করে যে, ম্যাগমা সম্পূর্ণরূপে স্ফটিক হতে ১৫০-২০০ মিলিয়ন বছর লেগেছিলো। পূর্ববর্তী মডেলগুলো পরামর্শ দিয়েছে যে, চাঁদের শক্ত-পাথুরে বহিরাবরণ তৈরি হতে মাত্র ৩৫ মিলিয়ন বছর সময় নিয়েছে। 

এই প্রভাবটি পৃথিবীর কেন্দ্রের গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু করে। নিকেল, লোহার মতো ভারী বস্তুগুলো কেন্দ্রের দিকে ডুবে যায়, যখন সিলিকেট শিলার একটি স্তর এর চারপাশে ম্যান্টেল স্তর তৈরি করে।

১৯৭০-এর দশকে, মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার (NASA) অ্যাপোলো মিশন এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিল। চাঁদের পাথরের নমুনা পৃথিবীতে এনেছিল। এগুলি বহুবার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কিন্তু এবার নতুন এক বিশ্লেষণে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে, যা অবাক করেছে বিজ্ঞানীদেরও। এতদিন যে বয়স জানা গিয়েছিল। তা ভুল বলে প্রমানিত হয়েছে। এতদিন চাঁদের বয়স অনুমান করা হয়েছিল ৪.৪২ বিলিয়ন বছর। তবে এবার নতুন মূল্যায়ন অনুসারে, চাঁদ তার বর্তমান বয়সের চেয়ে ৪০ মিলিয়ন বছর বড়। অর্থাৎ চাঁদের বয়স এখন যা মনে করা হয় তার চেয়ে ৪ কোটি বছর কমপক্ষে বেশি।

তবে আসল বয়স কত?
ফিল্ড মিউজিয়াম এবং গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এই গবেষণাটি জিওকেমিক্যাল পারস্পেকটিভ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং গবেষণার প্রধান লেখক ড. জেনিকা গ্রিয়ার এই নমুনার বিশেষত্ব নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছেন। ডক্টর গ্রিয়ার জানান, এটি এখনও পর্যন্ত পাওয়া চাঁদের সবচেয়ে প্রাচীন পাথরের নমুনা। এটি থেকে পৃথিবী সম্পর্কেও অনেক তথ্য পাওয়া যাতে পারে। চাঁদের সঠিক বয়স জানতে পারলে চাঁদের ইতিহাস এবং পৃথিবীর বিকাশ সম্পর্কেও অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যাবে।এই গবেষণায় অ্যাটম প্রোব টমোগ্রাফি নামে একটি নতুন কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। এতে লেজারের মাধ্যমে পাথরের পরমাণুগুলিকে বাষ্পীভূত করা হয় এবং তারপর নির্দিষ্ট পরমাণু পরীক্ষা করা হয়। গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিলিপ হেক জানান, চাঁদ ছাড়া পৃথিবীকে অনেকটাই আলাদা দেখাবে। তাই চাঁদ সম্পর্কে সমস্ত তথ্য বিশ্ববাসীর জানা প্রয়োজন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনও এই তত্ত্বের অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাননি। তার মধ্যে চাঁদ তৈরি হতে কত সময় লেগেছে, আর কতদিন এর অস্তিত্ব রয়েছে, এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ