Skip to content

১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজয়া দশমীর ইতিবৃত্ত

বিজয় দশমীর মাধ্যমেই দূর্গা পূজার ইতি ঘটে। এই দিনটি সবার কাছে যতটা আনন্দের ততটাই আবেগের। এই দিনটি মূলত উদযাপন করা হয় সিঁদুর খেলার মাধ্যমে। দুর্গা মায়ের জন্য আরতি করেন এবং কপাল ও পায়ের পাতায় সিঁদুর প্রদান করেন, সাথে দেবীকে মিষ্টি ও পান পাতা প্রদান করেন।এর পর নারীদের একে অপরকে কপালে সিঁদুর প্রদান করেন। তারপর তারা একে অপরের শাঁখা, পলা এবং নোয়া , যেগুলি যথাক্রমে শঙ্খ, প্রবাল ও লোহার দ্বারা নির্মিত তাতে সিঁদুর প্রদান করেন, যা বিবাহিত বাঙালি হিন্দু নারীরা পরিধান করে। তারপর তারা একে অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেয়। অবশেষে তারা প্রসাদ হিসেবে একে অপরকে মিষ্টি উপহার দেয়।

এই সিঁদুর খেলার মাধ্যমে অশুভ শক্তির থেকে রক্ষা করে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি মা দুর্গার কাছে চাওয়া। সিঁদুর খেলা তার স্বামী এবং শিশুদের সমস্ত অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করার জন্য নারীর ক্ষমতার প্রতীক। সিঁদুর খেলা রীতির মাধ্যমে, বাংলা হিন্দু নারীরা একে অপরের দীর্ঘ এবং সুখী বিবাহিত জীবন প্রার্থনা করে। প্রতিবেশীদের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং ক্ষুদ্র শত্রুতা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়

দশমীতে সিঁদুর খেলার উৎস

এই সিঁদুর খেলার উৎস আজকের নয় বহু বহু বছর আগে। ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলার উৎসের সঠিক তারিখ এবং স্থান জানা যায়নি। তবে এক তত্ত্ব অনুযায়ী, এর ঐতিহ্য প্রায় ২০০ বছর আগে জমিদারদের দুর্গা পূজায় গৃহবধূদের মধ্যে সুখী বা খুশি হওয়ার জন্য উদ্ভব করেছিল। দ্বিতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী, সিঁদুর খেলার ঐতিহ্য দুর্গা পূজার রূপে প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো। এই অনুষ্ঠানটি কেবল একটি খেলার মত উপভোগ করা হয় এবং সেহেতু এর নাম ‘সিঁদুর খেলা’। সিঁদুর খেলা বিজয়াদশমীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রীতি হিসেবে গণ্য করা হয়।
সিঁদুর খেলা , ওড়িশা, বাংলা ও বিহারের একটি হিন্দু ঐতিহ্য যেখানে দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে বিবাহিত মহিলারা একে অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

সিঁদুরের ব্যাখ্যা
কপালে সিঁদুর প্রয়োগেরও কিছু বিধি ও ফলনির্দেশ শাস্ত্র প্রদান করে। জানা যায়, তর্জনী দিয়ে সিঁদুর পরলে শান্তি পাওয়া যায়, মধ্যমা দিয়ে ধারণ করলে আয়ু বৃদ্ধি পায়। প্রাচীনকালে হলুদ গুঁড়ো দিয়ে সিঁদুর তৈরি হতো। তার পরে তাতে লাল কালি মিশিয়ে রাঙিয়ে তোলা হতো। কুঙ্কুমচর্চার কেন্দ্রবিন্দুটি হলো আজ্ঞাচক্র। এখানে সিঁদুর প্রয়োগে আত্মশক্তি বাড়ে। নারীকে ‘শক্তি’ হিসেবেই জ্ঞান করে হিন্দু পরম্পরা। কুক্কুম বা সিঁদুর তাদের আজ্ঞাচক্রে প্রদানের বিষয়টি সেই কথাটিকেই মনে করিয়ে দেয়।
তবে যুগে যুগে অনেক কিছু পরিবর্তনের পাশাপাশি সিঁদুর তৈরি করার পদার্থেও পরিবর্তন এসেছে যেমন বর্তমান সময়ে হলুদ, চুন, চন্দন ও খুব অল্প পরিমাণে পারদ ব্যবহার করে সিঁদুর তৈরি করা হয়। মূলত, লাল রংকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে পারদ। তাই সিঁথিতে একদিন সিঁদুর পরলে সেখানে জল লাগলেও দুই থেকে তিন দিন সিঁদুরটা সিঁথিতে স্থায়ী থাকে। তবে প্রাচীনকাল থেকেই সিঁদুর তৈরির মূল উপকরণ হলুদ।

সিঁদুর পরার ক্ষেত্রে কিছু সচেতনতা
সিঁদুর পরার ক্ষেত্রে কিছু সচেতনতা সবসময়ই অবলম্বন করা উচিত। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় সিঁদুরের প্রচুর পরিমাণে এলার্জি থাকে এবং সিঁদুরে থাকা রাসায়নিক পদার্থ তাদের অনেকেরই সহ্য হয় না। সেই ক্ষেত্রে সিঁদুরের জায়গায় লিকুইড সিঁদুর ব্যবহার করা উচিত।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ