Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জলবায়ু-বৈচিত্র্য: পৌষেও শীতের দেখা নেই! 

শীত এলেই মনে গান বেজে ওঠে, পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয়রে চলে আয়, আয়, আয়। কিন্তু আজকাল পৌষেও শীত দেখা যায় না। সুর্য্যিমামার তাপ তেমনটা থাকে না, কিন্তু হিম হিম ঠান্ডার এই মাসে, শীত যেন আসতেই চাইছে না। ঋতু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘ হয়ে শীতকাল ছোট হচ্ছে, বর্ষাও হচ্ছে বিঘ্নিত।

দিনে-দিনে বাড়ছে বাংলাদেশের জলবায়ুর আর্দ্রতা। কিন্তু আবহাওয়াবিদদের মতে এটি মোটেও জলবায়ু পরিবর্তনের কোনও বিষয় নয়। বিষয়টিকে বলা যেতে পারে ক্লাইমেট ভেরিয়েবিলিটি (জলবায়ুর বৈচিত্র্য)। এর মানে শীত পড়বে কিন্তু তাপমাত্রা থাকবে স্বাভাবিক। কারণ, গত প্রায় কয়েকবছর ধরেই শীত নেমেছে বিলম্বে। শীতের তীব্রতাও ছিল অনেক কম। 

আবহাওয়াবিদরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টা অনেক গভীর, এর ব্যপ্তিও অনেক। শুধু তিন, চার কিংবা পাঁচ বছরের আবহাওয়ার পরিবর্তনকে জলবায়ু পরিবর্তন বলা যাবে না। তারা বলেন, আমরা যদি দেখি আগামী বছর আমরা শীত পাচ্ছি না, তারপরের বছর পাচ্ছি না, তার পরের বছরও পাচ্ছি না, তখনই কেবল আমরা বলতে পারব, জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে।  কিন্তু একটা দুটো বছরের এই পরিবর্তনকে জলবায়ু পরিবর্তন বলা যাবে না, এটাকে শুধু  ক্লাইমেট ভেরিয়েবিলিটি হিসেবে শনাক্ত করা যাবে।

তবে গত কয়েকবছর ধরেই এই সময়টাতে যে রকম শীত থাকার কথা ছিল, সেটা থাকছে না। তাপমাত্রা অনেক বেশি। প্রতিবছর তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রিতে নেমে যায়।  ঠাণ্ডাও তীব্র থাকে। কিন্তু এ বছরসহ গত কয়েকটি বছরে সেটি দেখা যাচ্ছে না। চলতি বছরে ডিসেম্বর চলে গিয়ে জানুয়ারিও চলে যাচ্ছে। কিন্তু সে কন্ডিশন আমরা পাচ্ছি না। আর জানুয়ারির পর সাধারণত তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমে না। তারমানে আমরা শীতকে হারাতে যাচ্ছি শিগগিরই। যদিও জানুয়ারির ২০ তারিখের পরে একটা শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে, কিন্তু একটা শৈত্যপ্রবাহ দিয়েই শীতকে বিচার করা যাবে না বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদরা।  

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, ২০১২ সালে জানুয়ারি মাসে সর্বনিম্ন তাপামাত্রা ছিল  ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১৩  দশমিক ৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।তিনি বলেন, তারমানে গত কয়েকবছর ধরেই জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা বেশি ছিল। চলতি বছরেও এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। আমরা এটাকে মোটেই অস্বাভাবিক আবহাওয়া বলে মনে করছি না। তিনি বলেন,  এই উপমহাদেশের শীত নিয়ন্ত্রিত হয় সাইবেরিয়ার বাতাস থেকে। গত কয়েক বছরে সেই বাতাসের তীব্রতাও সে রকম নেই। তাই দেশেও শীতের তীব্রতা কমে যাচ্ছে। আর বাতাসের তীব্রতা না থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড বেড়ে যাওয়ায় বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে গেছে। এ কারণে উষ্ণতাও বেড়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, গত ১০০ বছরের ইতিহাসে ২০১৫ সাল ছিল উষ্ণতম বছর। গত ৫০ বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।  তাপমাত্রা ১০-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং যদি ৬ এর নিচে তাপমাত্রা হয় তাহলে সেটিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
শীতের দেখা না পাওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেছেন, মেঘমুক্ত আকাশ থাকা, উত্তর পশ্চিমের শীতল বায়ুপ্রবাহ না থাকা, বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে আবহাওয়ায় এই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
সূর্য বছরের একটি সময়ে পৃথিবীর কাছে চলে আসে আবার আরেক সময়ে দূরে চলে যায়। সূর্য দূরে অবস্থানের কারণেও শীত পড়ে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জানান, সাধারণত জুন থেকে ২১শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সূর্য বাংলাদেশের অংশে খুব কাছে চলে আসে এবং ২১শে সেপ্টেম্বর থেকে ২১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সূর্য দূরে যেতে থাকে।
দূরত্ব বাড়ার ফলে সৌর শক্তির পরিমাণ কমে আসে। দিনের ছোট হয়ে আসে রাত বড় হয়। এতে দিনে সূর্যকিরণ কম পায় রাতে বিকিরণের সময় বেশি থাকে। সে কারণে রাত ঠাণ্ডা থেকে ঠান্ডাতর হতে থাকে। 
সে হিসেবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে সাময়িকভাবে বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
সাধারণত তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রী হলে মাঝারি, তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রী হলে তীব্র এবং তাপমাত্রা চার ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে নেমে এলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।
তবে জাঁকিয়ে শীতের জন্য জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান মি. মান্নান।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ