পাহাড়ে তীব্র পানিসংকট: নারীদের ভোগান্তির অবসান হোক
বিশেষকরে আমাদের দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকাংশই পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করেন। পাহাড়ে বসবাসের ক্ষেত্রে তাদের সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি। তবু তাদের আদি পুরুষদের বংশপরম্পরাক্রমে তারা সেখানকার অধিবাসী। তবে চিম্বুক পাহাড়ের মতো জায়গায় বসবাসে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদের। মূলত নারীদের জীবন কিছুটা হলেও পুরুষদের থেকে ভিন্ন। তাদের শারীরিক নানাবিধ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করতে হয়।
পাহাড়ে তীব্র পানির সংকট তাই প্রতিটি নারীর জন্য চরম ঝুঁকির। বিশেষ করে পিরিয়ডের সময় তাদের এমন দূষিত পানি ব্যবহার করতে হয়। এর ফলে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। দিনের পর দিন এমন চলতে থাকলে পাহাড়ে বসবাসকৃত এসব নারীদের বন্ধ্যত্বের মতো নানাবিধ শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। যা থেকে মৃত্যুও ঘটতে পারে!
চিম্বুক পাহাড়ে এমন পানির সংকট নিয়ে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। যার ফলে এখনকার সাধারণ মানুষের জীবন চরম ভোগান্তিতে। তবে নারীদের জীবনে যেহেতু কিছু বিশেষ সময় পার করতে হয় এবং সেগুলো পরবর্তী জীবনের জন্য তাকে প্রস্তুত করে তোলে ফলে এসময়টা কিশোরী-তরুণী তথা নারীদের জন্য সংকটের। জেনেশুনে তারা নোংরা পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হন। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান থাকলেও তারা তা কাজে লাগাতে পারেন না। এ থেকে জরায়ুতে ক্যান্সার, যৌনাঙ্গে এবং প্রজননতন্ত্রে প্রদাহ হতে পারে। দেখা দিতে পারে আরও কঠিন কোনো সমস্যার।
পিরিয়ডের সময় নারীদের টুকরো কাপড় ব্যবহারের চল বেশ পুরোনো। বিশেষ করে আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠে এখনও গ্রামের অনেক মেয়েরা কাপড় পরিধান করে। ফলে পাহাড়ী নারীদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। তারা যখন ময়লা-নোংরা পানি ব্যবহার করবেন এবং এগুলোর ধোঁয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন তখন জীবাণু থেকেই যাবে! অর্থাৎ পানির সংকটের কারণে তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কোনটাই সম্ভব নয়। দীর্ঘ ৫-৬ কিলোমিটার গিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করার রেকর্ডও রয়েছে এসব জায়গায়। ফলে নারীদের জীবন দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে!
এলক্ষে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক অঙ্গসংগঠনের সুদৃষ্টি জরুরি। উপকূলীয় অঞ্চলে নারীদের জন্য যেমন সেনোরা থেকে ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে এখানেও তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। নারীদের সুরক্ষার স্বার্থে এগিয়ে আসুক প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি অঙ্গ-সংগঠন। যাতে নারীরা তাদের বিশেষ সময়টা অন্তত যত্নে থাকতে পারেন। এছাড়া দূর থেকে পানি সাপ্লাই দিয়ে যদি কিছুটা সংকট কাটানো যায় সে ব্যবস্থাও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গ্রহণ করতে হবে। আমরা জানি সমস্যা থাকলে তার সমাধান অবশ্যই আছে৷ হয়তো কিঞ্চিৎ কষ্টসাধ্য হতে পারে কিন্তু তা অবশ্যই আছে। তাই পাহাড়ী নারীদের জীবনকে সুরক্ষিত করতে সবার এগিয়ে আসার প্রতি মানবিক আহ্বান রইলো।