দরজিপাড়ায় পূজার আমেজ
শুরু হয়ে গিয়েছে পূজোর তোড়জোড়। পূজো আসছে, পূজো আসছে এই আনন্দের অনুভূতি নিয়ে সবাই নিজের পোশাকটি কিনতে ছুটছে। কেনই বা ছুটবে না বছরে একবার শুধু এই মনমতো কেনা কাটার করার সুবর্ণ সুযোগ মিলে। তাই যে যার পছন্দের ফ্যাশন হাউজে যায় পূজোর পোশাকের খোঁজে আর ফ্যাশন হাউজগুলোও সেই সুযোগে পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসে৷ তবে এই ফ্যাশন হাউজ গুলো ছাড়াও উৎসবমুখর পরিবেশে মেতে উঠে দর্জি পাড়া। তাই পূজোর মৌসুমে কেমন ব্যস্ততা রয়েছে দর্জিপাড়ায় তা নিয়ে আজকের খোঁজখবর।
ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে অবস্থিত মৌচাক মার্কেট। সেখানের দোতলায় গেলেই শোনা যাবে মেশিনের শব্দ কারণ সারি বেঁধে রয়েছে বেশ কয়েকটি দর্জির দোকান৷ কথা হয় দর্জি কারিগর ও মালিকের সাথে। প্রতিবারের মতো এইবারের পূজোর মৌসুমেও তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। পূজো আসার প্রায় এক মাস আগে থেকেই তাদের ব্যস্ততার দিন শুরু হয়৷ সারা বছর তারা এই উৎসবের সময় গুলোর জন্যই অপেক্ষা করে থাকেন। কারিগররা জানান পূজোর সময়টা প্রায় তাদের ঘুমহীন কাটাতে হয়৷ কারণ যতদিন তাদের পক্ষে অর্ডার নেয়া সম্ভব হয় তারা পোশাকের অর্ডার নিতে থাকেন এছাড়া তাদের বেশ কিছু নিয়মিত গ্রাহক যারা যেকোনো উৎসব আমেজে তাদের কাছে পোশাক বানাতে আসেন। হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও অন্য ধর্ম অনুসারীরাও পূজাকে কেন্দ্র করে নতুন পোশাক বানিয়ে থাকে।
এইবার পূজোয় গ্রাহকরা কেমন পোশাক বেশি বানাচ্ছে জানতে চাইলে জোনাকি টেইলার্সের কারিগর জাহিদ জানান, পূজোর সময় পোশাকের থেকেও বেশি তারা ব্লাউজের অর্ডার পেয়ে থাকেন কারণ পূজোতে পোশাকের থেকেও শাড়ির গ্রহণযোগ্যতা বেশি থাকে। সব বয়সী নারীরাই পূজোর সময় শাড়ি পরে থাকে৷
এছাড়া আবহাওয়ার জন্য অনেকেই এইবার সুতির কাপড়ের পোশাক বেছে নিচ্ছে। তাই অর্ডার আসা বেশিরভাগ পোশাকই সুতি কাপড়ের। আবার অনেকেই মসলিন ও সিল্কের মতো কাপড় দিয়েও পোশাক বানাচ্ছে৷ যেকোনো পোশাকের হাতায় সবাই থ্রী কোয়ার্টার কিংবা ঘটি হাতা চাচ্ছে, ফুল হাতার পোশাক এইবার তেমন কেউ বানাচ্ছে না। কারিগররা বলেন, একটা সময় পূজা আসলে তারা প্রচুর কারুকাজ করা পোশাকের অর্ডার পেতো, সেসব পোশাকে ব্যবহার করা হতো জরি, লেইস ও হরেক রকমের পুতি। কিন্তু এ বছর তেমন কারুকাজ করার পোশাকের অর্ডার তারা পাননি বেশিরভাগ গ্রাহকদের চাহিদা সুতি ও হালকা কাজের পোশাক৷ তবে রং এর ক্ষেত্রে সবাই উজ্জ্বল রং বেছে নিচ্ছে। যেমন, লাল, মেরুন, হলুদ, রয়েল ব্লু, সবুজ ইত্যাদি৷ তাদের কাছে অর্ডার আসার ৭০ শতাংশ পোশাকই লাল রঙের৷ সালোয়ার কামিজ থেকেও এইবার বেশি নারীদের আগ্রহের জায়গা কুর্তি। অনেকেই নিজের পছন্দের ডিজাইন দেখিয়ে কুর্তি অর্ডার দিচ্ছে। কামিজের ক্ষেত্রে লম্বা ঝুল ও উজ্জ্বল রঙের পোশাকের বেশি চাহিদা বেশি৷ পোশাকের ঘেরের ক্ষেত্রে সবার আলাদা আলাদা পছন্দ।
কেউ যায় বেশি ঘেরের পোশাক, কেউ আবার ঘের কম দিতে বলছেন৷ রেডিমেড কিনতে গেলে অনেকেই পছন্দের রং ও পছন্দের ডিজাইন খুঁজে পান না ৷ তাই তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য জায়গা দর্জি পাড়া। পোশাকের ফিটিং এর ক্ষেত্রে সবাই নিজের সাইজের থেকে দুই ইঞ্চি বেশি রাখতে বলছে কারণ ওভার সাইজ পোশাক পরার ট্রেন্ড চলছে৷ সবাই যে শুধু কুর্তি ও সালোয়ার কামিজ বানাচ্ছে তা নয় অনেকেই বেছে নিচ্ছে ভিন্নধর্মী কিছু৷ কারিগরা জানান এ বছর তারা বেশ কিছু লেহেঙ্গার অর্ডার পেয়েছে যা জামদানি কিংবা কাতান শাড়ি কাপড় কেটে তৈরি করা হয়েছে৷ শাড়ি কেটে লেহেঙ্গা বানানো এখন বেশ জনপ্রিয়৷ ঐতিহ্যবাহী সব পোশাকের বাইরে ও তারা বেশ কিছু শার্ট, স্কার্ট ও টপসের মত অর্ডারও পেয়েছে। যেকোনো পোশাকের মজুরি নির্ভর করছে তার ডিজাইনের উপর। তবে পোশাকে যেমন ধরণের ডিজাইনই দেয়া হোক না ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা গুনতেই হবে।
ডিজাইনের উপর নির্ভর করে এর মজুরি আরো বাড়বে। অনেক ধরণের ফ্যাশন হাউজ হবার পরেও উৎসবে আয়োজনে দর্জি পাড়ার কদর কখনোই কমতে দেখা যায় না। তবুও কারিগররা আক্ষেপের সুরে জানান যে এখন মানুষ অনেকটা রেডিমেড পোশাকের উপর নির্ভরশীল হচ্ছে যার ফলে কয়েক বছর আগেও তারা যেমন ব্যস্ত থাকতেন এখন সারা বছর তেমন ব্যস্ততা তাদের থাকে না৷