এশিয়ার সেরা বিজ্ঞানী বাংলাদেশি ২ নারী: আঁধার কাটুক আলোয়-আলোয়
আমাদের সমাজে নারীদের অগ্রযাত্রা সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। নারীদের এক একটি অর্জন বিশ্বের বুকে নারীদের জয়গান সূচনা করে৷ সাফল্যকে ছড়িয়ে দেয় সবার মাঝে। আমরা জানি, জাতি হিসেবে এখনো ততটা সভ্য হয়ে উঠতে পারিনি, যেখানে নারীর কাজের পূর্ণ মূল্যায়ন করা হয়৷ নারীর প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান এবং সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আজও এ সমাজে নারী মানেই অস্পৃশ্য। পুরুষ যা করতে পারে বা চায় সেটা সে অবলীলায় করতে সক্ষম হলেও নারীর ক্ষেত্রে প্রতিপদে বাধা। আর এই প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে নারী যখন তার বিজয়গাথা সূচিত করে তখন তা গর্বের, অংহকারের।
নারীর এমন অর্জন শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তা পুরো বাঙালি নারীর পথের দিশা হয়ে ওঠে। এই অবরুদ্ধ সমাজে যেকোনো নারীর সাফল্য অন্য নারীদের পথ দেখায়। তাদের মনোবল বৃদ্ধি করে। প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করতে শিক্ষা দান করে। তাইতো নারীর অর্জন এ সমাজে পথের দিশা সৃষ্টি করে।
এশিয়ার সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের দুই নারী। যেখানে পুরো বিশ্বেই নারী বিজ্ঞানীর সংখ্যা হাতেগোনা, সেখানে এই অপার সাফল্য গৌরবের। রোববার (১১ জুন ২০২৩) ‘দ্য এশিয়ান সায়েন্টিস্ট ১০০’ শিরোনামে এ তালিকা প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী এশিয়ান সায়েন্টিস্ট।
অষ্টমবারের মতো প্রকাশিত এ তালিকায় জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে হিমবাহ চক্র এবং কাঠামোগত ভূতত্ত্ব অনুসন্ধান, এমনকি মহাকাশ গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখা গবেষক ও উদ্ভাবকদের এবার বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানেই স্থান পেয়েছে বাংলাদেশি দুই নারী!
গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা পেয়েছেন বাংলাদেশের দুই নারী। তারা হলেন- গাওসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী ও সেঁজুতি সাহা।
বাংলাদেশ থেকে জায়গা পাওয়া গাওসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় (জলভূমি পরিবেশবিদ্যা) বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। গাওসিয়া বাংলাদেশের জলজ বাস্তুতন্ত্র এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতির প্রাণি সংরক্ষণে অবদানের জন্য ২০২২ সালে ওডব্লিওএসডি-এলজাইভার ফাউন্ডেশন পুরস্কার পান। এখন তিনি জলপথে প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকি বিষয়ে কাজ করছেন বলে এশিয়ান সায়েন্টিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সেঁজুতি সাহা একজন অণুজীববিজ্ঞানী। জীববিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তিনি। আণবিক জিনতত্ত্বের এই গবেষক কাজ করছেন বাংলাদেশের চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনে (সিএইচআরএফ)। সেঁজুতি সাহা ও তার প্রতিষ্ঠান সিএইচআরএফ বাংলাদেশের রোগীদের নমুনা থেকে নতুন করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস উন্মোচন করে।
‘এশিয়ান সায়েন্টিস্ট’ ওয়েবসাইটে বিজ্ঞানীদের পরিচয় এবং তাদের গবেষণার বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, হংকং, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের বিজ্ঞানী ওই ১০০ জনের তালিকায় রয়েছেন।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যেখানে নারীর বেড়ে ওঠাই রীতিমতো একটা যুদ্ধ সেখানে নারীদের এমন সাফাল্য জাতিকে আশার বাণী শোনায়। নারীদের ভেতর শক্তি সঞ্চয় করতে শিক্ষা দেয়। সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে লক্ষের দিকে এগিয়ে যেতে চাওয়া সাহস এবং মনোবল সৃষ্টি করে। নারীদের এ অর্জন কোনোভাবেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। এ অর্জন সমগ্র জাতির। এই অর্জন পুরো নারী জাতির। যেই নারীরা বাল্যবিবাহের শিকার, যৌতুক, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের শিকার সেই নারীদের কাছেও একটি বিশেষ বার্তা।
কোনোকিছু দিয়ে জীবন থামিয়ে দেওয়া যায় না। জীবন সবসময় গতি মুখর। প্রতিবন্ধকতা আসলেই তা ভেঙে পড়া নয়। নারীর পথচলার এ সাহস যোগানে নারীরাই পারে অন্যতম ভূমিকা পালন করতে। নারীদের পথ খুলুক তাদেরই অদম্য সাহস ও মনোবলের কাছে। ভেঙে পড়ুক মিথ্যা পলেস্তারা যেখানে নারীকে শোষণ করা হয়, অবরুদ্ধ করা হয়! সমগ্র জাতির মনে যে অন্ধকার, কুসংস্কার, অবরুদ্ধ দশা বিরাজমান তা অচিরেই খসে পড়ুক এই নারীদের অর্জনে। বিশ্বের বুকে সৃষ্টি করুক আপন ইতিহাস। এগিয়ে যাক নারী। এগিয়ে যাক বিশ্বের প্রতিটি অঙ্গনে। আর এভাবেই আলোক ধারায় ভরে উঠুক পৃথিবী। চিরতরে দূর হোক অন্ধকার।