বিয়ের কথা বলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: সচেতন হতে হবে নারীকেই
প্রেমকে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু আজকাল যুগের বদল ঘটেছে। প্রেমকে হাতিয়ারে পরিণত করেছে একশ্রেণির কুচক্রী মহল। নারীদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে তাদের শিকারে পরিণত করছে নানাভাবে। বর্তমানে প্রেমিক নামধারী কিছু ভণ্ড -প্রতারকের ফাঁদে অহরহ পা দিচ্ছে নারীরা। এর ফলে ব্ল্যাকমেইলিং, যৌন-নির্যাতন, ধর্ষণ, টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে।
নারীদের সরলতাকে কেন্দ্র করে এসব শ্রেণির মানুষেরা নারীর জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনছে। পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাগুলো এত বেশি দেখা যাচ্ছে। তারপরও নারীরা সচেতন হচ্ছে না। যার ফলস্বরূপ একই ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে আরেক তাদের। কথায় আছে, কেউ দেখে শেখে, কেউ ঠেকে শেখে। কিন্তু আমাদের নারীরা দেখার মাধ্যমে কিছুতেই যেন শিখতে চায় না। এরফলে নিজেদের জীবনেও একই বিপত্তি ডেকে আনছে ভুল পথে পা বাড়িয়ে।
প্রেমিককে বিশ্বাস করে নারীরা ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও যেমন শেয়ার করছে, তেমনই বিয়ের নামে ফাঁদে পা দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। আবার অনেকেই প্রতারণার দ্বারা শিকার হচ্ছে ধর্ষণের। তেমনই একটি ঘটনার শিকার হয়েছেন কুমিল্লার এক তরুণী। গত ৩০ নভেম্বর বিয়ের উদ্দেশে তরুণীকে ডেকে নেয় তার প্রেমিক। এরপর একটি উন্মুক্ত মাঠে ওই প্রেমিক ও তার বন্ধুরা মিলে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় শুক্রবার (২ নভেম্বর) দুপুরে জেলার বরুড়া থানায় অভিযোগ করে ভুক্তভোগী নারী। পরে সন্ধ্যার মধ্যেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রেমিকসহ ৫ জনকে আটক করে। পাশবিক নির্যাতনের ফলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে তরুণী। লম্পটদের হাত থেকে বাঁচতে অনেক চেষ্টা করলেও তিনি ব্যর্থ হন।
এখন কথা হলো তরুণী, কিশোরী তথা নারীদের সঙ্গে এমন ঘটনা এটাই প্রথম নয়। বরং বলা চলে পত্রিকার পাতা উল্টালে রোজ ২-৪ টা এমন ঘটনার দেখা মেলেই। তাহলে নারীরা কেন বারবার নিজেদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে? কেনোই বা সচেতন হচ্ছে না?
এখন মানুষ যন্ত্রশাসিত। যন্ত্র যেমন জীবনকে সহজ করে দিয়েছে, তেমনই কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু। মানুষের সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসহীনতা, অনাস্থা, প্রতারণার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে হাতের স্মার্ট ফোনটি। প্রযুক্তির ব্যবহারে যথেচ্ছ বিচরণের ক্ষমতা মানুষের হাতের মুঠোয়। আর এর সঙ্গে হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিয়েছে নারীর সম্ভ্রম। ভুলবশত ফাঁদে জড়িয়ে পড়লেও জীবনের ওপর ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে এসব ঘটনা। নারীদের সচেতন হওয়া আবশ্যক। নাহলে কোনভাবেই নারীদের রক্ষা করা সম্ভব নয়।
আমাদের সমাজের নারীরা যদি সচেতন না হন, তবে এই ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটবে প্রতিনিয়তই। যেমনটা আজ অবধি ঘটছে। নারীদের প্রথমত মাথায় রাখতেই হবে প্রেমিক যত বিশ্বাসীই হোক, তার প্রতি অন্ধ বিশ্বাসে মজে যাওয়া যাবে না। যখন তখন হুটহাট আস্থা এবং বিশ্বাসের বশে তার হাত ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া যাবে না। কোনো রকম আশা পেয়ে সর্বস্ব খুইয়ে দিলে চলবে না। সচেতনতাই একমাত্র নারীকে এসব বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। আর কেউ যেন ভুলের শিকার হয়ে না ওঠে, সেদিকে তাই নারীর নিজেকেই নজর দিতে হবে।