কোডিং শেখা: খুব মজার যাত্রা
গল্প ১ – সামু একদিন বসে দাবা খেলছিলো, নিজেই একা একা একবার এদিক গিয়ে নতুন চাল দিচ্ছে আবার আরেকপাশ গিয়ে নতুন চাল দিচ্ছে আর ভাবছে, আমি যদি একটি রোবট বানাতে পারতাম যে কিনা আমার সাথে খেলতে পারতো তাহলে খুব মজা হতো।
গল্প ২ – এদিক দিয়ে নাফিউ খুবই অলস, তার নিজের কোনো কাজই করতে ভালোলাগে না, একদিন দেখছে তার কাজিন নিজে একটি রোবট বানিয়েছে যার মধ্যে কিনা কোডিং একটি ভাষা ব্যবহার করেছে যা তার সকল কথা শুনে এবং সব কাজ করে দেয়, এরপরই নাফিউ সিদ্ধান্ত নিলো আমি এ ভাষা শিখে নিজের রোবট বানাব।

গল্প ৩ – অপরদিকে পুপুলের সারাদিন গেম্স্ খেলতে খুব ভালো লাগে, সে ভাবছে আর কতো অন্যের বানানো গেম খেলবো, এবার আমি বানাবো সবাই খেলবে।
উপরের এ গল্প গুলো এখন আমাদের আশেপাশে অনেক দেখা যায়, প্রতিটি শিশু এখন অনেক ভাবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার, নতুন কিছু তৈরী করার স্বপ্ন দেখে এবং এ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো কোডিং।
কোডিং কি ?
কোডিং হলো একটি ভাষা যার মাধ্যমে কম্পিউটারকে নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে। এই ভাষা নিয়ম অনুসরণ করে লেখা হয় এবং সে হিসেবে কম্পিউটার কাজ করে থাকে।
যদি উদাহরণ দিয়ে বলি, ধরুন আমরা প্রতিদিন কম্পিউটারে অনেক সফটওয়্যারে কাজ করে থাকি, আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে নির্দিষ্ট ভাবে কাজটি সুন্দর ভাবে করে দিচ্ছে কারণ আমরা আগে থেকেই কোডিং ভাষা দিয়ে তাকে শিখিয়ে রাখি কোন কমান্ড কিভাবে কাজ করতে হবে।
কোডিং কেন শিখবো ?
বিদ্যা মানুষের মূল্যবান সম্পদ এ কথা আমরা ছোট থেকেই শুনে থাকি কিন্তু, যুগের তালে তালে সে বিদ্যা এখন শুধু হাতে কলমে নেই তা এখন প্রযুক্তিতেও চলে গেছে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেয়া হলো:
লজিক্যাল চিন্তা-ভাবনার উন্নতি: কোডিং শেখার জন্য লজিক্যাল থিঙ্কিং এর প্রয়োজন হয়। এটি শিশুদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং তাদেরকে আরও ভালোভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে। ধরুন, আপনি একটি শিশু যে কিনা কোডিং করে তাকে একটি সমস্যা সমাধান করতে দিলেন সে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে নির্দিষ্ট ধাপ অনুযায়ী সমস্যাটি সমাধান করতে পারবে।
ক্রিয়েটিভিটি বৃদ্ধি: কোডিং শেখার মাধ্যমে শিশুরা তাদের কল্পনার জগৎ এবং উদ্ভাবনীকে বিভিন্ন গেম, অ্যানিমেশন, এবং অন্যান্য মজার প্রজেক্ট তৈরির মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারবে।
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি: আজকের ডিজিটাল যুগে কোডিং একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। আমাদের আশেপাশে আমরা এখন সবকিছুতেই টেকনোলজির ব্যবহার আমরা করে থাকি। কোডিং অবশ্যই শিশুদের জন্য বিভিন্ন ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে যেমন ফ্রিলেন্সিং, প্রযুক্তিতে ভালো ক্যারিয়ার, বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য স্ক্লারশিপ।
আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা: কোডিং শেখা শিশুদের জন্য খুবই আনন্দদায়ক হতে পারে। কোডিং অবশ্যই একটি মজার জিনিস কারণ এখানে নিজের লজিক দিয়ে অনেক নতুন কিছু তৈরী করা যায় যা শিশুদের নতুন কিছু শিখার জন্য আরো আগ্রহি করে তুলবে ।
কোডিং কিভাবে শিখবো ?
সহজ প্রোগ্রামিং ভাষা নির্বাচণ : শুরুটা অবশ্যই শিশুদের জন্য একটু সহজ এবং আকর্ষণীয় হওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে অনেকের পছন্দের ভাষা শুরুতে ব্লক কোডিংঃ ব্লক কোডিং হলো এমন ভাষা যেখানে নিজের লজিক দিয়ে ব্লক গুলো সাজাতে হয় এবং এর মাধ্যমে গেম, অ্যাপ তৈরী করতে পারবে। ব্লক কোডিং করার জন্য স্ক্র্যাচ (Scratch), স্ক্র্যাচ জুনিয়র(Scratch Junior), AI101, MIT App ইনভেনটোর আরো অনেক প্লাটফর্ম আছে যেখান থেকে শিশুরা শুরু করতে পারে। এ ছাড়াও কেউ যদি চায় লাইন বেসড কোডিং দিয়ে শুরু করে যে কোডিং আমরা হাতে লিখে করে থাকি সেক্ষেত্রে পাইথন দিয়ে শুরু করতে পারে , পাইথন তুলনামুলুক অন্য ভাষা থেকে সহজ।
অনুসন্ধান এবং পরীক্ষা করতে উৎসাহিত করুন : শিশুদেরকে অবশ্যই নতুন কিছু করার জন্য উৎসাহিত দিতে হবে , নতুন আইডিয়া দিয়ে নিজে কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে হবে।
শখের সাথে সম্পর্কিত করুন : ধরুন আপনার শিশু ছবি আঁকতে ভালোবাসে, তাহলে কোড ব্যবহার করে ডিজিটাল আর্ট তৈরি করতে পারেন।
মনে রাখবেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো কোডিংকে মজাদার এবং আকর্ষণীয় করে রাখা! আপনি আপনার সন্তানকে নতুন এবং মূল্যবান দক্ষতা শেখাতে সাহায্য করতে পারেন এবং সম্ভবত শেখা এবং সৃজনশীলতার জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী আবেগ জাগিয়ে তুলতে পারেন। আশা করি এই তথ্যটি আপনার সন্তানের কোডিং যাত্রা শুরু করতে সহায়তা করবে!
“চার দেয়ালের মধ্যেই সম্ভাবনার এক বিশাল কল্পনার জগত রয়েছে এবং সে জগৎকেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব কোডিং দিয়ে”