Skip to content

২২শে জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালো মেয়ে মাপবার প্যারামিটার!

মেয়েদের জোরে কথা বলতে নেই, মেয়েদের একা ঘুরতে যেতে নেই, মেয়েদের মোটরসাইকেল চালাতে নেই, মেয়েদের নিজের মতামত বলতে কিছু থাকতে হয় না, মেয়েদের এত রাগ থাকতে নেই। লোকজন কি বলবে? 

 

বন্ধুদের আড্ডায় হোক কিংবা পারিবারিক কোনো গ্যাদারিং সব জায়গায়ই শোনা যায় এই মেয়েটা ভালো, ওই মেয়েটা খারাপ। অথবা মেয়েরা আজকাল আর আগের মতো ভালোটি নেই। সবাই উচ্শৃঙ্খল হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। কেমন সেই উচ্শৃঙ্খলতা? কী করলে তাকে ভালো মেয়ে বলা যায়? কী করলেই-বা উচ্শৃঙ্খল বলা যায়? 

 

শ্রদ্ধেয় তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা অনেক রকম সংজ্ঞা দিয়েছেন, ভালো মেয়ে এবং খারাপ মেয়ের। যেমন, অনেকের কাছে ভালো মেয়ে বলতে বোঝায় তাদেরকে, যারা শরীয়ত-সম্মত পোশাক পরিধান করে। যাদের হাতের আঙুল থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত এক ছিটেফোঁটা চামড়াও দেখা যায় না। যারা একনিষ্ঠ হয়ে ধর্মকর্ম করে। আবার, অনেকের কাছে ভালো মেয়ে মানে একজন সফল গৃহিণী। সেই গৃহিণী, যার একমাত্র পরিচয় অমুকের স্ত্রী। এবং যদি  তিনি গর্বের সাথে এ-কথা স্বীকার করেন। যিনি তার জীবনের সমস্ত ভালো-মন্দ লাগা ভুলে গিয়ে নিজেকে সংসারের চার দেয়ালে নিয়োজিত করেন।  কথায় কথায় যার নিজের অধিকার নিয়ে, আশপাশে অন্যান্য মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার অভ্যাস নেই। নিজের অধিকার নিয়ে যার নিজের কোনো মাথাব্যথা নেই। যে মোটেই নারীবাদী না, অথবা যে মোটেও মানবতাবাদী না। তাকে এ সমাজ ভালো মেয়ে হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। 

 

কিন্তু যে মেয়েটি নিজের অধিকার নিয়ে সচেতন, সমাজকর্মী হিসেবে নিজের আত্মপ্রকাশ করেছে, তাকে কদর করার লোক কই? 

 

অথবা ধরাই যাক, একটা মেয়ে ধূমপান করে, হাতাকাটা ব্লাউজ পরে, গর্জন করে কথা বলে আর অন্যায় সহ্য করার বদলে প্রতিবাদ করে, সে কখনো কারো কোনো ক্ষতি করেনি, গরিব মানুষের দুঃখ বোঝে, তার জন্য অনেক দরিদ্র এলাকায় মেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে, আত্মনির্ভরশীল হয়ে বড় হতে শিখেছে। 

 

এই বিচার করার প্রবণতার জন্য, অনেকে নিজের পছন্দের কাজগুলো করার অনুমতি পরিবার থেকেও পায় না। যার গান গাইতে ভালো লাগে না, সে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। যার ছবি আঁকতে ভালো লাগে, সে নিজের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে দেয়। যার ইচ্ছা ছিল দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো, তার বিয়ের পর হাত-পা ঘরের সাথে লেপটে যায়। কারণ, লোকজন কী বলবে? 

 

কিন্তু এই পারিপার্শিকতা একটা প্যারামিটার তৈরি করেছে সর্বস্তরের মানুষকে বিচার করার জন্য। কিন্তু ভালো মেয়ে মাপবার প্যারামিটার কী? কারাই-বা এই প্যারামিটার তৈরি করে দিয়েছে, সে-বিষয়ে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না। 

 

কোনো ঘুমকাতুরে প্রাচীন গ্রিক দেবতা হয়তো ঘুমের ঘোরে কখনো বলে ফেলেছেন। কে জানে! কিন্তু ফিলসফি বা দর্শনশাস্ত্রে কিন্তু খারাপ-ভালো বিবেচনা করার জায়গা খুব একটা ছিলো না। দর্শনের মতে, ভালো-খারাপ বলে পরম কোনো কিছু হয় না। একেকজনের কাছে ভালো-মন্দ ভিন্ন রকম মানে দাঁড় করায়। তাহলে নারীরা কী-এমন করল যে, তাদেরকে একটা পক্ষাঘাতে ফেলে দিতে হলো! 

 

কেন ফেলে দিতে হলো, সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হলে খুব সম্ভবত নিরপেক্ষ মতবাদ দেয়াটা অনেক কঠিন হয়ে যায়।কাউকে নির্দোষ বলে গণ্য করাও যায় না, আবার নির্দিষ্ট কোনো জাতি বা গোষ্ঠীকেও দোষী বলা যায় না। কারণ, নারীকে বিচার করার প্রবণতা সবারই আছে। একজন নারী পর্যন্ত আরেকজন নারীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য সব সময় প্রস্তুত। 

 

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ