ঈদ হোক ধনি-গরিব সবার জন্য আনন্দের
ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠা। কিন্তু সেই ঈদ যদি কিছু মানুষের বিলাসিতার কারণে সাধারণ মানুষের মনে দুঃখ দেয়, তাহলে সেখানে আর আনন্দ আর থাকে না। হয়ে ওঠে বিষাদময়।
আমাদের দেশে দেখা যায়, ঈদ এলেই ধনী-গরিবের জীবনের চিত্র পাল্টে যায়। ধনীর জন্য ঈদ সবসময় স্পেশাল কিছু। কিন্তু একজন দরিদ্র ভ্যানচালক, দিনমজুর, কৃষক শ্রেণির জন্য হয়ে ওঠে কষ্টের দিন। তবে, সেটা শুধু ঈদের দিনের বিষয়ই নয়, বরং ঈদকে কেন্দ্র করে এর আগের বেশ কয়েকদিন।
ঈদে এলে সমাজের অসচ্ছল ব্যক্তিরা পড়েন দুর্বিপাকে। যেহেতু ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি ঈদকে কেন্দ্র করে কেনাকাটা, বেড়াতে যাওয়া নিয়ে উৎসুক থাকে, সেখানে দরিদ্র শ্রেণি ঘরে বসে ক্ষুধার তাড়নায় দিন পার করে। ভালো মতো পেট পুরে যারা দুমুঠো ভাত মুখে তুলতে পারেন না, তারা ঈদ এলে পড়েন আরও বিপাকে। সন্তানকে চাহিদামতো ঈদের পোশাক দিতে পারেন না, এমনকি খাবারও। ফলে তাদের হৃদয়ে শুরু হয় রক্তক্ষরণ।
এ সময় শপিংমলগুলো যে ঝলমলে আলোয় সাজে, তা শুধু বাইরে থেকে দেখা ছাড়া গতি নেই হতদরিদ্র শ্রেণির! তাদের জীবনে এই সময় হাহাকার সৃষ্টি হয়! তারা আর্থিক সংকটকে কাটাতে পারেন না বলে তৈরি হয় আরও জটিলতা।
দুনিয়া টাকার বশ। সেই টাকা না থাকলে জীবনে প্রায় কিছুই অর্জন হয় না। ঈদকেন্দ্রিক শপিং মলগুলো ধনীর কেনাকাটা ও দরিদ্র শ্রেণির চেয়ে থাকার ভেতর য়ে শ্রেণি-বৈষম্য তৈরি হয়, তা অমানবিক পর্যায়ের!
ঈদকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক বৈষম্যের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও হেনস্তা হতে হয় দরিদ্রদের। স্ব-স্ব শ্রেণির বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই; এমনকি ঈদের যে স্বাভাবিক আনন্দ—একজন আরেকজনের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া; তা থেকেও নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হয় তাদের। কারণ নিজের বাড়িতে খাবার নেই, সন্তানকে নতুন পোশাক দিতে পারেননি, সুতরাং আনন্দ তাদের জন্য নয়। কারও বাড়িতে ঈদের আনন্দ ভাগ করতে গেলেও সেখান থেকে উল্টো দুঃখ পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ঈদ দরিদ্রদের জন্য আনন্দ নয়, কষ্ট বয়ে আনে।
অর্থনৈতিক, সামাজিক গণ্ডি পেরিয়ে ধর্মীয়ভাবেও দরিদ্ররা বৈষম্যের শিকার হন। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে জাকাত দেওয়ার যে বিধান ধনীরা সেই হক সঠিকভাবে পালন করেন না। বরং ঈদের সাজসজ্জাকে কেন্দ্র করে আভিজাত্যের অহং দেখান। এর ফলে ঈদ ধনিক শ্রেণির জন্য আনন্দের হয়ে ওঠে। কিন্তু দরিদ্রের জন্য হয়ে ওঠে বেদনার। এতে ঈদের সর্বজনীন আনন্দকে ম্লান করে দেয়। তাই সমাজপতি, ধনিকশ্রেণির উচিত—ঈদকে কেন্দ্র করে সামাজিক বৈষম্য যেন প্রকট আকার ধারণ না করে, সে ব্যাপারে প্রয়োজন পদক্ষেপ নেওয়া।
সমাজের মূল অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি যারা, তারা যদি সঠিক উদ্যোগ নেন, তাহলে অন্তত ঈদের দিন সবার মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব। এজন্য প্রথমেই অবস্থাপন্নদের দেওয়া জাকাতে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ঈদকে কেন্দ্র করে একটি ফান্ড তৈরি করা যেতে পারে। যেই ফান্ডের আওতায় অসচ্ছল ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে তাদের মধ্যে বণ্টন করা যেতে পারে। এভাবে ঈদের আনন্দকে সর্বজনীন করে তোলা সম্ভব। এজন্য অবশ্যই সমাজের অবস্থা-সম্পন্নদের এগিয়ে আসতে হবে—রাখতে হবে ভূমিকা। তবেই ঈদ হয়ে উঠবে সর্বজনীন আনন্দের উৎসব। অর্থাৎ সবার পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মাধ্যমেই ঈদ হয়ে উঠতে পারে সর্বজনীন, ধনী-দরিদ্র সবার সমান আনন্দের দিন।
অনন্যা/এআই