সম্পর্কের নীল উষ্ণতায় কোবাল্ট ব্লু
সমকামীতাকে আশ্রয় করে অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু কোবাল্ট ব্লু যেন একটু ভিন্নভাবে বিষয়টিকে ব্যবহার করেছে। ঠিক নামের মতোই পুরো মুভিটিই যেন একটি পূর্নাঙ্গ কবিতা। কোবাল্ট ব্লু যৌনানুভূতি বা যৌন সচেতনতার বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি। বরং প্রথম প্রেমের বৈচিত্র্যকে আশ্রয় করে গড়ে তুলেছে এক সুন্দর জগত। তবু কোবাল্ট ব্লু আমাদের এক ভয়ংকর স্পর্শকাতর সম্পর্কের কথা জানায়-এমন সম্পর্ক যা কিনা গোপনে গড়ে ওঠে, একে অপরের সাথে রাতের আঁধারে আলোচনার মাধ্যমে গড়ে তোলা যায়।
শচীন কুন্ডলকারের ফিল্মটি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথেই যেন সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করে। গল্পটি সাধারণ। গল্পের মূল চরিত্র তনয় সাহিত্যে বুদ হয়ে সময় কাটাচ্ছে। সাধারণ একটি জীবন। এমন সময়ে এক নামহীন লোকের প্রেমে পড়ে যাওয়া। লোকটি নাকি একজন শিল্পী। মূলত শচীন কুন্ডলকারের উপন্যাসের উপর ভিত্তি করেই মুভিটি নির্মিত। দুই ভাই বোন তনয় আর অনুজা একই ব্যক্তির প্রেমে পড়ে।
অনেকেই অবশ্য অভিযোগ করেন বইটির মধ্যে থাকা অনুভূতির গভীরতা এই ফিল্মে অনেকটাই অনুপস্থিত। এক ভগ্ন হৃদয় পুরুষের দৃষ্টিতে দেখা প্রথম প্রেমের গল্প শোনার অভিজ্ঞতায় অনুভূতির গভীরতার অভাব অনেককেই হতাশ করেছে। সে যাই হোক, গল্প বলার ক্ষেত্রে অবশ্য মুভিটি নিজেকে ঠিকঠাক ধরে রাখতে পেরেছে।
একদম প্রথম থেকেই আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি তনয়ের এই প্রেমে পড়ার বিষয়টি আসলে ভুল। আবার যখন দুজনের মধ্যে দূরত্ব চলে আসে তখন আমরা একটি সুন্দর সম্পর্কের ছেদে মন খারাপ করি। তবে হ্যাঁ, বিশ্বাসঘাতকতার গল্প এখানে আসে। কিন্তু বইয়ের মতো রাগের অনুভূতি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেনা।
মজার ব্যাপার হলো কোবাল্ট ব্লু যেন সম্পর্কের দিকেই বেশি আগ্রহী। তাই সামাজিক বিধিনিষেধ বা সামাজিক বাধার বিষয়টি একেবারেই উপস্থিত ছিলোনা। যেন দুজনই দুজনের নির্মাণ করা জগতে অবস্থান করছে। তনয়ের বাবা মা থেকে দুজনই বিষয়টি গোপন রাখে। তাদের অভিসার হয় খোলা মাঠে। দুজনের এই সাহসিক কার্যক্রম এমন এক দেশে যেখানে সমকামীতা অনেকটা পাপ বলেই মেনে নেয় অনেকে।
মজার ব্যাপার হলো, এই গল্পটিকে দর্শকের কাছে তুলে ধরার প্রক্রিয়ায়। তনয়ের এই গোপন গল্প আর কাকেই বা সে বলতে পারে? মানুষ বা পরিচিত কাউকে? অবশ্যই না। তনয় বরং পুকুরে থাকা কচ্ছপ পাবলোকে গল্প বলে। তার নিজের প্রথম প্রেমিক থেকে শুরু করে প্রথম কবিতার বই প্রকাশের এই গল্প। মজার ব্যাপার হলো এই কচ্ছপকে আমরা ঠিক দেখতে পাইনা। অনেকটা সেই নামহীন প্রেমিক আর এই অদৃশ্য কচ্ছপের যে সমান্তরাল গল্পটিতে আসে, তা গভীর গোপনেরই সংকেত দেয়।
যার ‘কল মি বাই ইয়োর নেম’ দেখেছেন তারা হয়তো এই মুভির সাথে অনেকটাই তুলনা করে বসবেন। তনয় তার প্রথম বই উৎসর্গ করে ওই নামহীন পুকুরপাড়ের লোকটিকে। মজার বিষয় হলো মুভিতে নীল রঙের ব্যবহার। কোবাল্ট ব্লু – যা কিনা মনে করিয়ে দেয় নীল সবচেয়ে উষ্ণ রঙ। আবার নীল মানে বেদনা।
পুরো গল্প যেন কাব্যিকভাবেই এগিয়ে চলে। সামনে কি হবে বা গল্পে কি হচ্ছে তা নিয়ে যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং কোবাল্ট ব্লু বলে সম্পর্কের অনুভূতিই ছড়িয়ে দেয়া যাক এবার।
অনন্যা/ এআই