Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সম্পর্ক-প্রেম-বিয়ে: অতপর…

অধিকাংশ পুরুষ নারীর বাহ্যিক রূপ দেখে প্রেমে পড়ে। এর মধ্যে কিছু সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। নারীরা পুরুষের দেখে ক্যারিয়ার। বিসিএস ক্যাডার হলো বাংলাদেশের পাত্র নির্বাচনের সর্ব্বোচ মাপকাঠি। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, ক্যাপটেন, মেজর উচ্চ পদস্থ পাত্র দেখে বা নারী নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করে সংসার শুরু করে।

কেউ কেউ সরকারি কলেজের প্রভাষকদের পছন্দের তালিকায় রাখে। এখন যুগের পরিবর্তন হয়ে গেছে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে আত্মনিয়োগ করছে। সেখানে অনেক পুরুষ চায়, নারীটি তার ঘরের বউ হয়ে থাকুক। পুরুষদের আয় বেশি হলে বলে, নারীর চাকরি করার দরকার নেই। নারীকে বাচ্চা-সংসার দেখতে হবে। সেটা নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চ বিত্তের মধ্যেও দেখা যায়। তারপরও কেন সম্পর্ক টিকে থাকে না?

নারীদের কেউ কেউ পুরুষদের আর্থিক সামর্থ্য দেখে। কিন্তু টাকার বিছানায় শুয়েও পর পুরুষের স্বপ্নে বিভোর হয়। কেউ কেউ ড্রাইভার-পিয়নের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েও বিয়ে করে। পুরুষরা কাজের বুয়ার বিছানায় যায়।

স্ত্রীর বাচ্চা হওয়ার সময় তার যত্ন না নিয়ে অন্য নারীর প্রতি বেশিরভাগ পুরুষদের আগ্রহ বেড়ে যায়। সন্তানের জন্য বউ ৯ মাস ধরে কষ্ট করে, আর স্বামী যৌনচাহিদা মেটানোর জন্য পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। কিছু নারী-পুরুষ একের পর এক প্রেমে পড়ে, আর ব্রেকআপ করে। ধৈর্য, সহনশীলতা কারও মধ্যেই নেই। দুজনের মধ্যে যে গাঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠবে, তার জন্য সময় দেয় না।

আবার কেউ কেউ একের পর এক বিয়ের সম্পর্কে যায়, বাচ্চা জন্ম দিয়ে সেখান থেকে সরে পড়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অপুর সঙ্গে যে বিয়ে হয়েছিল, কিং খান শাকিব সেই খবর গোপন রেখেছিলেন ৯ বছর। জয়ের জন্ম হয়। এরপর তাদের ডিভোর্স হয়। আবার বুবলিকে বিয়ে করেন। সেখানেও বাচ্চার জন্ম হয়।

আবার মৌসুমি-ওমর সানীর সংসার ২৭ বছর ধরে টিকে আছে। এরকম বিপাশা-তৌকির আহমেদ, মৌ-জাহিদ হাসানের সংসার টিকে আছে বছরের পর বছর।। এরকম আরও উদাহরণ আছে বাংলাদেশ ও ভারতের নায়ক-নায়িকাদের জীবনে।

বিয়ের পর থেকে রাজের কত প্রশংসা করতো পরীমণি। ছেলের নাম রেখেছে তার স্বামীর নামের সঙ্গে মিল রেখেই। বাচ্চা পেটে থাকতে মুরগীর মাংস, খিচুড়ি রান্না করে দিয়েছে পরীমণির জন্য। বাচ্চার জন্ম, জন্মদিন পালনে ভিডিওগুলো দেখে খুব ভালো লাগতো। সব দেখে একটা সুখী সম্পর্কের ছবি চোখে ভাসতো। কিছুদিন আগে মীমের সঙ্গে গভীর রাতে ফোনালাপের বিষয় নিয়ে পরী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের আপত্তির কথা জানায়।

এখন প্রশ্ন হলো, এমন প্রেমের বিয়ের পরও সংসার কেন টিকছে না? তাদের সংসার না টেকার পেছনে কারণ হলো, তারা একদিকে অতি মাত্রায় সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা চায়, অন্যদিকে একজন আরেকজনের পেশাগত বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন তারা দুটি বিষয়ের মধ্যে সমঝোতা করতে পারে না। তখন মনে করে সংসার ছাড়লে তারা ভালো থাকবে। ক্যারিয়ারে আরও বেশি উন্নতি সম্ভব হবে।

সমাজ সুস্থ সম্পর্কের জন্য যত্নবান হচ্ছে না কেন? সবাই যে যার মতো চলছে। নিজের মতো সংসার কুক্ষিগত করার রাজ কৌশল রপ্ত করছে। নারী তার স্বামীকে আটকে রাখতে চাইছে নিজ গণ্ডিতে। স্বামী তার স্ত্রীকে বলছে, ‘বন্ধু থাকবে না’। কিন্তু নিজে বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরছে। সন্তানরা বড় হলে আলাদা ঘরে যখন পুরুষরা থাকে, তখন আরেক নারীকে গভীর রাতে সঙ্গী করতে চায় অনলাইনে।

আমরা সংসার-বিচ্ছিন্ন হয়ে আরেক জগতে ঢুকে পড়ছি। কেউ কেউ অফিসের বস, কলিগের সঙ্গে ভ্রমণ করছে সমুদ্র সৈকতে কোনো উপকারের আশায়। প্রমোশনের জন্য বসের শয্যাগত হচ্ছে। নারীদের বিভিন্ন চাকরির অফার দিয়ে তাদের সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে কেউ কেউ। নারী-পুরুষরা দৈহিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে অবাধে মেলামেশা করছে। যখন কারও স্বার্থে আঘাত লাগছে, তখনই তারা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। কেউ চায় ছেড়ে দিতে, আবার কেউ চায় আঁকড়ে ধরতে। আবার দুজনই চায় রিলেশন থেকে বেরিয়ে আসতে। তারপর ঘটছে নানা রকম হত্যা বা আত্মহত্যা। যখন মানুষ ভুল করে, তখন বুঝতে পারে না কী করছে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসার পর মানুষের যতটা না পজিটিভ কাজ সম্পাদন হয়েছে, তার চেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ প্রযুক্তির এই যুগে সবার হাতেই স্মার্ট ফোন। একজনের সঙ্গে আরেকজনের ঝগড়া হচ্ছে, পরক্ষণেই তার শূন্যতা কাটাতে আরেকজনের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে।

ঘর ভাঙছে, সন্তান ভুগছে হতাশায়। ডুবছে নেশায়। নারী-পুরুষও হতাশাগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছে। কোনো কোনো নারী-পুরুষ নিজের জীবন ধারণের জন্য আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সম্পর্কে জড়াচ্ছে। তারপর মনোমালিন্য হয়ে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসছে। সম্পর্ক ভঙ্গের কারণে একে অন্যকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি নষ্ট করে দিচ্ছে। খুন করছে নিজের গোপন অভিসারের কথা প্রকাশ পেলে।

এই সংকট থেকে মুক্তির উপায় বের করতে হবে। দেখতে হবে, সমস্যা যদি গুরুতর হয়, তখন একজন অন্যজনের চোখে বিষ না হয়ে সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে নতুনভাবে জীবনকে গুছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

জীবনের ভাঁজে ভাঁজে যে গল্প লুকিয়ে থাকে, তা কখনই পুরোটা প্রকাশ করা যায় না। গল্পের নায়ক-নায়িকারা সময়ের ব্যবধানে কেউ কেউ ছিটকে পড়ে যায়। নতুন করে কাহিনি রচিত হয়। সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমঝোতাই হয়তো চাবিকাঠি। যে যত ছাড় দেবে, তার সম্পর্ক ততদিন স্থায়ী হবে। কিন্তু নিজের আত্মসম্মান রক্ষা করতে গেলে অনেক সময় সে সম্পর্ক রক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না; সেই বিষয়টিও ভুলে গেলে চলবে না।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ