শিশুদের জন্য ‘শৈশব’
শৈশব শব্দটির সঙ্গে শুধু শিশু নয় তার চারপাশের পরিবেশ, সক্ষমতা, বিকাশের সম্ভাবনা, বিকশিত হওয়ার পথসহ আরও অনেক কিছুই জড়িয়ে থাকে। শৈশবের সোনালি দিনগুলো রাঙিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে চাবিকাঠি হিসেবে অভিভাবকের উপস্থিতি মূল্যবান। নাগরিক জীবন আর যাপিত জীবনের ব্যস্ততায় প্যারেন্টিং ক্রমেই জটিল হয়ে উঠতে শুরু করছে। বোবা বাক্সে বন্দি থাকা শিশু তার স্বর্ণালি সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গই হারাতে বসেছে।
শিশু বাঁচে তার প্রাণোচ্ছ্বল হাসিতে। তার হাসির উৎস খেলাধুলা। সেজন্যেই তো খেলার ছলে, গল্পে গল্পে, ছন্দে ছন্দে তাদের বেড়ে ওঠা। অথচ নাগরিক ব্যস্ততা আর বদ্ধতার নাগপাশে মাথার ওপর চড়ুইয়ের আঁকাবাঁকা আকাশের দিকে শিশুকে তাকানোর উপলক্ষ করে দেওয়ার সুযোগটি অভিভাবকরা হারিয়ে ফেলেন। তবে যেখানে রুদ্ধদ্বার থাকে সেখানে মুক্তপ্রাণের আবির্ভাব ঘটেই। ঠিক যেমনটি করছে ‘শৈশব’। শৈশবের ওয়েবসাইট ঘুরতে গেলে চোখে পড়বে এক মূল্যবান সত্য, ‘এ প্লাটফর্ম ফর প্যারেন্ট অ্যান্ড চিলড্রেন অ্যাওয়ারনেস।’ রাজধানীর ভেতর শিশুর স্পন্দন জাগানোর লক্ষ্যে ২ থেকে ৮ বছর বয়সের শিশু ও তাদের অভিভাবকদের জন্য একটি লার্নিং সেন্টার বলে পরিচিত এই সংস্থাটি নাগরিক যান্ত্রিকতার মধ্যে অভিভাবকদের যেমন পথ দেখাচ্ছে তেমনি শিশুর বিকাশের জগতকে মুক্তপ্রাণের সমতল মাঠে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টায় রত।
প্যারেন্টিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে সন্তানের শৈশবের মুহূর্তকে আরও প্রাণবন্ত করা। সেই সময় কাটানোর মুহূর্তেই ‘শৈশব’ নামক এক সংস্থার ভাবনা আসে ফারহানা মান্নানের মনে। নিজের দুই মেয়েকে নিয়ে খেলতে খেলতে আচমকা এক উপলব্ধিকে বৃহত্তর পরিসরে নিয়ে আসার দূরদৃষ্টি থাকে কজনার! এই খেলার মাধ্যমেই শিশুকে জানা ও বোঝা। কখনও বই পড়া, পাজল নিয়ে খেলা অথবা কথা-একই সময়ে আর্লি চাইল্ডহুড নিয়ে পড়াশোনার বদৌলতে বুঝতে পারলেন, শিশুর সঙ্গে সঠিক যোগাযোগের একটিই উপায়, খেলা। আর শিশুর সঙ্গে খেলার বিষয়টি যতই ছেলেমানুষি ও সরল হয়ে থাকুক না কেন, সেই পরিবেশ গড়ে তোলা চাট্টিখানি কথা নয়। খেলার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা আবার সেখানে পরিকল্পনার ছকও বুনতে হয়। নাগরিক জীবন আমাদের সীমাবদ্ধ করে তুলেছে। তাই পরিকল্পনা থাকাটা বাঞ্ছনীয়।
সব শিশুর বিকাশ সমভাবে হয়না। কেউ আস্তে শেখে, কেউ কথা বলে দেরিতে, কারও মনের জগতের দিশা পাওয়া কঠিন। সঠিক প্যারেন্টিং এর জন্য অসংখ্য ভাবনার বাস্তবায়ন সম্ভব খেলার মাধ্যমে। ঠিক তিন বছর আগে এই সচেতনতা জাগানোর লক্ষেই মিরপুর সালিব লাইব্রেরিতে শুরু ‘শৈশব’-এর কার্যক্রম। সেই ভাবনার শেকড় ডালপালা মেলতে মেলতে ছড়িয়ে পড়ে আরও ব্যাপক স্তরে। শিক্ষা আমাদের দেশের জন্য কত বড় হাতিয়ার তা হয়তো আমরাই বুঝে উঠতে পারিনা। সন্তান বড় হয় আর এক অস্বস্তিকর কাঠামোতে বড় হতে থাকে। শিশুর বিকাশ মনোবিজ্ঞান কিংবা শরীরচর্চায় শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই শৈশবের এগিয়ে চলা। শুরু থেকেই ‘শৈশব’ এর কার্যক্রম অভিভাবকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুরু করে। এক বিরাট মঞ্চ হুট করে অভিভাবকরা পেয়ে যান। দৌড়ে আসেন, প্রকাশ করেন কিভাবে মঞ্চস্থ করবেন শিশুকে।
ফারহানা মান্নানও নিজের অভিজ্ঞতা, জানার পরিধি থেকে সেই মঞ্চটিকে আকৃতি দিলেন। একটি সহজ প্লাটফর্মে সাজিয়ে ফেললেন। ‘শৈশব’ লার্নিং সেন্টারে শিশুর খেলাধুলার এবং সর্বক্ষণ সক্রিয় থাকার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতেই খেলার সরঞ্জাম, মাঠ, উপকরণ দিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে তুললেন। তবে তা শিশুর জন্য সামান্য ডে কেয়ার হয়ে উঠেনি। বরঞ্চ শিশুর অভিভাবকরাও যেন সচেতন হয়ে উঠতে পারেন সেই চেষ্টাতেও কমতি ছিল না।
এগিয়ে চলেছে ‘শৈশব’ দুর্বার গতিতে। যদিও নানা সমস্যা রয়ে গেছে এই কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করে তুলতে। সেসব নিয়েও তো পরিকল্পনার অভাব নেই। তবু শহরে শিশু যেন হারায় না শৈশব। হোক না মঞ্চ, সেখানে অভিভাবক ও শিশু কাটাক আনন্দের সঙ্গে। শিশু শিখুক, খুঁজে নিক তার বিকাশের পথ।
অনন্যা/এআই