Skip to content

৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরীদের প্রতি যত্নশীল হোন

বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীরা নানামাত্রিক জটিলতার মধ্যে দিয়ে সময় অতিক্রম করে। একদিকে শারীরিক পরিবর্তন অন্যদিকে মানসিকভাবেও তারা নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। কিশোরী বয়সের সীমা এমন থাকে যে তারা এসময় উভয়সংকটে পড়ে যায় জীবন নিয়ে। তাদের মধ্যে নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের প্রতি কৌতূহল জন্মে।

নতুনের প্রতি আগ্রহ এতই প্রবল হয়ে পড়ে যে, তারা নিজেদের নতুন নতুন স্বপ্ন-বাসনা, আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে পরিচালিত করতে থাকে। এই পর্যায়ে তাদের আবেগ এত উচ্চমাত্রায় থাকে যে, জীবনের জন্য কোনটি সঠিক সেটাও তারা চিহ্নিত করতে পারে না। ফলে বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, কিশোরীরা ভুল পথে পা বাড়ায়। জীবনকে ভালোভাবে না বুঝেই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলে। আর এর ফলে ঘটে যেতে পারে যেকোনো ধরনের বড় রকমের দুর্ঘটনা।

বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীরা যে সময় পার করে সেখানে যুক্ত হয় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। বর্তমানে ইন্টারনেটের বদৌলতে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানাবিধ সমস্যার। কিশোর-কিশোরীর হাতে স্মার্ট ফোন অ্যাভেলেবল। ফলে তারা চেনাজানা না হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করছে সহজেই। শুধু বন্ধু তৈরি করেই ক্ষান্ত থাকছে না। জড়িয়ে পড়ছে সম্পর্কেও। আর এর ফলে একসময় তারা ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও শেয়ার করতেও দ্বিধা করে না।

এই বয়সে ভালো-মন্দ বোধ না থাকায় ভুল করে জীবনে ডেকে আনছে সর্বনাশ। যার পরিপ্রেক্ষিতে একসময় বিপরীত পক্ষের কাছ থেকে ব্লকমেইলিং এর শিকার হতে হয় অনেককেই। কেউ কেউ সম্পর্ক স্থাপনই করে কুরুচিপূর্ণ মানসিকতা নিয়ে। বর্তমানে এমন অসংখ্য চক্র আছে যারা কিশোরীদের ফাঁদে ফেলে তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে, ধর্ষণ করছে, যৌননিপীড়নের শিকার হচ্ছে। এমন অসংখ্য ঘটনা প্রতিনয়তই ঘটছে ।

যেহেতু ভালো-মন্দ বোঝার সঠিক জ্ঞান থাকে না। এ কারণে যখন তারা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে তখন পরিবারের সদস্যদের শত্রু ভাবতে থাকে। ধীরে ধীরে তাদের থেকে দূরে সরে গিয়ে অপরিচিত ব্যক্তিটিই তার সবচেয়ে আপনজন মনে হতে থাকে। আর এর ফলে একসময় অতি বিশ্বাস, আস্থার ফলে ভুল করে বসে। কিন্তু কোনো কারণে যখন সম্পর্কটি ধরে রাখা সম্ভব হয় না, ঠিক তখনই সমস্যার সূত্রপাত হচ্ছে। এর জের ধরে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কেউবা ষড়যন্ত্রকারীর ফাঁদ মতো চলতে চেষ্টা করে।

কিশোরী বয়সে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি। এরফলে তারা একটি নির্ভরতার হাত পাবে। নির্দ্বিধায় চলমান জীবনের সবকিছু বাবা-মা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে। এতে করে তাদের ভুল পথে যাওয়ার সম্ভবনা কম থাকবে। কিন্তু বর্তমানে সন্তানদের হাতে যেমন স্মার্টফোন এসেছে ঠিক তেমনই যান্ত্রিক জীবনে পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কগুলোতেও শিথিলতা এসেছে। এর ফলে কিশোর-কিশোরীরা ঘরের চেয়ে বাইরের মানুষকে অনেকক্ষেত্রে বেশি ভরসা করতে শুরু করছে। সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এর জন্য প্রথমত পারিবারিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। বিশেষত মাকে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যেকোনো পর্যায়ে ভরসার স্থল হয়ে উঠতে হবে। এতে করে বয়ঃসন্ধিকালে জীবনের সমস্যাগুলো কমে আসবে।

পরিবারের সদস্যরা যদি পাশে থাকে, যত্নশীল হয় তবে কন্যাদের কিশোরী বয়সটা পার করা কঠিন হবে না। জীবনে ভুলের সংখ্যা কমে আসবে। সঠিক পথে হাঁটতে শিখবে। কিন্তু পরিবারকে অবশ্যই সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো খোলামেলা হতে হবে। বর্তমানে প্রতিনিয়ত এরূপ অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলেছে যেখানে কিশোরীরা ব্লাকমেইলিংয়ে শিকার। তবে আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ করা যায়। এর মাধ্যামে সমস্যা থেকে অনেকাংশেই পরিত্রাণ যায়। তবে কোনো জটিলতা ও বিপদে না পড়ে কিশোরীদের উচিত অপরিচিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা। সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেও ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও আদান-প্রদান থেকে বিরত থাকা। সর্বোপরি পরিবারকে গুরুত্ব দিতে হবে। আবেগের বশে জীবনে সমস্যা ডেকে আনা যাবে না।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ