Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কবে বন্ধ হবে ইভটিজিং

বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মানবিক গুণাবলিতে। আর বাংলাদেশ যেন ঠিক এর বিপরীত পথেই চলছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যখন নারীশিক্ষা, নারী-অধিকার, নারীর মর্যাদা থেকে শুরু করে নারীর পর্যাপ্ত ক্ষমতায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ তখন নারীকে গৃহবন্দি করে রাখার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। সেই প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে নারীকে তিরস্কার করা, পারিবারিক নিপীড়ন করার পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে চলছে অব্যাহতভাবে ইভটিজিংও।

ইভটিজিং বলতে যেমন একটা চিত্র চোখে আসে, কিছু মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে আর কিছু বখাটে পথে দাঁড়িয়ে বাজে মন্তব্য করছে বা শিস দিচ্ছে। অফিসে নারী সহকর্মীকে হেয় করে কিছু বলা হলো। এসবই ইভটিজিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। ইভটিজিংয়ের ফলে নারী নিজেদের সংকীর্ণ, অনিরাপদ ও কৃত্রিম বেড়াজালে আবদ্ধ মনে করে ও ভীতির সৃষ্টি হয়। নারী ও অভিভাবকের মধ্যে ইভটিজিং কথাটি শুনলেই ভয়ের সৃষ্টি হয়।

প্রতিনিয়ত নারী কোনো না কোনোভাবে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর কিশোরীরা অনুভব করেন, তাদের মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হবে। আমাদের ক্রমাগত উন্নতির পেছনে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু ইভটিজিংয়ের কারণে তাদের চলাফেরাই বর্তমানে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। চলাচলের পথ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র; সর্বত্র নারী ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, ইভটিজিং নারীদের মানসিক-শারীরিকভাবে দুর্বল করে তোলে।

ইভটিজারদের মধ্যে তরুণদের চেয়ে মধ্যবয়সী ও বয়স্ক পুরুষের সংখ্যাই বেশি। বিশেষত মধ্যবয়সী পুরুষের মাধ্যমে নারীরা সবচেয়ে বেশি ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। মধ্যবয়সী পুরুষরাই যাত্রাপথে নারীদের হয়রানি করেন বেশি। ইভটিজিংয়ের পেছনে মাদক, নৈতিক শিক্ষার অভাব, সুষ্ঠু জ্ঞানের অভাব, নারীদের ভোগ্যপণ্য মনে করা ইত্যাদি মন-মানসিকতা রয়েছে।

কোনোদিন মোটেই উত্ত্যক্ত হননি এমন নারী পাওয়া বিরল৷ খুঁজলে এমন পুরুষ পাওয়া যেতে পারে, যারা কখনোই কোনো নারীকে ‘নারী’ বলে উত্ত্যক্ত করেনি৷ তবে কোনোদিন ইভটিজিংয়ের শিকার হননি, এমনি নারী পাওয়া দুঃসাধ্য৷

নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে।

ইভ টিজিংয়ের মূল কারণ, একটি শক্তির খেলা, যেখানে পুরুষেরা শক্তিশালী আর নারীরা দুর্বল৷ তবে নারীদের এই দুর্বল থাকা একটি সামাজিক প্রচেষ্টার ফল৷ ধরুন, একটি পরিবার সে পরিবারে একটা মেয়ে টিজিংয়ের শিকার হয়৷ মেয়েটি এই বিষয়টি বাড়িতে উত্থাপন করে৷ বাড়ি থেকে প্রথম প্রশ্ন করা হয়, তুই কী করিস? নিশ্চয়ই তুই কিছু করেছিস, অন্য কাউকে করলো না, তোকেই কেন করলো? এভাবে ঘটনা সেখানেই মিটে যায়৷

একই পরিবারের একটা ছেলে যখন শিস দিতে গিয়ে ধরা পড়ে, তখনো সবাই মিলে মেয়েটার পোশাক, চাল-চলন, দিনের কোন সময় বের হয় ইত্যাদি নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত হয়৷ ফলে ছেলেরা জানেই কাউকে টিজ করা হলে দোষ ভিকটিমের দিকেই যাবে৷ সে একটি সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে থেকে নিরাপদে টিজিং চালিয়ে যায়৷

কিশোরীরা সর্বপ্রথম নিকটাত্মীয় (চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো ভাই ও অন্যান্য) বা মহল্লার সদস্য দ্বারা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে থাকেন। স্থানগুলো নারীর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ থাকার কথা ছিল। নারীর চাকরি, সামাজিক কর্মকাণ্ড, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ সব স্থানে নির্বিঘ্নে নিরাপত্তার সাথে বিচরণ করতে পারে, এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কারণ আমাদের মোট জনশক্তির অর্ধেক নারী। অর্ধেক জনশক্তিকে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। বৃহৎ জনশক্তি ব্যবহারহীন হয়ে পড়ে থাকতে দেওয়া মঙ্গলজনক নয়। সেজন্য প্রয়োজন নিরাপত্তার সঙ্গে নারীর বিচরণ করতে পারার নিশ্চয়তা।

আইনের বিধান বলছে, ইভটিজিং ফৌজদারি অপরাধ, যা শাস্তিযোগ্য। তবে এ আইনের প্রয়োগ নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ সঠিকভাবে প্রয়োগ হলে ইভটিজিংয়ের হার কমতো। কিন্তু সেটি দিন দিন বাড়ছে। ইভটিজিংয়ের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই অনেক সময় অপরাধীদের পরিচয় অজানা থেকে যায়। অনেক সময় ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করে না। ফলে তারা বিচারও পায় না।

তবে, নারী সচেতন হলে তারা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে তাৎক্ষণিক প্রতিকার পেতে পারে। এছাড়া পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক ব্যক্তিবর্গ সচেতনতা সৃষ্টি ও আইনগত প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনা সৃষ্টি করে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। ইভটিজিং-বিরোধী প্রোগ্রাম ও কাউন্সেলিং করাসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অপরাধীদের প্রতিহত বা প্রতিরোধ করার জন্য অবশ্যই নারীকে রুখে দাঁড়াতে হবে। অভিযোগ করতে হবে। পাশাপাশি নারীর আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

তাই অনিশ্চিত নিরাপত্তার অবস্থান থেকে বের হয়ে ইভটিজিং সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। এর মাধ্যমেই অপরাধীদের প্রতিহত বা প্রতিরোধ করে নারী সমাজকে একটি সুরক্ষাবেষ্টনী তৈরি করে নিরাপদ সমাজের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ