Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান শুধু নারীরা পড়বে কেন

সাম্যের সমাজ গড়তে হলে প্রথমেই দরকার বৈষম্যহীন শিক্ষা। কারণ আমরা জানি শিক্ষার দ্বারা মনের কলুষতা দূর হয়। মানুষ প্রকৃত মুক্তি খুঁজে পায়। শিক্ষা মানুষের মনুষ্যত্ব, বিবেকবোধ জাগ্রত করে প্রকৃত মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সহয়তা করে। ফলে শিক্ষার প্রতি আমাদের অবশ্যই মনোযোগ দেওয়া উচিত। শিক্ষা হতে হবে বৈষম্যহীন। যেন সমাজে নারী-পুরুষের ভিন্ন অবস্থান পরিদৃষ্ট হয় এরূপ কোনো শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সমীচীন নয়। আমরা জানি এখন শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলেদের থেকে মেয়েদের অংশগ্রহণ কম নয়। বরং কিঞ্চিৎ বেশিই।

মেয়েরা আর ঘরে বসে থাকছে না। শিক্ষিত হয়ে দেশ-দশের কল্যাণে নিয়োজিত হতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু নারীরা এগিয়ে চলতে চাইলেও সমাজ যেমন এগুচ্ছে না তেমনই শিক্ষাখাতেও দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটেনি। শিক্ষা মানুষকে উদার মানসিকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে শিক্ষাক্ষেত্রটা হওয়া উচিত সুপ্রসারিত। এমন কোনো শিক্ষা দেওয়া উচিত নয়, যা ছেলে এবং মেয়ের বিভেদ গড়ে তোলে। জাতিকে বৈষম্যের পথে ঠেলে দেয়।

ধর্ম, বর্ণের বিভেদ সৃষ্টি হয় এরূপ কোনো শিক্ষা কাম্য নয়। শিশুরা ঘর থেকে বৈষম্যহীন শিক্ষা লাভ করতে পারে। তেমনই পাঠ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলে তার মাধ্যমেও সমাজের চিন্তাধারা পাল্টানো যেতে পারে। তাহলে শিক্ষাকে কেন ছেলে বা মেয়ে নামকরণে বাঁধা হবে? শিক্ষা কেন পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে জিইয়ে রাখবে?

যেন নারী সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে সে লক্ষ্যে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার প্রতি নজর দিতে হবে। সেই কাজটি আরও সহজ করে দিতে পারে শিক্ষাব্যবস্থা বৈষম্যমুক্ত রাখার মাধ্যমে। গার্হস্থ্য বিজ্ঞান হোক বা কৃষিশিক্ষা তা যেন পাঠের ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান হয়ে ওঠে সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে।

মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য গার্হস্থ্য বিজ্ঞান নামে একটি ঐচ্ছিক বিষয় নির্ধারিত। যেটি শুধু মেয়ে শিক্ষার্থীরাই পাঠ করে। তেমনই ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে কৃষিশিক্ষা। তবে কৃষিশিক্ষা মেয়ে শিক্ষার্থীরাও পাঠ্য হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সে বালাই নেই। কোনো ছেলে শিক্ষার্থী গার্হস্থ্যকে বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে না। ছেলে ও মেয়েদের এমন বিভেদ সমাজের মাঝে কিছু ট্যাবু গড়ে তুলতে বিশেষভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এর ফলে দুটি বিষয় পরিষ্কর। এক. শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য; দুই. ঘরের কাজ, জীবন সম্পর্কে টুকিটাকি শেখার দায় শুধু মেয়েদের।

আমরা জানি আবহমানকাল ধরে নারীরাই ঘর-সংসার সামলানোর দায়-দায়িত্ব পালন করে আসছে। সেইসঙ্গে সমাজে এটাই স্বাভাবিক ধারা হিসেবে প্রচলিত যে, ঘরের পুরো কাজটাই নারীর। পুরুষ ঘরের কাজে সাহায্য-সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন না। এমনকি যুগের পরিবর্তনে কিছু পুরুষ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করলেও তাকে আমাদের সমাজে কটাক্ষের শিকার হতে হয়। কিন্তু একমাত্র প্রকৃত শিক্ষা বৃহত্তর পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। স্কুল-কলেজে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য হয় এরূপ কোন বিধান রাখা উচিত নয়। ছেলে বা মেয়ে বলেই আলাদা গণ্ডির মধ্যে রাখা নিষ্প্রয়োজন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রকৃত মানুষ করে গড়ে তুলতে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান পড়তে যেমন উৎসাহী করতে তেমনই কৃষিশিক্ষাও।

ছেলে ও মেয়ের মধ্যে শিক্ষাগত কোনো ত্রুটি রাখা চলবে না। তাহলে সমাজে সবার জন্য সুস্থ পরিবেশ গড়ে উঠবে। আমাদের সমাজের ব্যাপক পরিবর্তন জরুরি। যেন নারী সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে সে লক্ষ্যে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার প্রতি নজর দিতে হবে। সেই কাজটি আরও সহজ করে দিতে পারে শিক্ষাব্যবস্থা বৈষম্যমুক্ত রাখার মাধ্যমে। গার্হস্থ্য বিজ্ঞান হোক বা কৃষিশিক্ষা তা যেন পাঠের ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান হয়ে ওঠে সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ