উল্লেখযোগ্য যেসব নারী ‘অনন্যা শীর্ষদশ’ পেয়েছেন
‘অনন্যা’ বাংলাদেশের নারী বিষয়ক পাক্ষিক ম্যাগাজিন। ‘অনন্যা নারীর কথা বলে’; এই স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ম্যাগাজিনটি। পাক্ষিক ম্যাগাজিন ‘অনন্যা’ নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে। ‘অনন্যা’ বিভিন্ন বিষয়ে সফল নারীদের সম্মাননা দিয়ে থাকে। ‘অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার’-এর আয়োজনের মাধ্যমে প্রতি বছর বাংলাদেশের নারীদের ম্যাগাজিনটি কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, অর্থনীতি, অভিনয়, সংগীত, ক্রীড়া, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন-আইন-আইন, মানবাধিকার, উদ্যোক্তা, রাজনীতি ও সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে অনন্যা এই সম্মাননা দেয়। এই ম্যাগাজিন ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশের নারীদের অসামান্য অবদানের জন্য প্রতিবছর ‘অনন্যা শীর্ষ দশ’ সম্মাননা দিয়ে আসছে। নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে নারীদের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য নারীদের ‘অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা ’ দেয়। এই পর্যন্ত ‘অনন্যা শীর্ষদশ’ সম্মাননাপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য নারীরা হলেন,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলেন ১৯৯৬ সালে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননাপ্রাপ্তদের একজন। তিনি রাজনীতি ক্যাটাগরিতে ‘অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা’ পান। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে শেখ হাসিনা একজন সফল সংগ্রামী নেত্রী। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতেই দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। ১৯৮৬ সালে তিনি কৌশলগত কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তার দল এরশাদবিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। শেখ হাসিনা একজন বিশিষ্ট লেখক। তার লেখা মৌলিক ও সম্পাদিত গ্রন্থ আছে বেশ কয়েকটি। দেশ-বিদেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি, সম্মাননা পুরস্কার ও ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথম নারী স্পিকার। তিনি ২০১৩ সালে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পান। বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতীয় সংসদে প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নির্বাচিত হন। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে তিনি নবম জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ স্পিকার নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
ডা. দীপু মনি রাজনীতিতে ২০০৭ সালে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পান। ডা. দীপু মনি বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। দীপু মনি একাধারে লেখালিখি, শিক্ষকতা, পরামর্শদাতা, গবেষণা, অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি পরিচালনা করেন। দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদল নিয়ে গঠিত ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকের মাধ্যমে দুঃস্থ ও স্বাস্থ্যসুবিধাবঞ্চিত মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কাজ করেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আইন প্রণয়নে জনমত গড়ে তোলার কাজেও নিয়োজিত। প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতি ও রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণের ব্যাপারে দীপু মনি একজন একনিষ্ঠ প্রবক্তা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউটের ঘনিষ্ঠ সহায়তায় তিনি আওয়ামী লীগের নারী কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। গণতন্ত্র ও বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য মরহুম এম এ ওয়াদুদের কন্যা তিনি।
তসলিমা নাসরীন ১৯৯৩ সালে প্রথম অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পান। তিনি সাহিত্য ক্যাটাগরিতে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পান। তসলিমা তার রচনা ও ভাষণের মাধ্যমে লিঙ্গসমতা, মুক্তচিন্তা, ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ ও মানবাধিকার বিষয়ে প্রচার করতে থাকায় ধর্মীয় মৌলবাদীগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন ও তাদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেতে থাকেন। ১৯৯৩ সালে তার পঞ্চম উপন্যাস ‘লজ্জা’ প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে বাংলাদেশের মুসলিমদের দ্বারা একটি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের ওপর অত্যাচারের বর্ণনা করা হয়। বাংলাদেশ সরকার উপন্যাসটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এসময় ধর্মীয় মৌলবাদীদের ক্রমাগত হুমকির মুখে তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হন। ১৯৯৩ সালে তসলিমা নাসরীন ছাড়াও উল্লেখযোগ্য নারী যারা অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পান তারা হলেন কনকচাঁপা চিত্রকলা ক্যাটাগরি, মৌসুমি চলচ্চিত্র ক্যাটাগরি, সঙ্গীত ক্যাটাগরিতে দিলরুবা খানসহ প্রমুখ।
ড. নীলিমা ইব্রাহীম হলেন ১৯৯৪ সালে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা প্রাপ্তদের একজন। তিনি সংগঠন ক্যাটাগরিতে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পেয়েছিলেন। ড. নীলিমা ইব্রাহীমের কলম আমৃত্যু সক্রিয় ছিল নারী-নির্যাতন, ফতোয়াবাজি, মৌলবাদী কূপমণ্ডূকতা ও নোংরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। তিনি বহুবিধ রাজনৈতিক বিশ্লেষণসহ দেশের নারীদের পশ্চাৎপদ পরিস্থিতি তুলে ধরেন; পাশাপাশি সৃজনশীল সাহিত্য রচনায়ও মনোনিবেশ করেন। দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক খবর ও পাক্ষিক অনন্যাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লিখেছেন। তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার কলামের মাধ্যমে তিনি নারীদের সচেতন করতে প্রয়াসী হয়েছেন। লেখার পাশাপাশি নারীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও নীলিমা ইব্রাহীম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৯৪ সালে ড. নীলিমা ইব্রাহীমের পাশাপাশি অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পেয়েছিলেন সংগীত ক্যাটাগরিতে রুনা লায়লা, ফ্যাশন ডিজাইন ও মডেলিং ক্যাটাগরিতে বিবি রাসেল ও চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে চম্পাসহ প্রমুখ।
আনোয়ারা সৈয়দ হক ১৯৯৫ সালে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা প্রাপ্তদের একজন। তিনি সাহিত্য ক্যাটাগরিতে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পেয়েছিলেন। আনোয়ারা সৈয়দ হক একাধারে গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি প্রবন্ধ, শিশুতোষ রচনা এবং কলাম লিখে থাকেন। সাহিত্যজীবনের শুরু তাঁর কবিতা দিয়ে হলেও পরবর্তীসময়ে তিনি ছোটগল্প এবং উপন্যাসে মনোযোগ দেন। তিনি অনন্যা শীর্ষদশের পাশাপাশি অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি বাদে অনন্যা শীর্ষদশ প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য নারীরা হলেন কাঙালিনী সুফিয়া, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সারা যাকেরসহ প্রমুখ।
মমতাজ সংগীত ক্যাটাগরিতে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পান। বেগম বাংলা লোকগানের শিল্পী ফোক ধারার গান পরিবেশনের কারণে মিউজিক কুইন বা সুর নামে তিনি বহুলপরিচিত। মাটি ও মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গান গেয়ে লাখো সংগীতপিপাসুর বাংলাদেশে রেকর্ড স্থাপন করেছেন। দুই দশকের বেশি সময়ের তাঁর পেশাদারী সংগীতজীবনে সাত শ’র বেশি। একক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে। মমতাজ যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশেই গান গেয়েছেন। তাঁর জীবনকাহিনি নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘মমতাজ’ নামক একটি চলচ্চিত্র, যাতে তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড ২০০৬ পেয়েছেন। নবম ও দশম (২০০৯ ও ২০১৪) জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনোনীত হন তিনি।
কুমুদিনী হাজং আন্দোলন ক্যাটাগরিতে ২০০৩ সালে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পান। পুরস্কারের নগদ অর্থ, ক্রেস্টের পাশাপাশি তাঁকে বসবাসের জন্য একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। ঔপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে মুক্তিসংগ্রামে অবদানের জন্য কুমুদিনী হাজং বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি ছিলেন হাজং টংক আন্দোলনে প্রেরণার উৎস। টংকা ছিল উৎপন্ন ফসল দ্বারা জমিদারদের খাজনা পরিশোধ করা। হাজং সম্প্রদায় এ-ব্যবস্থায় দিনে দিনে নিঃস্ব হয়ে পড়ছিল। এ-সময় কমিউনিস্ট নেতা কমরেড মনি সিংহ-এর নেতৃত্বে ১৯৩৭ সাল থেকে টংক প্রথা উচ্ছেদের দাবি নিয়ে টংক আন্দোলন শুরু হয়। হাজং সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের বেশকিছু আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন কুমুদিনী। তিনি গ্রামগুলোতে সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন ও টংকপ্রথার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা চালান।
মুন্নী সাহা সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে ২০০১ সালে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পান। দেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রথম নারী রিপোর্টার মুন্নী সাহা একুশে টেলিভিশনে থাকাকালীন ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত গ্রামের ঘানিটানা নারী বেকার গার্মেন্টস দে দুঃসহ জীবন, হ্যালো বাংলাদেশ- এসব রিপোর্ট করে আলোচনা টেলিভিশন বন্ধ হয়ে গেলে ২০০৩ সালে এটিএন বাংলায় তিনি বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। এখানে কাজ করার সময় চারদলীয় জোট সরকারের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিবেদন করে আবারো তিনি আলোচিত হন। মুন্নীর রিপোর্টিংয়ে মানবিক আবেদন, উপস্থাপনার ভিন্নতা দর্শকশ্রোতার মাঝে সৃষ্টি করেছে ভিন্ন। এক ইমেজ। আমাদের দেশে নারী রিপোর্টারদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা অর্থাৎ বিশেষ কোনো ইস্যুতে সীমাবদ্ধ থাকেননি মুন্নী সাহা। অন্যসব সংবাদকর্মীর মতো পেশাগত চ্যালেজকে করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি এটিএন নিউজের ‘হেড অব নিউজ’।
সালমা খাতুন খেলাধুলায় ২০১৪ সালে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পান। সালমা খাতুন বাংলাদেশ প্রমিলা ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক। বিশ্বের প্রথম সারির সা প্রমীলা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি তিনি অফ ব্রেক বোলিং করে থাকেন। ২০১২ সালে নারীদের টি-২০ এশিয়া কাপে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বৈশ্বিক ক্রিকেটাঙ্গনে অন্যতম সেরা নারী ক্রিকেটার হিসেবেও বিবেচনা করা হয় তাঁকে। নারী ক্রিকেটের সম্ভাবনার ঝলক সর্বপ্রথম দারুণভাবে দেখা যায় ২০০৭ সালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের আয়োজিত টুর্নামেন্টে। ওই বছরই আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা পড়ে বাংলাদেশের মেয়েদের। থাইল্যান্ডের সঙ্গে দু’টি ম্যাচ জিতে হইচই ফেলে দেন সালমারা। পরে চীন, হংকং, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দলগুলোর সঙ্গেও ভালো পারফর্ম করেন। ওই আসরে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরুর মাত্র চার বছরের মধ্যেই ২০১১ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। নারীক্রিকেটের এই সাফল্যযাত্রার নেপথ্যে ছিলেন সালমা খাতুন।
ওয়াসফিয়া নাজরীন পর্বতারোধী ২০১৫ সালে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পান। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সাত অঞ্চলের সর্বোচ্চ সাত পর্বত জয় করেছেন অভিযাত্রী ওয়াসফিয়া নাজরীন। তিনি এখন পর্যন্ত সর্বকনিক বাংলাদেশি এবং দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১২ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন। ২০১১ সালে তিনি আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারো এবং দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বত অ্যাকোনকাগুয়া জয় করেন। একই বছর ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত এলবার্সের চূড়ার ৩০০ মিটার নিচে থেকে খারাপ আবহাওয়ার জন্য ফিরে আসেন। এছাড়া তিনি ২০০৯ সালে নেপালের লু রী পর্বত, ২০১০ সালে আইল্যান্ড পিক জয় করেন। ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এলব্রুস জয় করেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের বর্ষসেরা অভিযাত্রীর খেতাব পেয়েছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন।
চয়নিকা চৌধুরী নাট্যনির্মাতা ক্যাটাগরিতে ২০২০ সালে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পান। চয়নিকা চৌধুরী চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পনির্দেশক ছোটপর্দার জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা। দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্ত আছেন নাট্যনির্মাণে। ১৯৯৮ সাল থেকে নাট্যকার হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও পরিচালনায় আসেন ২০০১ সালে। এখন পর্যন্ত ১৫০-এর বেশি নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৪১৫টি একক ও ১৬টি ধারাবাহিক নাটক। চয়নিকা চৌধুরীর পৈতৃকবাড়ি বরিশালে হলেও জন্ম খুলনায়। বাবা সুনীল বরণ কর্মকার বিসিআইসিতে কাজ করতেন। মা শিশির কণা ভদ্র ছিলেন স্কুলশিক্ষক। ১৯৯৮ সালে ‘বোধ’ নাটক লেখার মাধ্যমে নাট্যকার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন চয়নিকা। ২০০১ সালে নিজের লেখা শেষ বেলায়’ ছিল তাঁর পরিচালিত প্রথম নির্মিত নাটক। দুই দশকের নির্মাণজীবনে তিনি পেয়েছেন চারবার সিজেএফবি পুরস্কারসহ বাংলাদেশ রিপোর্টাস এসোসিয়েশন, ট্রাব, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, চারুনীড়ম, বাবিবাস, ফ্রেন্ডস ভিউ অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার। সর্বশেষ গত ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তাঁর অভিষেক হয় বড় পর্দায়। ‘বিশ্বসুন্দরী’ নামের চলচ্চিত্রটি শুধু মানবপ্রেমের কথা বলেনি, বলেছে দেশপ্রেমের কথাও।