দেরিতে গর্ভধারণ: নারীর মানসিক চাপ
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাপে খাপ মতো সবটা করে ওঠা কোনো ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব নয়। বর্তমানে নারীরা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। একইসঙ্গে পড়াশোনা করে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে ভালো চাকরিরও প্রত্যাশা করে। কিন্তু কিছুটা ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন ঘটলেও অধিকাংশই থেকে গেছে অন্ধকারে। ফলে নারীর আত্মসম্মান, মর্যাদা নিয়ে বেড়ে ওঠাকে অনেকেই ভালোভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা রাখেন না।
নারীরা পড়াশোনা শেষ করে একটি পছন্দসই কাজ পেতে বয়স প্রায় ত্রিশের কোটা ছাড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রে এর আগেই অনেক বাবা-মা সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় তাকে পাত্রস্থ করেন। আবার অনেকেই সন্তানের ইচ্ছেকে প্রাধান্যও দিচ্ছেন বা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু একজন নারীকে ঠিকই সংসার সামলে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে কখনো কখনো নারীকে হাঁটতে হয় ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের পথে। কিন্তু বাঙালি সমাজব্যবস্থা এমন ভয়াবহ যে নারীরা যেদিকে যায় সেখানেই ত্রুটির সন্ধান করা এক শ্রেণির বিশেষ আনন্দের সঞ্চার করে।
ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বিশেষ প্রকারের কৌতূহল তাদের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু একজন নারীর বিভিন্ন রকমের সমস্যা থাকতেই পারে। কেউ সংসারকে ভালোমতো গুছিয়ে নিতে চায়, কেউ পড়াশোনা শেষ করতে চায়, কেউবা পড়াশোনা শেষে একটা কর্মসংস্থানের দিকে ছুটছে। ফলে গর্ভধারণ, পরিচর্যা; সবমিলিয়ে যতটা সময় নিজেকে দেওয়া উচিত, ঠিক ততটা ব্যালেন্স করতে পারছে না। কিন্তু নারীরা সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হলে যেমন এক শ্রেণির মাথাব্যথা, তেমনি দেরিতে গর্ভধারণ করলেও সমস্যা। কিন্তু দেরিতে গর্ভধারণে কেন নারীকে মানসিক চাপের মুখে ফেলা হয়?
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/08/3-7-1024x576.jpg)
বর্তমানে স্বাবলম্বিতায় বিশ্বাসী নারীরা। ফলে নিজেকে প্রাধান্য দিতেই তারা গ্রহণ করছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। কেউবা বিয়েই করছে দেরিতে। কেউ বাচ্চা নিচ্ছে দেরিতে। কিন্তু সংসার-সন্তান, চাকরি সবকিছু একা হাতে সামাল দিতে হয় নারীকে। সেক্ষেত্রে নারী নিজে কতটা আরামদায়ক অবস্থান তৈরি করতে পারছে, সেটা বড় বিষয়। কিন্তু অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের অতি উৎসাহ নারীর জীবনে চাপ সৃষ্টি করে। পরিবারের মানসিক চাপ কমাতে যে নারী বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে, একসময় দ্রুত কেন নাতি-নাতনীর মুখ দেখাতে পারছে, সে ব্যাপারেও আসে কড়া তাগিদ।
জীবন যেন নিজের নিয়মে চলার নয়। সবাই যেটাকে ভালো মনে করে, সে অনুযায়ী নারীকে পথ চলতে হবে। এক্ষেত্রে অনেকেই অতি উৎসাহী হয়ে নারীকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয় নিজেদের মর্জিমতো। অনেকেই ডাক্তার, কবিরাজ, ঝাড়-ফুঁক বিভিন্ন কিছুর পরামর্শ দিয়ে নারীকে অতিষ্ঠ করে তোলে। ব্যক্তির নিজস্ব মত-পথের গুরুত্ব এ ধরনের মানুষের কাছে কখনোই থাকে না।
পরিবারের সদস্যরা যেমন নারীর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, তেমনই পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের ঔৎসুক্য যেন আরও বেশি। সবকিছু তাদের দেওয়া নিয়মের বাইরে যেন চলা যাবে না। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী তাদের মধ্যে পরিচিত জনের গর্ভধারণ কেন হচ্ছে না, কী সমস্যা, কী পরিত্রাণ মিলবে; সব নিয়ে নারীকে জ্ঞান দিয়ে উত্ত্যক্ত করে তোলে।কিন্তু যদি প্রতিটি ব্যক্তির স্বাধীন সত্তাকে আমরা সম্মান করতে শিখি তবে হয়তো এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়িয়ে চলা সম্ভব।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/08/2-10-1024x576.jpg)
দেরিতে গর্ভধারণ নিয়ে শুধু পরিবার-পরিজন আশেপাশের লোকজনের মধ্যেই এ ধরনের সমস্যা সীমাবদ্ধ থাকে না। নারীকে এত বেশি চাপ সৃষ্টি করা হয় যে, ভুক্তভোগী নারী অনেকটা নিজেকে গুটিয়ে নিতে চেষ্টা করে। সময় পেলেই যারা একটু বেশি উৎসাহ নিয়ে নারীর মাতৃত্বের বিষয় নিয়ে ঘাটতে ভালোবাসে, তাদের থেকে দূরে থাকতে চাইলেও সম্ভব হয় না। কারণ একে তো পরিবার-পরিজন তার ওপর বন্ধু-বান্ধব, অফিসের সহকর্মী কেউই বাদ পড়ে না। বিবাহিত নারীকে দেখলেই প্রথমেই নারীকে বাচ্চা-সংসার সম্পর্কে ব্যক্তিগত প্রশ্নে জর্জরিত করে তোলে।
প্রত্যেকটি মানুষকে মানবিক হওয়ার পাশাপাশি বিবেকবান হতে হবে। আপনি আপনার কাছের বন্ধু, আত্মীয় বা সহকর্মী হলেই অন্য নারীকে তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনার কতটুকু অধিকার অন্যকে চাপের মুখে ফেলা। একজন মানুষ নিজের সম্পর্কে যতটা বোঝেন আপনি বা আমি পাশে থাকলে, একসঙ্গে চলাচল করলেই কি ততটা বুঝতে পারবো? ভেতরের সংগ্রাম প্রত্যেকের ভিন্ন ধরনের। তাই কোন নারী কবে বিয়ে করলো, কে কবে গর্ভধারণ করলো; এ নিয়ে বিব্রতকর পরিবেশ সৃষ্টি না করি। নারীকে অযথা চাপ সৃষ্টি না করি। আসুন আমরা নিজেরা সচেতন হই; সেইসঙ্গে এই ধরনের ব্যক্তিদের বোধ জাগ্রত করতে সচেষ্ট হই।
অনন্যা/জেএজে