অব্যক্ত ত্যাগের নাম—বাবা

ভালোবাসা যখন নিঃশব্দ, ত্যাগ যখন অনুচ্চারিত, আর দায়িত্ব যখন পরিমিত অথচ অবিচল—তখনই সেই ভালোবাসার নাম হয়ে দাঁড়ায় “বাবা”।
মায়ের মতো প্রকাশভঙ্গি তাঁর নেই, নেই নরম হাতে জড়িয়ে ধরার অভ্যাস। তবু তিনি প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে নিজের চাওয়া–পাওয়াকে আড়ালে রেখে সন্তানদের জন্য এক পরত এক পরত করে গড়ে তুলেন নিরাপত্তার দেয়াল।
বাবারা হয়তো কবিতা নন, কিন্তু তাঁরা এক একটি নির্লিপ্ত ছন্দ—যার অর্থ আমরা বুঝি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে।
বাবা জীবনের মঞ্চে যেন সেই পরিচালক, যিনি নিজের আলো না চাইলেও সন্তান যেন মঞ্চজয় করে, সেই চেষ্টাতেই ব্যস্ত থাকেন।পরিবারের অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থান, পড়ালেখার খরচ—সব কিছুর ভার তাঁর কাঁধে, অথচ মুখে একটিবারও ক্লান্তির কথা নেই।তিনি বলতেই পারেন, “আজ খুব কষ্টে আছি”—তবু তিনি বলেন, “চিন্তা করিস না, তুই নিজের কাজে মন দে।”
আমাদের সমাজে পুরুষ মানেই শক্ত, কঠিন, নির্লজ্জভাবে আবেগহীন—এই ধারণার কারণে বহু বাবা আজও চোখের পানি লুকিয়ে রাখেন।মেয়ের বিয়েতে তিনি হয়তো একটুও কান্না করেন না, তবে ঘরে ফিরে চুপিচুপি মেয়ের শূন্য ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকেন সারারাত।
নিজের জন্য নতুন জামা বা ফোন কেনা যেত—তবু সেই টাকায় ছেলের বেতন দেওয়া হয়, মেয়ের কোচিং ফি মেটানো হয়।তিনি হয়তো চুপচাপ পুরনো পাঞ্জাবি পরেন ঈদের দিন, কারণ নতুনটা কেবল সন্তানের জন্যই তো!
পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত চরিত্র ‘বাবা’—সন্তানের জীবনে তিনিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অথচ তাঁর গল্পটা খুব কমই কেউ শোনে।অনুষ্ঠানে, স্টেজে, পুরস্কারে—মা’কে উৎসর্গ করা হয়; আর বাবা?তিনি গ্যালারিতে বসে হাততালি দেন, গলার ভেতর আটকে রাখা আনন্দ নিয়ে।
বাবা দিবস কেবল একটি দিন নয়, এটি সেই অনুভবের প্রকাশ—যা বছরের প্রতিটি দিনে আমাদের নিরাপদে রাখে একজন মানুষের নীরব সংগ্রামের মাধ্যমে।
এই বাবা দিবসে তাঁর হাতে একটি উপহার নয়, দিন একটি শব্দ—“আপনি আমাদের নীরব আশ্রয়, আমাদের ছায়া।” কারণ অব্যক্ত ত্যাগেরও একদিন স্বীকৃতি প্রাপ্য।