Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যৌন-হয়রানি: নারী উন্নয়নের প্রধান বাধা

আমাদের সমাজে নারীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সর্বত্র। কোথাও নারীর জন্য সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি আজও। গণপরিবহন থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র এমনকি ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের কাছেও নারীরা নিরাপদ নয়। যৌন হয়রানির ঘটনা নারীর পথ রুদ্ধ করে। নারীরা নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে পারলেও সম্ভ্রম রক্ষার দায় নারীর শতভাগ। ফলে নারী যদি কোনরকম অস্বাভাবিক বা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার শিকার হন সেখানেও নারীর ওপরই আঙুল ওঠে। নারীকে দোষী সাবস্ত করা হয়। এর ফলে নারীদের স্বাভাবিক জীবন রোহিত হয়। আর একারণেই নারীরা সর্বদা তাদের গুটিয়ে রাখে। ফলে যৌন-হয়রানির ভয়ে নারীরা নিজেদের কাজ থেকে দূরে সরতে থাকে। যার ফলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়।

‘যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যাণকর / অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ কাজী নজরুল ইসলামের সুরেই বলা যায়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন একা নারীর পক্ষে যেমন সম্ভব নয় ঠিক তেমনই পুরুষের একার পক্ষেও সম্ভব নয়। যদি নারী-পুরুষ উভয়ই মিলে সমান এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তবে জনগণের তথা দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তাই নারীকে সমান সুযোগও সৃষ্টি করে দিতে হবে। এর জন্য গণপরিবহন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্রে সর্বত্র নারীকে একটি নির্ভীক এবং সুস্থ পরিবেশ দিতে হবে।

নারী যেন ভয়শূন্য মনে তার কাজটা সমাধা করতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। আর একাজে সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে আমাদের পুরুষ সমাজ। তারা নারীর উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে হতে পারে বন্ধু, সহযোগী। যদি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ শাসনের মনোভাব ভুলে নারীর উন্নয়নের দোসর হয় তবে নিশ্চিত অর্থেই নারী নিজ নিজ জায়গায় আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে একজন নারী শিক্ষার্থী যদি জানে, তার যৌন হয়রানির আশঙ্কা আছে, তবে ওই নারী শতভাগ নিজেকে দমিয়ে রাখবে। পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগী হবে না। বরং সবসময় মনে ভয় কাজ করবে কখন একটি বিশেষ ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই বলা চলে তখন সেই নারী নিজের সম্ভ্রম রক্ষায় বেশি মনোযোগী হবে, পড়াশোনায় নয়। শুধু শিক্ষার্থী নয় বরং নারী শিক্ষকের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। কোন নারী শিক্ষক যদি জানেন কর্তৃপক্ষ খুব একটা সুবিধার নয়। তখন তিনি নিজেকে অনেক কাজ থেকে যথাসম্ভব দূরে সরিয়ে রাখবেন।

এক্ষেত্রে অনেকের ধারণা হতে পারে তাহলে ওই নারী কেন চাকরিতে সুবিধা-অসুবিধা নিশ্চয়তা বিধান না করে কর্মরত আছেন? সেক্ষেত্রে বলা চলা প্রথমত নারীরা জানেন, কোথাও তার নিরাপত্তা শতভাগ নেই। তার ওপর বর্তমান বাজারে চাকরি পাওয়াও খুব কষ্টের। নারী তাই একটু মানিয়ে নিতে চান পরিবেশে কিন্তু তিনি তার শতভাগ জ্ঞান, দক্ষতা দিয়ে মনোযোগী হয়ে কাজ করতে পারবেন না এটা বোঝাই যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে তিনি কিছুটা হলেও পিছিয়ে থাকবেন। সর্বোপরি সমাজ, দেশের উন্নয়নে তার শতভাগ ভূমিকা পালিত হবে না।

শিষকতার বাইরে নারীর কর্মক্ষেত্র নার্সিং, করপোরেট সেক্টর, ব্যাংকিং খাত সর্বত্রই নারীরা যদি ভীতিপ্রদ হয়ে কাজ করে তবে কোনোভাবেই সঠিক মাত্রার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এছাড়া গণপরিবহন তো আছেই। বাংলাদেশের প্রায় নব্বইভাগ কর্মজীবী নারী, স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী যাতায়াতের জন্য গণপরিবহন ব্যবহার করেন। তবে গণপরিবহণে যদি তিনি যৌন-হয়রানির শিকার হন বা ভয় নিয়ে পথে চলতে হয় তবে উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেই।

নারীদের প্রতি সহানুভূতি, শ্রদ্ধা, সম্মান সৃষ্টি করতে হবে। পুরুষতন্ত্রের মানসিক দৈন্য দূর করতে হবে। নারীর পথে বাধা না হয়ে বরং নারীর উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলে শুধু নারী নয় বরং গোটা দেশের উন্নতি হবে। আর যদি যৌন-হয়রানির মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে নিজেদের বাহাদুরি প্রকাশ করতে থাকে তবে দেশের উন্নয়ন যেমন থমকে যাবে তেমনই প্রকৃত মানুষ হিসেবেও দাঁড় করানো সম্ভব হবে না।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ