সিলভিয়া প্লাথ: চিরদুঃখী কবি
ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম চিরদুঃখী, বিষাদগ্রস্ত, বিপন্ন কবি সিলভিয়া প্লাথ। তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস লিখেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনিই প্রথম সাহিত্যে মরণোত্তর পুলিৎজার পুরস্কার পান।
সিলভিয়া প্লাথ ১৯৩২ সালের ২৭ অক্টোবর বোস্টনের ম্যাসাচুসেটসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অট্টো প্লাথ জার্মানির জ্রাবোর বাসিন্দা ছিলেন। পরে তিনি বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হন। অট্টো প্লাথ বিয়ে করেছিলেন তার চেয়ে একুশ বছরের ছোট অরেইলিয়া স্কুবেরকে, যিনি ছিলেন একজন কীটবিজ্ঞানী ও একইসঙ্গে তার ছাত্রীও।
মাত্র ৮ বছর বয়সে পিতৃহীন হন সিলভিয়া। জীবনের প্রতিটি পর্যায় তিনি পার করেছেন দুঃখকে সঙ্গী করে। ৮ বছর বয়সেই তিনি সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন। অদম্য প্রতিভার অধিকারী সিলভিয়া জীবনের অভিজ্ঞতাকে সাহিত্যের উপদান হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ফলে তার সাহিত্যে দুঃখ বা বিষাদের ছাপ স্পষ্ট। জীবনকে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলেই তার সাহিত্যকর্ম এত পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলো।
১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় তার একমাত্র উপন্যাস ‘The Bell Jar’. এটি ছিল মূলত তার জীবনের ওপর ভিত্তি করে লেখা একটা উপন্যাস। যা এক অনুভূতিপ্রবণ মেয়ের মানসিক ভাঙা-গড়ার গল্প। এছাড়া তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘The Colossus’। তার রচিত শিশুতোষ বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘The Bed Book’, ‘Mrs. Cherry’s Kitchen’, ‘Collected Children’s Stories’ ইত্যাদি। প্লাথের রচিত শেষ কবিতা সংকলন ‘Ariel’ নামে প্রকাশিত হয় তার মৃত্যুর পরে, ১৯৬৫ সালে। এই কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘Daddy’ এবং ‘Lady Lazarus’ এর মতো অসাধারণ কবিতাগুলো তাকে এনে দিয়েছে জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মাননাগুলো।
মাত্র ৮ বছর বয়সে তার কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল বোস্টন হেরল্ড পত্রিকার শিশু শাখায়। শিল্পের প্রতি আগ্রহ ছিল বরাবরই। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১৯৪৭ সালে জিতেছিলেন চিত্রশিল্পের জন্য দ্য স্কলাস্টিক আর্ট অ্যান্ড রাইটিং অ্যাওয়ার্ড। জন্ম থেকে শিল্প ও সাহিত্যে ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন তিনি। যদিও তার শৈল্পিক মন জীবনে আশার চেয়ে, আনন্দের চেয়ে হতাশা, বিষাদ আর যন্ত্রণা খুঁজে ফিরেছে। তবে এই যন্ত্রণায় তার লেখার শক্তি জুগিয়েছে। ফলে তার সাহিত্যের উপাদান জীবনের দুঃখের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া। ব্যক্তি জীবনে প্রেম থেকে পরিণয়ে আবদ্ধ হন। ১৯৫৬ সালে সিলভিয়া প্লাথ বিয়ে করেন কবি টেড হিউজকে। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। কন্যা ফিয়েডা রেবেকা (জন্ম ১৯৬০) ও পুত্র নিকোলাস ফার (জন্ম ১৯৬২)। নিকোলাসের জন্মের পর এই দম্পতির মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। এই সময় হিউজের সঙ্গে আরেক নারীর প্রেমকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে।
শৈশবে পিতার কড়া শাসন একসময় শিশু মনে যে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে পরিণয়ে আবদ্ধ হয়েও দুঃখী জীবনের পরিত্রাণ ঘটেনি কবির। বরং আরও জটিলতায় আটকে পড়েন কবি। তার কাছে মৃত্যুটাই তাই সবচেয়ে আপন মনে হয়েছিল। জীবনের বিষাদ থেকে তিনি কয়েকবার আত্মহননের পথ বেছে নেন। শেষ পর্যন্ত এই গুণী, অদম্য মেধাবী সাহিত্যিক আত্মহননের মাঝেই চিরমুক্তির বার্তা গ্রহণ করেছেন। জীবনের কাছে হেরে গিয়ে ১৯৬৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেন।