বসন্ত এসে গেছে
‘বাতাসে বহিছে প্রেম,
নয়নে লাগিল নেশা,
কারা যে ডাকিল পিছে,
বসন্ত এসে গেছে।’
এই গানের লাইনগুলো পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। গানের সাথে-সাথে ঋতুরাজ বসন্তও সবার পছন্দ করে।
চারিদিকে ফুলের সুবাস ও কোকিলের কুহুকুহু ডাকই বলে দেয় বসন্ত এসে গেছে। ফাল্গুন ও চৈত্র দুই মাস নিয়ে বসন্তকাল। পয়লা ফাল্গুন বসন্তের ডাক দেয়। নানা রঙের ফুল ফোটে। কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, পলাশের লাল রঙে ভরে ওঠে চারদিক।
বসন্তের আগমনকে ঘিরে কবিরাও লেখেন নানা গান ও কবিতা। শীতের জীর্ণতাকে সরিয়ে দিয়ে বসন্ত নিয়ে আসে মিষ্টি রোদ ও গাছে-গাছে নতুন পাতা আর ফুল। চারিদিকে একটা স্নিগ্ধ আবেশ তৈরি হয় এই বসন্তেই।
বসন্তকে বরণ করতে পিছিয়ে নেই কেউই। `ফুল ফুটুক আর না ফুটুক' বসন্তের সাজে নিজেকে সাজিয়ে তোলে সবাই। রঙ-বেরঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি ও ফুলে নিজেদের সাজিয়ে তুলেই বসন্তকে বরণ করে নেয় মানুষ। বাঙালির জীবনে আদিকাল থেকেই বসন্ত বাস করে আসছে। নাচ, গান, কবিতা, চিত্রকলা এ-সবের মধ্য দিয়েই করা চলে বসন্ত-বন্দনা।
শহরে বসন্ত বরণকে ঘিরে সারা দিন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গ্রামে জাকজমক কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও গ্রামীণ আবহাওয়াই সবাইকে বলে দেয় যে, বসন্ত এসে গেছে। চারিদিকে ফসলের সমারোহ, কোকিলের কুহু ডাক, গাছে-গাছে নতুন পাতা ও ফুল, এ-সবই বসন্তের আগমনের প্রতীক।
প্রথম `বসন্ত উৎসব' উদ্যাপন করার রীতি চালু হয় বঙ্গাব্দ ১৪০১ সন থেকে এবং 'জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ' বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে আসছে। ১৯৬২ সালে 'ছায়ানট' বসন্ত উৎসব শুরু করে এবং তা সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সারা দেশের মানুষ পয়লা ফাল্গুন বসন্ত উৎসবে মেতে ওঠে।
`ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
আমার আপনহারা প্রাণ
আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্যে রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে।’
রবিঠাকুরের বিখ্যাত এই গানের মধ্য দিয়েই অনেকে বসন্তকে নিজের জীবনে জায়গা করে দিয়েছে। অনেকে আকুতি করেছে বসন্ত-বন্দনার, আবার অনেকে স্বাগত জানিয়েছে ঋতুরাজ বসন্তকে।
বসন্ত বরণে বাঙালিরা নিজের দিক থেকে কোনো কমতি রাখে না। নাচে-গানে নিজেদের মাতিয়ে রাখে। বাড়ির ছোট সদস্যদেরও রঙিন সাজে সাজিয়ে তোলে, আর তাদের রাঙানো সাজই বলে দেয় যে, বসন্ত এসে গেছে।
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতের পরে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তুলতে আসে বসন্ত। বসন্তের শেষেই আসে নতুন বছর, সবার জীবনের সব জরাজীর্ণতা দূর করে নতুন দিনে, নতুন সাজে সবার মাঝে।