Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী আজও এত নাজুক কেন

নারীদের নিয়ে বলতে গেলে প্রসঙ্গের শেষ হয় না! কোনদিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখা যাবে যে, নারীরা একটু স্বস্তিতে? কোথায় নারীর নিরাপত্তা? কোথায় মিলেছে নারীর আশ্রয়? নারী কি শুধু জীবন উৎসর্গ করতেই পৃথিবীতে এসেছে? অন্যায়-অবিচারে সর্বদা চুপটি করে সব সয়ে যাবে?

নারীর প্রতি অত্যাচার হলে নিজের পরিবারও তার পাশে থাকে না! কিন্তু যখন অত্যাচারের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে নারীর মৃত্যু ঘটে, তখন পরিবার-পরিজনের দরদের সীমা থাকে না! এই দরদ, ভালোবাসা কি ভুক্তভোগী নারীর প্রতি আগে দেখাতে পারতো না পরিবারটি? না কি ঝুটঝামেলাহীন মৃত শরীর নিয়ে কবর দিলে বা দাহ করার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় বলেই তখন এত ভালোবাসা জেগে ওঠে? হত্যা, আত্মহত্যার জন্য কি শুধুই অভিযুক্তরাই দায়ী থাকে সর্বদা! নাকি পরিবার, সমাজও এর নেপথ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে?

নারীদের জীবনকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মাঝে ঠেলে দিতে একমাত্র এবং প্রথম ভূমিকা পরিবারের। কারণ যেই নারীরা এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা কিন্তু হঠাৎ করেই এমন হত্যা বা আত্মহত্যার শিকার না! দীর্ঘদিনের মানসিক, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরই এমন ঘটনাগুলো ঘটছে। পূর্বের সব ঘটনা বিশ্লেষণ করলে মূলত এমন তথ্যই উঠে আসছে। এবং পরিবার, সমাজের মানুষেরা একবাক্যে স্বীকারও করে নিচ্ছেন দীর্ঘদিনের দাম্পত্য কলহ ছিল। হত্যা বা আত্মহত্যার পূর্বে সেবিষয়ে পরিবার, প্রতিবেশী প্রায় সবাই অবগত ছিল। কিন্তু তবুও নারীটিকে গছিয়ে দেওয়া হয় সেই স্বামীর ঘরে। এক্ষেত্রে গ্রাম্য শালিশ, পিতামাতার নির্দেশ- অনুরোধ, এমনকি নারীর সহ্য ক্ষমতা সবমিলিয়ে সংসারে বহাল তবিয়তে থাকেন। কিন্তু প্রতিনিয়তই কলহের কমতি ছিল না। সেটাও স্বীকার্য! তবে কি আজও নারীরা এতটাই নাজুক?

‘স্বামীর একাধিক বিয়ে বিরোধের জেরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা’ এমন একটি ঘটনা ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনীতে। প্রতিবেশী, পরিবার-পরিজনদের স্বীকারোক্তিতে গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, এটি ভুক্তভোগী নারীর ২য় বিয়ে এবং অভিযুক্ত স্বামীর ৩য় বিয়ে। বিয়ের পর থেকেই প্রতিনয়তই তাদের দাম্পত্য কলহ চলত। এবং তাদের দাম্পত্য কলহের বিষয়টি মেয়ের পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই-ই অবগত ছিল।

নারীরা এত নাজুক না হোক। নিজের জীবনের মূল্যায়ন করতে শিখুক। পথে চলতে গেলে কাঁটা পায়ে ফুটতেই পারে কিন্তু যথাসময়ে কাঁটা তুলে না ফেললে তা থেকে সারা শরীরে পচন ধরা স্বাভাবিক।

এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নারীর পরিবার বিষয়টি সম্পর্কে জানলেও পূর্বেই তারা কোন আইনী সহোযোগিতাও গ্রহণ করেনি! এটাই নয় এছাড়া হলিক্রসের ছাত্রীর আত্মহত্যা, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর হত্যা প্রভৃতি ঘটনা! এমন ঘটনা শুধু যে এগুলোই এমন নয়। বরং প্রতিনিয়ত এরূপ নানারকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে হত্যা, আত্মহত্যা হচ্ছে! তবে কেন সচেতন হচ্ছেন না নারীরা, পরিবার- সমাজ?

পরিবার ও সমাজের মানসিকতা দূর করা না গেলে কিছুতেই নারীদের মুক্তি ঘটবে না। যতদিন বিয়েই নারীর একমাত্র পরিচয় হয়ে থাকবে পরিবার এবং সমাজের চোখে ততদিন নারীরা নিপীড়নের শিকার হবে। কারণ একা নারী কখনও জীবনযাপন করতে পারে না। ফলে কারো না কারো সঙ্গে নারীকে জীবন পার করতেই হবে বিধায় সহ্য করেই যে থাকতে হবে এ বিষয়ে নারীরা সন্দেহহীন থাকে। তাই যাই ঘটুক না কেন, পরিবার এবং সামজের মুখ রক্ষার্থে জীবন উৎসর্গ করে। মৃত্যুর ওপর তো কিছুই নেই কিন্তু বেঁচে থাকলে পরিবার, সমাজের গঞ্জনা কে সইবে? এই চিন্তাধারা থেকে নারীরা সব সমস্যা মুখ বুজে সহ্য করে।

নারীর অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা দূর করা না গেলে নারীরা এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে মুক্তি মেলা ভার। যদি নারীরা স্বাবলম্বী হন তবে নিজের দুমুঠো খাওয়া, মাথা গোঁজার জন্য অপরের ওপর নির্ভরশীল না। আর এর ফলস্বরূপ নারীর প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা সহজ হয়ে পড়ে। ফলে পরিবার-পরিজন – সমাজ বদলানোর আগে নারীকেই পরিবর্তন হতে হবে। স্বাবলম্বী হতে হবে।

নারীরা এত নাজুক না হোক। নিজের জীবনের মূল্যায়ন করতে শিখুক। পথে চলতে গেলে কাঁটা পায়ে ফুটতেই পারে কিন্তু যথাসময়ে কাঁটা তুলে না ফেললে তা থেকে সারা শরীরে পচন ধরা স্বাভাবিক। ফলে জীবনকে সুস্থ, সুন্দর, আনন্দপূর্ণ করে তুলতে হলে নারীদের নিজের জীবনকে গুরুত্ব দিতে হবে। সচেতন হতে হবে নিজের প্রতি। কলুষতা মুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে তাই নারীদের জাগতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ