Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্যাতিত নারীদের আশ্রয়স্থল যে গ্রাম

যুগে যুগে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নানা অন্যায়-অত্যাচারের যাঁতাকলে পড়ে নারীরা মুখ লুকিয়েছে ঘরের কোণে। কেউ কেউ একটু আশ্রয়ের অভাবে চিরবিদায় দিয়েছেন পৃথিবীকে। কিন্তু সব নারীরা নিজেদের দুর্বল ভেবে ঘরের কোণে মুখ লুকোয়নি কিংবা আত্মহননের পথও বেছে নেয়নি। বরং নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে গড়েছেন নিজেদের রাজত্ব।

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির কাছাকাছি একটি গ্রাম উমোজা। আর পাঁচটি গ্রামের থেকে বেশ আলাদা বৈশিষ্ট্যের এই গ্রাম। এই গ্রামটিতে নেই কোনো পুরুষ সদস্যের বসবাস। এই গ্রামটি গড়ে উঠেছিল নির্যাতিত কিছু নারীদের হাত ধরে। আর সেই ধারাবাহিকতায় বহু নির্যাতিত নারীর আশ্রয়স্থল হয়েছে পুরুষ-বিহীন এই গ্রামটি।

শুরুটা হয়েছিল ১৯৯০ সালের দিকে। সে সময় প্রায় ১৪০০ সাম্বুরু নারী ব্রিটিশ সৈন্য দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। ভিক্টিম ব্লেমিং করা আমাদের সমাজের বহু পুরনো একটি প্রথা বলা চলে। তাই সেই সময়টাতেও ধর্ষণের শিকার নারীদের দিকেই আঙুল তোলা হচ্ছিল। ধর্ষণের শিকার নারীদের তাদের পরিবারের লোকেরা ঘরে ঢুকতে দেননি। বাধ্য হয়ে আশ্রয় খুঁজতে থাকেন এ-সব নারী। সব ধর্ষিতা নারী মিলে তৈরি করেন এক গ্রাম।

গোড়ার দিকে মাত্র ১৮ জন সাম্বুরু নারী নিয়ে এই গ্রামটির যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে গ্রামে বসবাসরত নারীদের সংখ্যা বেশ অনেকটা বেড়েছে। যেকোনো নির্যাতিত নারীদের আবাসস্থল এই গ্রাম। তবে গ্রামের সব নারীই সাম্বুরু সম্প্রদায়ের। যে-সব নারী নির্যাতনের শিকার হন কিংবা আশ্রয়ের অভাবে ভোগেন উমোজা তাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে দুবার ভাবে না। অনেক গর্ভবতী নারীরাও এখানে বাস করেন।

উমোজা গ্রামের নারীরা পুঁতি দিয়ে বিভিন্ন গয়না তৈরি করে থাকে। যেগুলো তারা পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে সংসার চালান। এ-ছাড়া এই গ্রামের নারীরা কৃষিকাজ, পশুপালন করে থাকে। সব ধরনের কাজ নারীরা নিজরাই সামলে থাকে। শুরু থেকেই উমোজার নারীরা, তাদের গ্রামে পুরুষদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তবে বর্তমানে পুরুষদের উমোজা গ্রাম দেখার অনুমতি থাকলেও রাতে থাকার অনুমতি নেই।

গ্রামের নিরাপত্তা বজায় রাখা থেকে শুরু করে উন্নয়নমূলক যেকোনো কাজ, বিচক্ষণতার সাথে পালন করে যাচ্ছে গ্রামটির নারীরা। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেকোনো কাজ করে তারা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিনিয়ত বুঝিয়ে যাচ্ছেন একা নারীরাও পারে শত বাধা ভেঙে এগোতে।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ