Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাপের পাঁচালি!

সাপকে ভয় পায় না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সাপের নাম শুনলেই অনেকের আবার গা শিরশির করে উঠে। একটি বিষয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নেই যে, সাপ পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত এবং ভয়ংকর প্রানীদের মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীতে প্রায় ৬শ’রও বেশি প্রজাতির বিষাক্ত সাপ রয়েছে।

সাপ ‘Reptilia’ শ্রেণীর ‘Serpentes’ বর্গের অন্তর্ভুক্ত লম্বা বেলনাকার পা-হীন প্রাণী। এদের দেহ আশ দ্বারা আবৃত, দেহে স্কন্ধবেষ্টনী ও উপাঙ্গ নেই। সাপ মাটিতে, মাটির নিচে গর্তে বা সুড়ঙ্গে, গাছে ও পানিতে থাকতে পারে। প্রায় সব সাপ সাঁতার কাটতে পারে। বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে ৮০টি প্রজাতির সাপ রয়েছে। বাংলাদেশে ২৩ ধরনের সামুদ্রিক সাপ রয়েছে। বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য কিছু বিষধর সাপ রয়েছে। সেগুলো হলো-

‘ক্রেইট, কেউটে বা শঙ্খিনী’ এই সাপকে শঙ্খিনী এবং শাঁকিনী সাপ নামেও ডাকা হয়। বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে দেখা যায় একে। পৃথিবীতে ক্রেইট বা শঙ্খিনী জাতের সাপের মোট ৮টি প্রজাতি আছে, তার মধ্যে ৫টি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এই ক্রেইট জাতের সাপকে স্থানীয়ভাবে কেউটেও বলা হয়। এ সাপ বাড়ির আশপাশে বা লাকড়ির মধ্যে শুকনো জায়গায় থাকে।

‘নায়া নায়া’ কোবরা বা গোখরা প্রজাতির সাপ। দেশের পশ্চিম অংশেই প্রধানত এ সাপের বসবাস। এই প্রজাতির সাপ ফণা তোলে এবং এর ফণায় চশমার মত দুইটি বলয় থাকে। এটি মূলত স্থলভূমির সাপ।

‘কিং কোবরা বা শঙ্খচূড়’ রাজ গোখরা এবং পদ্ম গোখরা নামে ও এটি বেশ পরিচিত। ভয়াবহ বিষধর এই শঙ্খচূড় অন্য গোখরার তুলনায় আকার আকৃতিতে বেশ লম্বা। এই সাপের ফণা আছে তবে ফণায় অন্য গোখরার মতো চশমার মত বলয় থাকে না। শঙ্খচূড় বাংলাদেশ, ভুটান, বার্মা, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এসব দেশে বেশি দেখা যায়। এই সাপ ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকায় থাকতে পছন্দ করে।

‘নায়া কাউচিয়া’ স্থানীয়ভাবে একে জাতি সাপ বা জাত সাপও বলা হলেও এটিও গোখরা প্রজাতির সাপ। এই সাপটিকে জউরা নামেও ডাকা হয়। এ সাপ ফণা তোলে। এটি সিলেট, নোয়াখালী এলাকায় বেশি থাকে। বাংলাদেশে যত সাপ দংশনের ঘটনা ঘটে, এর কামড়ে ঘটে সবচেয়ে বেশি।

‘কালো নাইজার’ হলো শঙ্খিনী জাতের সাপ। বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্যায় রয়েছে । চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল, সুন্দরবন এবং নোয়াখালী অঞ্চলে দেখা যায় বেশি।

‘চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার’ চন্দ্রবোড়ার আরেক নাম উলুবোড়া। বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায়, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বিষাক্ত। এই সাপটি প্রায় একশো বছর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, অর্থাৎ পরপর কয়েক দশকে এর একটি সাপেরও দেখা মেলেনি। কিন্তু গত ১০/১২ বছর আগে থেকে আবার এই সাপে দংশনের প্রমাণ দেখা যায়।

‘সবুজ বোড়া’ সবুজ বোড়া বা গ্রিন ভাইপার সাপ যাকে স্থানীয়ভাবে গাল টাউয়া সাপও বলা হয়ে থাকে। এই সাপের মাথার অংশ বেশ মোটা বলে এই নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশে এই জাতের মোট ছয়টি প্রজাতি দেখা যায়। সাপটি পাহাড়ি এলাকার জঙ্গলে থাকে। সুন্দরবনে ও এই সাপ কে দেখা যায়।

সাপের বিষ হল এক ধরনের লালা জাতীয় পদার্থ। এর উপাদান হল প্রোটিন ও এনজাইম। এই এনজাইম মানুষের শরীরে থাকা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও লোহিত কণিকাকে ভেঙে ফেলে। এর প্রভাবে রক্তচাপ কমে যায় ফলে পেশির থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। এছাড়াও সাপের বিষে থাকে নিউরোটক্সিন ও জিংক সালফাইড। এর মধ্যে নিউরোটক্সিন অত্যন্ত বিষাক্ত। তবে অনেক সময় সাপের বিষ মানুষের উপকারে আসে, যা বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সাপ একটি নিরীহ প্রাণী।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ