আপনার কি শ্বাসকষ্ট আছে
সুস্থ শরীর নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হলেও অনেক সময়ই সামান্য জিনিসে শরীর খারাপ করে। যেমন ধরা যাক ধুলো-বালি। আজকাল একটু ধুলোবালি নাকে গেলেই সবারই সমস্যা হয়। শুরু হয় হাঁচি-কাশি। আর কারও যদি শ্বাসকষ্ট থাকে, তাহলে তো কথাই নাই। শ্বাস নিতে না পারা, শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া, রেসপিরাটরি ডিসট্রেস নামেও পরিচিত।
মানবদেহে সবারই কমবেশি শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। শ্বাসকষ্ট বলতে মূলত নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়াকে বোঝানো হয়। শ্বাসকষ্ট নানা কারণে হতে পারে। সর্দি লাগলে অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। হাঁপানি বা অ্যালার্জি থাকলে। শীতের সময় শিশুদের যাদের অ্যাডনয়েড সমস্যা থাকে তাদের শ্বাসকষ্ট হয়। অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে বা সাইনোসাইটিস, হার্ট ফেইলিওর, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগ দেখা দিলেও শ্বাসকষ্ট হয়। ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)। এছাড়া, নানা কারণে শ্বাসকষ্টের অনুভূতি হতে পারে। জ্বরসহ বেশ কিছু শারীরিক রোগেও শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর দহন বা মেটাবলিজম বেড়ে যাওয়ার জন্য নিশ্বাসের হার বেড়ে যায়।
ঘুমানোর জন্য বিছানায় শোয়ার পর কিছু ব্যক্তির শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। নাকের সমস্যা ও অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে এমন হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে করণীয় হলো
কারও হাঁপানি থাকলে হাঁপানির চিকিৎসা করাতে হবে। ধূমপান পরিহার করতে হবে। পরোক্ষ ধূমপানেও শ্বাসকষ্টের জন্য ক্ষতিকর। অ্যালার্জি থাকলে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে এমন বস্তু (যেমন, ধুলাবালি) ও খাবার (যেমন, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, বাদাম ইত্যাদি) এড়িয়ে চলতে হবে।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ঘর গোছানোর সময় বা বাইরে গেলে মাস্ক পরে বের হতে হবে। এছাড়া বেশি পশমওয়ালা পালিত পশু রাখা যাবে না ঘরে। ঘরবাড়ি সব সময় পরিষ্কার ও ধুলামুক্ত রাখতে হবে। পুরনো ধুলাবালি ঘরে থাকলে পরিষ্কার রাখতে হবে। যাদের অ্যাডনয়েড সমস্যা আছে তাদের এক ধরণের নাসাল স্প্রে আছে যা ব্যবহার করলে সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও কিছু খাবারের মাধ্যমেও শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এগুলো হলো-
মধু
অ্যাজমার চিকিৎসায় মধুর ব্যবহার বহুকাল ধরে হয়ে আসছে। এক গ্লাস করে গরম জলে এক চামচ করে মধু মিশিয়ে দিনে তিনবার করে পান করলে দারুণ উপকার পাবেন।
আদা
গবেষণায় দেখা গেছে আদায় থাকা বেশ কিছু উপকারী উপাদান শ্বাসনালীর প্রদাহ কমায়। এর ফলে শ্বাসনালীতে অক্সিজেনের প্রবেশ ঠিকমতো ঘটে। তখন স্বাভাবিকভাবেই শ্বাসকষ্ট কমতে শুরু করে।
কফি
অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে কফি দারুণ উপকারী হচ্ছে কফি। গরম গরম এক পেয়ালা কফি খেলে শ্বাসনালী খুলে যায়। ফলে অক্সিজেন খুব সহজেই ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। কফি যত কড়া হবে, তত উপকার পাবেন। তবে দিনে ৩ কাপের বেশি কফি কিন্তু ভুলেও খাবেন না। কারণ এই পানীয়টি যতটা উপকারী, বেশি মাত্রায় খেলে কিন্তু ততটাই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
সরিষার তেল
শ্বাসকষ্ট কমাতে আরেকটি দারুণ উপকারী উপাদান হচ্ছে সরিষার। শ্বাসকষ্ট হলেই অল্প করে সরষের তেল গরম করে বুকে-পিঠে ভাল করে মালিশ করতে থাকবেন। এই তেলটি রেসপিরেটারি প্যাসেজকে খুলে দেয়। ফলে শ্বাসকষ্ট ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
পেঁয়াজ
এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
রসুন
হাফ কাপ দুধে পরিমাণ মতো রসুন ফেলে ভাল করে দুধটা ফুটিয়ে নিন। এরপর কিছুটা ঠাণ্ডা করে খেয়ে ফেলুন।খাওয়ার পর দেখবেন শ্বাসকষ্ট কমতে শুরু করেছে।
শ্বাসকষ্ট থেকে একেবারে মুক্তি পাওয়া না গেলেও উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে শ্বাসকষ্ট এড়িয়ে চলা সম্ভব।
অনন্যা/এসএএস