রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিতে ঘিরে থাকা কারওয়ার
কারওয়ার একটি ছোট শহর। দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে ঘুরতে গেলে কারওয়ারে ঘুরে আসতে হবেই। সমুদ্রের পাড়ে বেড়ে ওঠা এই শহরের মানুষের জীবন-যাপন একেবারেই সহজ সরল। তবে জায়গাটি একেবারেই লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গেছে। তবুও নেক বাঙালীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু কারওয়ার শহর। কেন? কারণ এখানেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সৈকত আছে। বিশ্বকবির সম্মানে এখানকার সৈকতের নাম রাখা হয়েছে। বিষয়টি বাঙালীদের জন্যে সত্যিই গর্বের। সংস্কৃতি, আচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষিণ ভারতের সাথে বাঙালী জীবনের রয়েছে বিস্তর ফারাক। তবুও কেন বিশ্বকবির নাম এখানে? সেটা জানতে হলে তো ঘুরে আসতেই হয়!
দক্ষিণ ভারতের এক সমুদ্র সৈকতের নাম বাঙালী এক কবির নামে। সেজন্যেই বহু মানুষ প্রতিবছর এখানে ঘুরতে আসেন। কিন্তু কেন? সেকথা আগে জেনে নেয়া যাক। ১৮৮২ সালে রবিঠাকুরের অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নিরিবিলি শহরে জেলা জজের দায়িত্বে পালন করতে আসেন। বড় ভাইয়ের সাথে তরুণ কবিও এসেছিলেন। আরব সাগরের পাড়ে এমন শান্তি আর কোলাহলমুক্ত পরিবেশ কবির মনে ছাপ ফেলেছিলো। আর এখানে থেকেই লিখে ফেললেন এক চমৎকার নাটক – "প্রকৃতির প্রতিশোধ।" কারওয়ার তার লেখায় কতটা প্রভাব রেখেছিলো তা কবিগুরু অকপটেই স্বীকার করেছেন বহুবার। নিজের সাহিত্যজীবনের গঠনে কারওয়ারের অবদান তিনি কখনই ভুলতে পারেন নি।
গীতিনাট্য প্রকাশের পর থেকেই কারওয়ার সৈকতের নাম পালটে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিচ। তবে শুধু নামের দিকেই নজর ফেরালে হবেনা। রবীন্দ্রনাথের নামের প্রতি সুবিচার করতেই যেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যুদ্ধজাহাজের আদলে গড়া এক যাদুঘর। এটিই ভারতের অল্প কয়েকটি বিখ্যাত যুদ্ধজাহাজ যাদুঘরের একটি। তবে রবীন্দ্রনাথ বিচ ঘুরলেই তো হবেনা। কারওয়ারে আছে দেবভাগ ও মাজালি বিচ।
এই শহরে আরেকটি সুন্দর দৃশ্য কালী নদী। শহরে এসে গিয়ে পড়েছে সমুদ্রে। সমুদ্রের খুব ধারেই নদীর উপর নির্মাণ করা হয়েছে কালী ব্রিজ। এই ব্রিজ গোয়া এবং কর্ণাটককে একসাথে সংযুক্ত করেছে। ব্রিজের সৌন্দর্য কিছুক্ষণ উপভোগ করেই এগিয়ে যাবেন অপরপ্রান্তে। সেখানে দেখবেন ভুতুড়ে অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাদাসিবগার দুর্গ। রাজা বাসাবা লিঙ্গা ১৭১৫ সালে এই চমৎকার দূর্গটি নির্মাণ করেন। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে মালিকানাও বদলে গেছে বহুবার।
কারওয়ারে আছে আরো কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ। মাদ্দিলিঙ্গার, আণজা দেব, দেবগৌড় নামে কিছু দ্বীপ আছে যেগুলো ঘুরে আসতে পারেন। বিশেষত দেবজ্ঞাড়ে গেলে ব্রিটিশ আমলের পাঁচতলা বাতিঘরটি দেখতে ভুলবেন না অবশ্যই। অপরদিকে আঞ্জা দেব দ্বীপটি ১৯৬১ সালের দিকেও পর্তুগীজদের শাসনাধীন ছিলো। তবে এখন অবস্থা বদলে গেছে। ভারতীয় নৌবাহিনী এই দ্বীপটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তাই সেখানে ঘুরতে গেলে বিভিন্ন অনুমতি বা নিয়ম মেনেই যেতে হবে। একবার ব্যবস্থা করতে পারলে ভ্রমণটুকু আনন্দের হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সমুদ্রসৈকতের আনন্দ তো আর শুধু বালি আর সমুদ্রের নীল জলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনা। এখানকার সৈকতেই প্যারাসেইলিং, কায়াকিং, স্নোকয়েলিং ছাড়াও আরো বেশকিছু ওয়াটার অ্যাক্টিভিটির সুযোগ আছে। একইসাথে পরিচ্ছন্ন সৈকতটি সহজেই আপনার মন ভালো করে দিবে।
মনে রাখতে হবে। কারওয়ার মূলত একটি বন্দর নগরী। বন্দরের জীবনযাত্রা ছাড়াও এখানের রেলযাত্রা পর্যটকদের একটি প্রধান আকর্ষণ হিসেবে কাজ করে। একবার ভেবেই দেখুন – দুই পাশে পাহাড় আর মাঝ দিয়ে ছুটে চলেছে ট্রেন। এমন রোমাঞ্চকর এবং শান্ত অভিজ্ঞতা কি খুব সহজে পাওয়া যায়? তাছাড়া ভ্রমণের ফাঁকে হরেক পদের সামুদ্রিক মাছ ও স্থানীয় খাবার খাওয়ার সুযোগ তো আছেই। ভারতীয় খাবারের বৈচিত্র্য এবং সারাদিনের সৈকত নিয়ে ব্যস্ততা আপনায় ভুলিয়ে রাখবে কিছুদিনের জন্যেই।
যদি এবার ছুটিতে যাওয়ার ইচ্ছে হয়, ঘুরেই আসুন না দক্ষিণ ভারতে। বেঙ্গালুরু থেকে রেল বা বাসে করে কারওয়ারে যাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। অথবা বিমানে চড়ে সরাসরি গোয়া চলে যাবেন। সেখান থেকে কারওয়ারে বাসে দ্রুত পৌঁছানো যাবে।