ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণে হতে হবে সাবধান
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল এখন উত্তাল। তারপরও জোয়ার-ভাটার পরোয়া না করে, সমুদ্র সৈকতে বিধিনিষেধ না মেনে সাগরে নামার কারণে সৈকত কেন্দ্রিক ভ্রমণে আসা পর্যটক সহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের প্রাণহানি যেন কোনও ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহে সৈকতে নেমে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এর আগে গত ২৬ জুন ও ৮ সেপ্টেম্বর সৈকতে নেমে গুপ্ত খালে আটকা পড়ে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এনিয়ে ৫ বছরে ২০ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে, একই সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫৪ জনকে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই কিশোর কিশোরী।
সমুদ্র সৈকতের তিনটি পয়েন্ট কলাতলী, লাবনী ও সুগন্ধায় পর্যটকের ভিড় বেশি থাকে। সাঁতার জানা না থাকার পরেও সৈকতের পানিতে নেমে হাঁটু পানির সীমা অতিক্রম করে গভীরে যাওয়া, সৈকতে লাগানো লাল এবং লাল-হলুদ পতাকার সংকেত না বোঝা এরকম দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। এসব দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করে গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে এক ক্যাম্পেইনে দুর্ঘটনা রোধে সৈকতে নামার আগে লাইফ জ্যাকেট পরা ও নতুন ১০ নির্দেশনা দিয়েছে সাথে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ. মামুনুর রশীদ।
সমুদ্রে নামার আগে ১০ সতর্কতা: সাঁতার না জানলে সমুদ্রের পানিতে নামার সময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন, লাল পতাকায় চিহ্নিত করা পয়েন্টে কোনভাবেই নামা যাবেনা, সৈকতে এলাকায় সর্বদা লাইভ গার্ডের নির্দেশনা মানতে হবে, বিকেল পাঁচটার পর সমুদ্রের নামা যাবে না, সমুদ্রে নামার আগে জোয়ার-ভাটা সহ আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থান জেনে নিতে হবে, সমুদ্রে যেকোনো মুহূর্তে তীব্র স্রোত ও গুপ্ত গর্ত সৃষ্টি হতে পারে, যেকোনো ভাসমান বস্তুর নিয়ে পানিতে নামার আগে বাতাসের গতি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে, শিশুদের সৈকতে সব সময় সঙ্গে রাখুন, তাদের একা সমুদ্রে নামতে দেবেন না ও অসুস্থ অথবা দুর্বল শরীর নিয়ে সমুদ্রে হাঁটু পানির বেশি নামবেন না।
এছাড়া সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট গুপ্ত গর্ত ও গণস্রোত সংবলিত এলাকায় চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসক। তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল। এ সময় সমুদ্রে নামা খুবই বিপদজনক। তারপরও ভ্রমণে আসা কিছু লোক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছে এবং ঝুঁকি নিয়ে সাগরে ঝাঁপ দিয়ে বিপদে পড়ছেন এটা খুবই দুঃখজনক এবং কষ্টদায়ক। আনন্দ করতে এসে অসতর্কতায় একটি গোসল কিংবা দুর্ঘটনা একই পরিবারের জন্য সারা জীবনের কান্না, এটাকে কেউ অনুধাবন করতে চায়না।
বৃষ্টিপাত কিংবা বৈরী পরিবেশে সৈকতে কয়েকটি পয়েন্টে একাধিক চোরাবালি গর্ত কিংবা গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়। এসব পয়েন্ট এর আশেপাশের সৈকতে নামতে নিষেধ করে বালুচরে লাল নিশান ওড়ানো হয়। কিন্তু এসব তোয়াক্কা না করে পর্যটকদের কেউ কেউ নেমে বিপদে পড়েন। গুপ্তখাল কিংবা চোরাবালিতে আটকে পড়লে মুহূর্তে তাদের উদ্ধার করে আনা বেশ কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তাই যেসব পর্যটকরা এগুলো নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সৈকতের নামবেন তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।