কেবল নারীরাই কি ‘গোল্ড ডিগার’ হয়?
‘গোল্ড ডিগার’ মানে এমন কেউ, যার একটি সম্পর্ক কেবল অর্থের ভিত্তিতে চলমান। আরেকটু সহজ করে বললে, একটি প্রণয়ের সম্পর্কে থেকে সঙ্গীর কাছ থেকে কেবল টাকা-পয়সা পাওয়ার জন্য সম্পর্কটা সচল রাখা।
গোল্ড ডিগার শব্দের সাথে অবশ্য এত ভেঙে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। এই ইন্টারনেটের জগতে এই শব্দটি কমবেশি সকলেই শুনেছেন। ইন্টারনেটে কয়েকদিন পর পর এমন কিছু কন্টেন্ট ভেসে আসে যেখানে একে অন্যকে ‘এক্সপোজ’ করতে দেখা যায়। অমুক তার প্রেমিক বা প্রেমিকার ‘চিটিং’ এর কাহিনী ফাঁস করছে; কিংবা তমুক ব্যক্তি কোনো একটা অপরাধ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে ইত্যাদি।
‘গোল্ড ডিগার’ শব্দটা একটা উভলিঙ্গবাচক শব্দ হলেও লোকে একে কেবল নারীবাচক শব্দ হিসেবেই দেখে। এই শব্দটা বললেই যেন চোখে ভেসে উঠে একজন স্বার্থান্বেষী নারী ছবি।
একজন গোল্ড ডিগারকে গোল্ড ডিগার বানায় কে?
মানুষ হয়তো কাউকে দোষারোপ করার সময় তেমন কিছু ভাবতে চায় না। দোষী মানে দোষী। অপরাধী মানে অপরাধী। কিন্তু এই সমাজে অপরাধীরা অপরাধী কেন হয়ে ওঠে সেটা নিয়ে ভাবার মত অবকাশ অবকাশ কারোর হয়ে ওঠে না।
এই সমাজে একজন পুরুষ সকল আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত। উপার্জনশীল ব্যক্তিটি যদি পুরুষ হয় তাহলে একজন নারীর পা থেকে মাথার একেকটা চুলের দায়িত্বও হয় স্বাভাবিক ভাবে সেই পুরুষেরই। তার মানে সমাজ স্বীকৃতি তো দিলোই যে, নারী তার সকল আবদার ও চাওয়া-পাওয়া পুরুষের কাছ থেকেই গ্রহণ করবে। পুরুষ সকল আয়ের উৎস— এই ধারণা সমাজ বহাল করে রাখার জন্য গোল্ড ডিগার উৎপাদন হয়। এই ধারণার জন্যই গোল্ড ডিগিং কনসেপ্ট-এর ধারাবাহিকতা এখনো আছে এবং তা একপাক্ষিকভাবে নারীর দিকে আঙুল তোলে।
গোল্ড ডিগার কি শুধু মেয়েরাই হয়?
সবাই মানুষ-ই অর্থের কাঙাল। দিনরাত যে পুরুষটি কাজ করে চলেছে, সে কি স্বপ্ন দেখেনা একদিন সে অনেক বিত্তের মালিক হবে? একইভাবে একজন নারীও তা ভাবতে পারে। তবে তার মানে মোটেও এই নয় যে নারীটিকে সেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করা পুরুষের আয়ের উপর নিজের ভাগ বসানোর চিন্তা করতে হবে। প্রতিটি মানুষকেই নিজেকে বিকাশ করার কথা ভাবতে হবে। অথচ নারীদের চিন্তাভাবনা ওখানেই শিথিল হয়ে যায় যে, আমি আমার জীবনে কিছু না করলেও চলবে। আমার চাহিদার যোগান দেয়ার মানুষ তো আছেই।কিন্তু এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের এই কথাটি ভাবার সুযোগ নেই। তার উপার্জন তাকেই করতে হবে। নয়তো আর কেউ করে দেবে না। তাই সে নিজেই নিজের অর্থের যোগান দেয়। তাই অর্থের সম্ভাবনা যেখানে আছে সে সেদিকেই ধাবিত হয়। তাই সবাই যেহেতু অর্থ উপার্জনের দিকে ছোটে তাহলে নিশ্চই কেবল নারীকেই গোল্ড ডিগার শব্দটি বলা যায় না। গোল্ড ডিগার সবাই। সবাই মাটি খুড়ে স্বর্ণ উত্তোলনের পায়তারায় থাকে।
সাম্প্রতিক ঘটনার জেরেই হোক কিংবা সর্বোপরি ঘটনার আলোকে হোক, নারীকে অবমাননা করার সুযোগ পেলে কেউ কখনো হাতছাড়া করতে চায় না। নারী যখন পরকীয়া করে তখন সেই নারী একা সেই সম্পর্কে যুক্ত থাকে না। যুক্ত থাকে একজন পুরুষও। অথচ সমস্ত কটূ কথা বলা হয় নারীকে নিয়ে। একইভাবে একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা থাকার বিষয়টিও তো নতুন নয়। ‘ঘরে প্রতিদিন পোলাও খেলেও মাঝেমাঝে বাইরের ডালভাত খাওয়ার শখ জাগে’ —এমন মতবাদও তো শোনা যায় প্রায়ই। কিন্তু পরকীয়া আর একাধিক প্রেম, এই কাজটির ক্ষেত্রে তো নারী-পুরুষের জন্য আলাদা করে বিবেচনা করার কিছু নেই। যে হীন কাজ করবে, সে একজন মানুষ হিসেবেও মন্দ মানুষ, এবং তা নারী কিংবা পুরুষ পরিচয়ের উর্ধ্বে। এর সাথে নারীবাদের কোনো সম্পর্কই নেই।
আমরা কোনো কিছু নিয়ে কটূক্তি করার আগে নিজেকে শিক্ষিত করার চেষ্টা করা প্রয়োজন। কাউকে নিয়ে মন্তব্য করার আগে পুরো বিষয়কে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। তা না হলে কখনোই কোনো বিষয়ের সুবিচার ও সমাধান করা সম্ভব হবে না।
অনন্যা/এসটিএম