Skip to content

৮ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত যিনি

বর্তমানে যত পেশা রয়েছে সব পেশায় নারীর বিচরণ রয়েছে। দেশ শাসন থেকে শুরু করে ঘর সাজানো সব কাজেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। নারী সাংবাদিকতা করছে বিষয়টি এখনও অনেক জায়গার মানুষ মেনে নিতে পারে না। গ্রামাঞ্চলে এখনও নারীদের বয়স ১৮ বছর হলে বিয়ের ধুম পড়ে যায় সেখানে নারীরা সাংবাদিকতাকে নিজের পেশা হিসেবে নিচ্ছে। এসবই করতে পারছে শুধুমাত্র একজন মহীয়সী নারীর জন্য। মহীয়সী এই নারী হলেন নূরজাহান বেগম। 

দেশের নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত যিনি

বাংলাদেশের নারীদের সাংবাদিকতায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ থেকে সম্পাদনা সবকিছুর যাত্রাই শুরু করেছিল নূরজাহান বেগমের হাত ধরে। তিনি বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। তাঁর সম্পাদিত বেগম পত্রিকা প্রথম সচিত্র নারী সাপ্তাহিক ছিল।

10

 

বেগম পত্রিকায় নারী জাগরণ, নারী অধিকার, নারী স্বাধীনতা সব বিষয়গুলো নূরজাহান বেগম নিজের সম্পাদনায় তুলে এনেছিলেন। নারী প্রগতি, নারী শিক্ষা অর্থাৎ প্রকৃত নারী অর্থেই "বেগম" ছিল অনন্য এক মাধ্যম। যেখানে কুসংস্কার বিলোপের কথা থেকে শুরু করে, গ্রামগঞ্জের নির্যাতিত নারীদের চিত্র, জন্মনিরোধ, পরিবার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের জীবনবোধ থেকে লেখা চিঠিও উঠে এসেছিল।

দেশের নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত যিনি

 

নূরজাহান বেগম সর্বস্তরের ও সর্বমহলের নারীদের কথা তুলে এনেছিলেন তাঁর সম্পাদিত বেগম পত্রিকার মধ্য দিয়ে। এসব লেখা পাঠের মধ্য দিয়ে নারীরা নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সজাগ হয়ে উঠেছিল এবং বাংলাদেশে ধীরে ধীরে নারী স্বাধীনতার পথ বিস্তৃত হয়েছিল। সেইসাথে তাঁকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের নারীদের সাংবাদিকতায় আসার সুযোগ হয়েছিল। 

7

 

নূরজাহান বেগম ১৯৪২ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৪৪ সালে উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ করেন।

দেশের নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত যিনি

 

বেগম পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নূরজাহান বেগমের বাবা নাসিরউদ্দীন। ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই মাসে বিএ তে পড়া অবস্থাতে বেগম পত্রিকা'র প্রকাশনা শুরু হয়। এই সময় বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুফিয়া কামাল। তিনি চার মাস সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। নূরজাহান বেগমের মতো সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল ও লেডি বেবোর্ন কলেজে যারা পড়তেন তারা সবাই বেগম পত্রিকার জন্য কাজ করতেন। নূরজাহান বেগম শুরু থেকেই বেগম পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন। রোকনুজ্জামান খানকে বিয়ে করেন নূরজাহান বেগম। এরপর ১৯৫০ সালে তারা বাংলাদেশে চলে আসেন।

দেশের নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত যিনি

ঢাকায় এসে নারীদের ছবি আঁকতে, লেখার জন্য উৎসাহী দিতেন নূরজাহান বেগম, এতে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ে। বেগম পত্রিকায় যারা লেখা পাঠাত তাদের ছবিও ছাপানো হতো। ১৯৫৪ সালে ঢাকায় বেগম পত্রিকা অফিস পরিদর্শন করেন মার্কিন মহিলা সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী মিসেস আইদা আলসেথ। ১৯৫৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে 'বেগম ক্লাব' প্রতিষ্ঠিত হয় যার প্রেসিডেন্ট হন বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ, সেক্রেটারি হন নূরজাহান বেগম এবং বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন এর অন্যতম উপদেষ্টা। 

দেশের নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত যিনি

নূরজাহান বেগম ১৯৯৬ সালে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠ চক্রের সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার থেকে রোকেয়া পদক, ১৯৯৯ সালে গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি থেকে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট, ২০০২ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরষ্কার, ২০০৩ ও ২০০৫ সালে নারী পক্ষ দুর্বার নেটওয়ার্ক ও কন্যা শিশু দিবস উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা লাভ করেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকেও সংবর্ধনা দিয়েছিলেন তাঁকে। নূরজাহান বেগম ২০১০ সালে পত্রিকা শিল্পে তাঁর অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮ সম্মাননা পান।

দেশের নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত যিনি

২০১৬ সালের ৫ মে নূরজাহান বেগমকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ২৩ মে ২০১৬ তারিখে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

নারী জাগরণ, সাহিত্য ও সৃজনশীলতায় নারীকে উৎসাহী করা ও নতুন লেখক তৈরি করাই নূরজাহান বেগমের মূল লক্ষ্য ছিল। জীবনের পুরোটা তিনি নারীদের নিয়েই কাজ করে গেছেন।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ